অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বে চরম ধনী ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একই সঙ্গে ক্রমাগত বাড়ছে। ১০ বছরে বিশ্বে কোটিপতি ধনীর (বিলিয়নিয়ার) সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে গত দুই বছরে বিশ্বে যত নতুন সম্পদ অর্জিত হয়েছে, এর দুই-তৃতীয়াংশই বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর এক শতাংশ ধনীর পকেটে গেছে। আর অবশিষ্ট ৯৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী পেয়েছে। সোমবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার সঙ্গে মিল রেখে অক্সফামের ‘সারভাইভ্যাল অব দ্য রিচেস্ট’ প্রতিবেদনে এসব বলা হয়। খবর আলজাজিরার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ৪২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদের মধ্যে ২৬ ট্রিলিয়ন (৬৩ শতাংশ) এক শতাংশ ধনীর হাতে এবং ১৬ ট্রিলিয়ন (৩৭ শতাংশ) অবশিষ্ট ৯৯ শতাংশ জনগোষ্ঠীর হাতে উঠেছে। এছাড়া কোটিপতিদের আয় প্রতিদিন গড়ে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে বাড়ছে। অপরদিকে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন শ্রমিক এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বলা হয়, সুইস স্কি রিসোর্টে ধনীরা অবকাশযাপন করলেও সাধারণ মানুষ খাদ্যসামগ্রীর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার নিচের দিকে থাকা ৯৯ শতাংশ মানুষ যা পেয়েছে, এর প্রায় দ্বিগুণ সম্পদ এক শতাংশ ধনী পকেটে ভরেছে। গত দশকে কোটিপতিরা বিশ্বের নতুন সম্পদের অর্ধেক গ্রাস করেছিল। গত ২৫ বছরে বিশ্বে চরম ধনী এবং চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একই সঙ্গে বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য ও জ্বালানি খাতের কোটিপতিরা সবচেয়ে দ্রুত মুনাফা করছেন। ২০২২ সালে তারা তাদের সম্পদ দ্বিগুণ করেছেন। গত বছর ওয়াল্টন ডাইনেস্টি ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ অর্জন করেছে। জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ী ভারতীয় কোটিপতি গৌতম আদানি গত বছর একাই ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করেছেন। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন দেশের ১৭০ কোটি শ্রমিক চরম মুদ্রাস্ফীতির শিকার এবং ৮২ কোটি মানুষ অনাহারে দিন কাটায়। এছাড়া বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটে আছে। কয়েক দশক ধরে ধনী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর হ্রাস করায় অসমতা বিপুল পরিমাণ বেড়েছে। অনেক দেশে গরিবরা ধনীদের তুলনায় বেশি হারে কর দিয়ে থাকে। বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের অর্ধেক এমন দেশে বসবাস করে, যেখানে সরাসরি বংশধরদের কোনো উত্তরাধিকার ট্যাক্স দিতে হয় না।

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়ালা বাউচার বলেন, গত দুই বছরে কোটিপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার অন্যতম উপায় হলো সুপার ধনী ও বড় করপোরেট হাউজের ওপর বেশি বেশি কর আরোপ করা। ৪০ বছর ধরে করছাড় পাওয়ায় সুপার ধনীরা এখন জাহাজ বাদ দিয়ে প্রমোদতরিতে ঘুরে বেড়ান। বিশ্বব্যাংক বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বে অসমতা ও দরিদ্র দ্রুত হারে বাড়ছে।