বিদ্যুৎ সরকার : তুমি যেমন স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাস, আমিও তেমনি স্বপ্ন দু’চোখ আগলে রাখি। কখন তুমি স্বপ্ন দেখাবে আনমনে প্রহর গুনি। স্বপ্ন সুখের উল্লাসে রাত কাটে মোর উচ্ছ¡াসে। তাই তুমি বার বার বলে যাও ‘কিছু স্বপ্ন নিয়ে যাও চোখে তার এঁকে দাও কেমন করে ভালোবাসা কখন আসে কেউ তা জানে না…।’ নিশ্চয়ই তোমার মনে থাকার কথা অমিত কুমারের গাওয়া ভাল গানগুলোর একটি। তুমিই তো প্রথম ক্যাসেট বাজিয়ে আমাকে শুনিয়ে ছিলে তোমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। পরবর্তীতে কিছুদিনের জন্য এ গান হোয়ে গেল তোমার সকাল-সন্ধ্যার গান। গানের গলাটা তোমার ভালোই ছিলো কিন্তু শেষ অব্দি আর ধরে রাখলে কই? ছবি আঁকার ব্যাপারটিও অনেকটা তাই। মানুষের ইচ্ছেগুলো, ভাবনাগুলো, ভালোলাগাগুলো কি সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়? বয়সের উর্ধগতিময়তায় কি শিল্প কলায় বা ললিত কলায় অহেতুক পরিবর্তন ঘটে? নাকি এক অজানা কারণে দৃষ্টিভঙ্গীর বিবর্তন আসে? স্বপ্ন পুরের পরিবর্তনগুলো কি তেমনিভাবে ঘটে যায় সময়ের আবর্তে। যে স্বপ্ন দেখায় তার বিষয়গুলো বদলে যেতে থাকে তার অজান্তেই। আর যারা অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায়মান তাদের স্বপ্নগুলো পর নির্ভরশীল হওয়ার দরুন বাধসাজে ইচ্ছা পূরণে। তাদের ইচ্ছেটাই এখানে মুক্ষ্য। স্বপ্ন যারা দেখবে তাদের কিন্তু নয় মোটেও।
সাজেক্স’র কটেজের খোলা জানালা গলিয়ে তোমার দৃষ্টি আটকে যায় দূর পাহাড়ের সবুজ বনভূমিতে। যেখানে আকাশ ছুয়েছে গাছের নরম পাতাদের। পাতারা ছুঁয়েছে ভোরের সোনা ঝরা আলোক রশ্মি। চনমনে সকালগুলো কেমন আনমনা করে তুলতো তোমাকে সে গল্প শুনিয়ে ছিলে আমায়। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্না ধারায় শেষ বিকেলের অবগাহন দিনের ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বয়ে আনে সুখানুভূতি। রাতের গভীরে ঝিঁঝি পোকার বিরামবিহীন ঘুম পাড়ানি গান কী সোহাগি করে তুলে অলক্ষ্যে। মনের উপত্যকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে পাহাড় দেখা সে তো কোন্ কালেই মন কেড়েছে আমার। তবুও তুমি স্বপ্ন দেখালে পাহাড় ভ্রমণের, আমিও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম – যেন সাজেক্সের সবুজ বনভূমি ডাকছে আমায়।দিন যায়, রাত আসে স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার কেমন ফিকে হতে হতে রাতের অন্ধকারেই বিলীন হয়ে গেল এক আমাবস্যার রাতে। এক আশা জাগানিয়া স্বপ্ন কী দুঃস্বপ্নের ঘোর অন্ধকারে ঠেলে দিল আমাকে! তাতে কি শুভলংগের মহোময় সুবুজাভ পাহাড়! যার গা ঘেঁষে বহতা উচ্ছলিত কাপ্তাই লেক, স্বচ্ছ জলে সবুজ পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি? জলের ভেতর আগলে রাখা নিহত সুখের বিজ। বিষন্ন জড়ানো সময়গুলো এক প্রান্তিক সকালে এসে হারিয়ে যেতে পারে পথ ভুলে। হাত বারালেই আলোর পাহাড়। পাতা ঝরার বিচ্ছেদে বৃক্ষরা বড়ই বেমানান ছিল এতোকাল। ছায়ারা ক্রমববর্ধমান, কতোকাল ছায়ার শরীর ছুঁয়ে দেখা হয় না আমার।
জ্যোৎস্নায় ফোটা চন্দ্রমল্লিকার সুঘ্রানে মৌতাত শুভলংগের বনভূমি। পড়ন্ত বিকেলে ঝুলন্ত সাঁকো পেরিয়ে চলে যাবো লেকের ডুবন্ত সূর্যাস্ত দেখতে এ সমস্ত কিছুই তো তোমার দেখানো স্বপ্ন। তবুও একাকী রেলিং তুমি দাঁড়িয়ে থাক হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকের হাতের স্পর্শ পাবার একান্ত আশায়।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা