বিদ্যুত সরকার : চিম্বুক পাহাড়ের গল্প
বড় বেশি অভিমানী হয়ে উঠছো আজকাল। কপালে কাঁচ টিপ, হাতে জল চুড়ি। দু-হাত দিয়ে তুমি জানালার শীতল শিক ধরে তাকিয়ে দেখতে দূরে সবুজ চিম্বুক পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছুটে যাওয়া সুবর্ণ রেখার মতোন এক নদীর ছোট ঢেউগুলোর দিকে কিংবা পাহাড়ের চূড়োয় স্থির দৃশ্যমান ঐ নীল আকাশের দিকে। তখন, কেন জানি তোমাকে খুবই একাকী মনে হতো। পাহাড়, নদী, আকাশ এরা সবাই একা। নদীর জলে পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি, আকাশের নীলিমা খুব সহজেই মিলেমিশে একা এবং কয়েকজন। ব্লু মাউন্টেন, লেক অন্টারিও, অশোয়ার পরিচ্ছন্ন আকাশ তোমাকে মোটেও অবাক করে দেয়নি কোন কালেও। অশোয়ার গা সহা হিমেল বাতাসে বুনো হাঁসগুলোর ডানা ঝাপটানোর শব্দ তোমাকে চমকে দেয়নি কোন কোনদিনও। তোমার কাছে প্রিয় চিম্বুক পাহাড়, পাহাড় ঘেঁষে ছোট নদী আর নীল আকাশ এখনো অনেক বেশি প্রেমময়, প্রাঞ্জল, প্রাণময় চঞ্চল, মনে রং ছড়ায় অবিরত। তাঁতের শাড়ির জটিল বুননে লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার সরল সমীকরণ- টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে কী অপরূপে রূপসী হয়ে উঠতে পূজা-পার্বনে। তোমার প্রিয় তোমার গ্রাম, লাল মাটির সর্পিল পথ, মাটির মমতায় মাখা ছায়া সুনিবির নীড়। সবুজ ফসলের মাঠ- হলুদ ফুলের আঁচল পাতা। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া ঝুমের নিঝুম আশা জাগানিয়া আবাদ। চিলকা হ্রদের শান্ত স্বচ্ছ জলের মহিমা লীন হয়ে আছে কাপ্তাইয়ের নীল জলে। তোমার জানালার গহীনে সঙ্গোপনে লুকিয়ে আছে তোমার অদেখা ‘ওপেন্টি বায়েস্কোপ!’

তাই বুঝি তোমার প্রিয় জানালার শীতল শিকে বন্দী হয়ে থাকো সময় অসময়ে। শিমুলের গভীর গাঢ় লাল, সরষে ফুলের ব্যাকুল করা হলুদ আমাকে কেমন করে মুগ্ধ করে বিমুগ্ধ নরম মৃত্তিকার সবুজ আচ্ছাদনে। কুকুর ছানা, ছাগল ছানারা শীতের আদুরে রোদ্দুরে উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায়। সারি সারি তাল গাছ জলের মাঝে বিম্বিত জল-ছবি তৈরি করে ক্যানভাসের সফেদ জমিনে। আমি কেমন করে মুছে দেবো বলো এসকল অমলিন জ্বল জ্বলে উজ্জ্বল ছবিসমূহ? রান ওয়েতে অপেক্ষায়মান উড়ো জাহাজ, বিমান বালাদের অহেতুক, অনধিকার চর্চা বার বার নিয়ে যায় ম্যাপল লিফের শীতলতম চার দেয়ালের হীম ঘরে। আজন্ম এক ভীতু ছেলের মতোন ফোনের নিভৃত অন্ধকার থেকে শুনতে পাই ভোরের গান, পরিপূর্ণ সূর্যের আগমনী গান- রৌদ্রকর এক সকাল যা এনে দেবে ভাললাগার এক উষ্ণতা, আলোকিত এক কাঙ্খিত দিন।
বিদ্যুত সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা