বিদ্যুৎ সরকার : আছে গুনে গুনে পাক্কা আড়াই মাস, মানে দু’মাস পনের দিন। আকাশে ভাসমান সময়টুকু না হয় বাদই দিলাম তবুও যা বলেছি তাই। এ এক আকাশ ছোঁয়া দীর্ঘ সময়। এক মাসের অধিক সময় এরই মধ্যে অতিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও এচিভমেন্ট তেমন হয়নি। যদিও প্লেন থেকে ডাঙায় অবতরণের পর দিন থেকেই ঘুরে যাচ্ছি বিরামহীন। কিসের ‘জেট লেগ’, কিসের কি? শরীরের নাম মহাশয়…। আঠার-উনিশ ঘন্টা দু’পাখায় ভর করে আকাশে আর এখন চার চাকায় ভর করে যত্র-তত্র। এর কিছুটা পূর্ব পরিকল্পিত আর বাকিটা তাৎক্ষণিক। ইচ্ছা হলো ছুটলাম। যাদের হৃদয়ের কাছাকাছি থেকেও শারীরিকভাবে অনেকটা দূরে ছিলাম, তাদের কাছেই ছুটে গিয়েছি। এ জন্য এ যাত্রায় বাংলাদেশ সফর ভিন্ন মাত্রায় চিহ্নিত ও আর্দ্রিত। পারস্পরিক ভালো লাগা ও ভালোবাসার দিকটা গৌরবান্বিত হয়েছে, হয়েছে আরও দৃঢ়, মজবুত। দূরদেশ থেকে যাদের সাথে এতোদিন যোগাযোগ শুধু ফোনালাপের মধ্যই সীমিত ছিল তাদের কাছে যেতে পেরে যারপর নাই সুখী আমি। এটা আমার বাড়তি পাওয়া। এতো দিন কেন যে ওমন করে কাছে এসে ভালোবাসার উষ্ণতা নেইনি তা ভেবে ভেবে অনুতপ্ত হতে হয় এখন। অফুরন্ত সময় আমার। যতক্ষণ ইচ্ছে, যত দিন ইচ্ছে একজনের প্রযতেœ কাটিয়ে দেয়া যায় অবলিলায়। এ ইচ্ছেটুকু কেন যে ইচ্ছে করে ভাবতে শিখিনি আগে-ভাগেই। ও বন্ধু আমার আমার বন্ধুভাগ্য সুপ্রসন্ন। হাত বাড়ালেই বন্ধু। যখন তখন বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি বিভিন্ন পর্যায়, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অভিন্ন মানসিকতায়।
শৈশব, কৈশর যৌবন এমন কি এ বার্ধক্যে এসেও নতুন নতুন বন্ধু নির্মাণে এতটুকুও আগ্রহ হারাইনি। স্কুল থেকে কলেজ অতঃপর ইউনিভার্সিটি এ ক’বছর প্রচুর বন্ধু হয়েছে আমার। চাকরিকালীন অবস্থায় বন্ধু, মহল্লার বন্ধু, ভাসমান বিভিন্ন আড্ডার বন্ধু। এদের অনেকেই ঝরে গেছে কারণে – অকারণে আবার অনেকে এখনো বন্ধুত্বের নিগুঢ় আবেশে ও আবেগে জড়িয়ে আছে অনন্তের সহযাত্রী হয়ে। স্বার্থহীন ভালোবাসার ভালো লাগায় বন্ধুত্ব অমলিন চিরকাল, চিরজীবী। দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে কিছুদিন আমাকে মনোকষ্টে ও বিষন্নতায় ভুগতে হোয়েছিল বন্ধু বিচ্ছেদের শংকায়। এতদিনে সুগঠিত, সুনির্মিত বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি আমাকে এতোটাই বিচলিত করেছিল। টরন্টো চলে আসার দিন উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে যতক্ষণ সবুজ বনভূমির রেখাটি দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম আর বন্ধুদের কথা ভাবছিলাম। আবার কবে বন্ধুদের সান্নিধ্যে ফিরে আসবো, প্রিয় ভূমিতে স্পর্শ রাখবো সযতনে। বিগত কয়েক বছর ধরে একটি বিষয় আমাকে খুব আলোরিত ও আলোকিত করেছে আমার অজান্তেই। যখনি প্লেন টেক অফ করে টরন্টোস্থ বন্ধুদের জন্য মন কেমন করে উঠে। একটা কষ্ট কষ্ট আবহ সৃষ্টি হয় মনের মাঝে। দুবাই আসা মাত্র মনের মধ্যে রিভার্স স্যুইং হয়ে দেশের বন্ধুদের কাছে পাবার আনন্দে বিভোর হয়ে পড়ি নিমিষেই। দ্বিমুখী ভালো লাগার ভালোবাসায় আমি আচ্ছন্ন এখন। এখন সময়গুলো ভীষণ অসময়ে চলে যায় বানের জলের মতোন। সময়ের ইচ্ছা – অনিচ্ছায় সময়ের আসা-যাওয়া।
তাই সময়ের রিলে রেসে কখনো সখনো পশ্চাতে পরে যেতে হয় অনায়াসেই। কেন যে সময় করে সময় মত উদ্দিপিত হই না নিজ থেকেই। এই মেঘ, এই রোদ্দুর। বৈরি আবহাওয়ায় বিবাগী মন ভেসে ভেসে যায় ঠিকানাহীন কোন্ সে দূর দেশে?
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা