অনলাইন ডেস্ক : বস্তুটি কি? বোমা নাকি অন্য কিছু। এমন জল্পনা সিলেটে দু’দিন ধরে। পুলিশ ঘিরে রেখেছে ওই বস্তুটি। ভয়ে হাত দিচ্ছে না। বস্তুটি বাঁধা পুলিশ সার্জেন্টের এক মোটরসাইকেলে। আন্দাজ করা যাচ্ছে না- বস্তুটি কী। ধারণা করা হচ্ছে- বস্তুটি হতে পারে বোমা। এ কারণে আতঙ্ক দেখা দেয়।
প্রায় ২০ ঘণ্টা পর জানা গেল বস্তুটি আর কিছু নয়। একটি ‘গ্রাইন্ডিং মেশিন’। লোহা কাটার যন্ত্র। মোটরসাইকেলের পায়ের স্ট্যান্ডের কাছে বাঁধা ছিল। সেনাবাহিনীর ‘বোম ডিসপোজাল’ টিমের সদস্যরা এসে সেই রহস্যের জট খুললেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সিলেটের মানুষ। আতঙ্কময় অবস্থার অবসান হলো। গাড়ির চাকা ঘুরলো সিলেটের ব্যস্ততম চৌহাট্টা পয়েন্টের উপর দিয়ে। সিলেটের চৌহাট্টা পয়েন্ট। নগরীর ব্যস্ততম একটি এলাকা। চৌহাট্টায় রয়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল। সকাল ১০টা থেকে এই পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। রাত ১০টায় শেষ হয় ট্রাফিকের কাজ। কখনো কখনো ট্রাফিকের সিনিয়র কর্মকর্তারা তদারকিতে যান চৌহাট্টা পয়েন্টে। ওই পয়েন্টে ও আশেপাশে এলাকায় ডিউটিতেই ছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট চয়ন। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে সার্জেন্ট চয়ন তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসেন চৌহাট্টাস্থ ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে। ওখানে মোটরসাইকেল রেখে তিনি পাশের একটি দোকানে যান। ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন। এসে তিনি মোটরসাইকেল স্টার্ট দেয়ার সময় একটি বস্তু তার পায়ে লাগে। তিনি তাৎক্ষণিক নেমে যান। এরপর দেখেন তার মোটরসাইকেলে কিছু একটা বাঁধা। রং কিছুটা লালচে। এ কারণে তার সন্দেহ হলে তিনি সঙ্গের পুলিশদের বিষয়টি দেখান। পরে খবর দেয়া হয় সিনিয়র কর্মকর্তাদের। তারা এসে বস্তুটি কী- সেটি উদঘাটন করতে পারেননি। তারা ঘিরে রাখেন ওই বস্তুটি। এরপর থেকে সিলেটে শুরু হয় আতঙ্ক। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সিনিয়র কর্মকর্তারা রাতেই চলে আসেন চৌহাট্টা এলাকায়। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর সিদ্ধান্ত হয় সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিম আসবে। তারা এসে ওই বস্তুটি উদ্ধার করবে। মধ্যরাতের পর পুলিশ পাহারায় রাখা হয় বস্তুটি। এর মধ্যে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয় চৌহাট্টা দিয়ে। রাতভর এভাবেই কাটে সিলেটবাসীর। সবার মধ্যে জল্পনা- বস্তুটি কী। প্রবাস থেকেও সিলেটের চৌহাট্টায় চোখ রাখছিলেন প্রবাসীরা। এদিকে- বোমাসদৃশ বস্তু পাওয়ার খবরে সিলেটের চৌহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাৎক্ষণিক দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। পার্শ্ববর্তী জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, রিকাবীবাজারসহ পুরো এলাকায়ও আতঙ্ক দেখা দেয়। নগরেও যানবাহন চলাচল কমে আসে। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হননি। সকাল হতেই আবারো আতঙ্ক দেখা দেয়। চৌহাট্টা এলাকায় সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও বেলা ১১টার পর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। দুপুরের পর বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোম ডিসপোজাল ইউনিট। এ সময় সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সেনা টিমকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করেন। প্রথমে সেনা টিমের সদস্যরা বিষয়টি পরখ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা গিয়ে মোটরসাইকেল থেকে বস্তুটি বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর সেটি একটি বালতির মধ্যে চুবিয়ে রাখেন। আধা ঘণ্টা পর জানা গেল বস্তুটি আসলে বোমা নয়। লোহা কাটার একটি ‘গ্রাইন্ডিং মেশিন’। পুলিশ সদস্যদের ডেকে নিয়ে বোমা বাহিনীর সদস্যরা সেটি পুলিশের হাতে তুলে দেন। এদিকে- বস্তুটি উদ্ধারের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্য লে. কর্নেল রাহাত। তিনি জানান, ‘এটা আসলেই একটি গ্রাইন্ডিং মেশিন। হয়তো বা ভুলবশত অথবা হতে পারে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পুলিশের গাড়িতে রেখে দিতে পারে। উদ্ধারের পর আমরা এটাকে সেইফ ডিক্লেয়ার করেছি। এরপর সেটি পুলিশ কর্মকর্তাদের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।’ উপস্থিত থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, ‘কেউ এটি ভুলবশত কিংবা আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য রাখতে পারে বলে মনে হয়। সেটি কীভাবে মোটরসাইকেলে এলো- বিষয়টির তদন্ত করছি। তদন্তের পর আমরা নিশ্চিত হবো কীভাবে সেটি মোটরসাইকেলে এলো।’