বিদ্যুৎ সরকার : কুহুর জন্য ভালোবাসা
বহে না সুবাতাস। বুক পকেটে শুকিয়ে থাকা প্রেমিকার লাল গোলাপ। আলতা পায়ের আলতো ছোয়ায় যেন হিরন্ময় সুখ গতিময়তা পায় ধমনীর রক্ত প্রবাহে।
‘শুনোগো দখিনা হাওয়া প্রেম করেছি আমি’।

সেই দখিনা হাওয়া কখন কিছু না বলেই হাওয়া হয়ে যায় সবার অলক্ষ্যেই। বোতামহীন ফুসফুস আর ভরে ওঠে না সুবাতাসে। সুপ্রভাত ভালোবাসা অন্তরীন হয় কি নিদারুন সময়ের আবর্তে। শুধু পাহাড় পাহাড় অভিমান জমে উচ্চতা বাড়ায় এক শৃংগের মায়াবী হাত ছানিতে। ভালোবাসার খোলা জানালা এক সময় বুঝি পরিত্যাক্ত ঘোষিত হয় অনিয়মের নিয়মে। ভালালাগার ঘেড়াটোপে ভালোবাসাও অস্তমিত হয়ে যায় বড় অসময়ে।

সমতল ভূমির চেয়ে অসমতল পাহাড় আমায় বার বার ডেকে নিয়ে যায় তার পাদদেশে। দারুন লাগে পাহাড়ের সবুজকে ছুয়ে ছুয়ে আকাশের নীলের কাছে বিলীন হয়ে যেতে। আকাশের নীল আর পাহাড়ের উচ্চতা আমাকে কেবলই উদার হতে শেখায়। তবুও আমি বুকের মাঝে একটি কষ্ট পুষি, শব্দহীন আধার-
‘আধার আমার ভালো লাগে’।

কেমন করে মেনে নেবো তার আদ্রঠোটের অভিমান। বার বার কেনো তুমি আমার দু:খ হতে চাও? ভালোবাসার ওম চাদরে জড়িয়ে রাখো অহর্নিশ? তোমারো কি পাহাড়, সবুজ বনভূমি, নিথর জলরাশি-ভালোলাগার বিষয় আসয়? কেন তবে বার বার ছুটে যাও এক পাহাড় থেকে অন্য এক পাহাড়ের পাদদেশে? সবুজ বনভূমির নৈশর্গিক চিত্র একে যাও মনের ক্যানভাসে। লেকের তরল জলে সরল আদ্রতায় পা ডুবিয়ে শান্ত হতে চাও মনের অজান্তেই। নিশ্চয়ই তুমি জেনে গেছো লেকের এ শান্ত জলরাশির অতলে লুকিয়ে আছে অন্য এক অশান্ত জনবসতি। তাদের সমস্ত দু:খ কষ্ট, কান্না দ্রবীভূত হয়ে আছে লেকের তরল জলে। আমাকেও তো নিয়ে যেতে পারতে সফর সংগী করে। না হয় কিছুটা দিন তোমার সান্নিধ্যে, তোমারই প্রযতেœ লালিত হতাম। লেকের কাছে নতজানু হয়ে স্বচ্ছ জলে প্রতিচ্ছবি কিম্বা শুভলংয়ের বনভূমি ছুয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখতাম।

স্বপ্ন কি দূরগামী জাহাজের দৃশ্যমান মাস্তুল? ঢেউয়ের উঠানামায় কখনো কখনো হারিয়ে যেতে অভ্যস্ত। কুহু তুমিও কি তেমনি এক কষ্টময় স্বপ্ন, দু:খময় স্বপ্নের মাস্তুল মাঝে মাঝে হারিয়ে গিয়েও বার বার ফিরে আসো এক অজানা অচেনা আকর্ষণে। স্মৃতি ভীষণ বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে সময়ের খেয়ায়। একটি অসমাপ্ত গল্পের মতন চলতে চলতে হঠাৎ থেমে যাবে কোন দিন। কুহু তুমিও যেন আমার চেতনার একটি অসমাপ্ত ছোট গল্প, কেবলই আমাকে ভাবায়। ভাবনা যেন এক জলরং ছবি। রংগে রংগে রাংগিয়ে ভরে দেয় মনোময় ক্যানভাস।
দীর্ঘদিন অদেখা সবাইকে কেমন আবেগী সোহাগী করে তোলে সেটা কুহুকে দেখলেই সহজেই অনুমেয়। জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন হয়ে যায় মুহূর্তেই। অবাক বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে একটি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি নিয়ে সামনে হাজির-
‘এত দিন কোথায় ছিলেন’?

সত্যিই তো কতদিন দেখা হয়নি, কথা হয়নি কুহুর সাথে। দিন, মাস পৃথিবী থেকে ছিটকে গেছে এক মহামারীর মহা তান্ডবে। কুহু কি কিছুটা বদলে গেছে সময়ের এ ব্যাবধানে? মৃন্ময়ী কুহু কতটা রসহীন, নিরশ মানবীতে রুপান্তরীত। রেক গোছাতে গোছাতে আমার দিকে না তাকিয়েই কথা বলে যাচ্ছিলো কুহু।
এটা কি তার অভিমান? না কি অভিযোগ, অনুযোগের নিরব শব্দ সংকেত?
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা