বিদ্যুৎ সরকার : ১. ইচ্ছে পূরণ
ইচ্ছে করলে যে কোন সময় হারিকিরি করে জীবন বিসর্জন দিতে পারি আমি। তাতে কারো কিছু আসে যায় না, আমারও না। আমার আর কিছু চাওয়ারও নেই পাওয়ারও নেই। জলে ভাসা কলমী ডগায় একটি অস্থির ফড়িং এর স্থির চিত্র তোলা হয়ে গেছে কোন কালেই। বাতাসে দোল খাওয়া ধানের ক্ষেতের সবুজ শিহরণ কবেই তো অনুভব করে নিয়েছি। তাই, ইচ্ছে করলেই যে কোন সময় নির্দ্ধিধায় আত্মাহুতি দিতে পারি আমি। ভর বরষায় ডিংগি চড়ে লাল শাপলা, নীল পদ্ম তোলার চরম আনন্দময় মুহূর্তটুকু কতবার বুঝে নিয়েছি। শিশির ভেজা ঘাসের শরীর কতদিনই তো ছুয়ে ছুয়ে সিক্ত হয়েছি সাত সকালে কেউ তা জানে না। শরতের আকাশ জুড়ে মেঘেদের আল্পনা কাশ ফুলের যখন তখন মাতাল নাচন দেখা হয়ে গেছে এক সোনালী অতীতে। এখন আত্মঘাতী হলে দোষ কি তাতে? নীল অপরাজিতার সৌন্দর্য্য দুচোখে সাজিয়েছি আকাশের ঠিকানায় আর, কাঁঠালিচাঁপার সুঘ্রান বুক ভরে নিয়েছি এক অমৃতের সন্ধানে। তবুও কেন বেঁচে থাকা অসময়ে রেলগাড়ি চেপে? প্রিয়তমা, শুধু তোমারই জন্যে আমার ‘ইচ্ছা মৃত্যু’র ইচ্ছে পূরণ হলো না কোনভাবেই।
২. কষ্ট
আজকাল অনেক কিছুতেই কষ্ট পাই কোনদিন বন্ধুদের ফোন কল না পেলে কষ্ট পাই। পকেটের পয়সা হঠাৎ ফুরিয়ে গেলে কষ্ট পাই। ফুচকা খাওয়ার সেই ফুচকাওয়ালা একদিন না এলে কষ্ট পাই। হলে এসে হঠাৎ করে সিনেমার টিকিট না পেলে কষ্ট পাই। তোমার কাছে যাবো বলে পাঁচটা ত্রিশের ট্রেনটা যদি মিস করি কষ্ট পাই। টি এস সি’র সবুজ ঘাসে বসবো বলে যেই ভেবেছি বৃষ্টি এসে ভাসিয়ে দিলে কষ্ট পাই। নিলাঞ্জনার নীল খামের চিঠিগুলো সময় মতো না পেলে কষ্ট পাই। উইকএন্ডে দিনভর দুজনের ঘোরার প্ল্যানটা যদি কোন কারণ ছাড়াই ভেস্তে যায় কষ্ট পাই। কষ্টগুলো ঝুল বারান্দায় চাইমের ঘন্টা হয়ে দুলতে থাকে একটু হাওয়ায় কেমন করে মধুর শব্দে বাজতে থাকে, কষ্টগুলো দু:খ হয়ে বুক পকেটে জমতে থাকে শেষ বেলাতে। বিষাদটুকু ছড়িয়ে পড়ে বুকের মাঝে। এক বিকেলে ঠিক করেছি কষ্টগুলো তোমার কাছে বলবো বলে, সে বিকেলে ঝড়ো হাওয়া কষ্ট আমার উড়িয়ে দিলো যতো। তুমি আমার দু:খ কষ্ট, তুমি আমার সুখ, বুক পকেটে জমে থাকে সুখের সকল অসুখ।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা