বিদ্যুৎ সরকার : মেইন ঘরের সাথেই লাগোয়া সম্পূর্ণ কাচ দিয়ে ঘেরা তার স্বপ্নের বারান্দা। গৃহ প্রবেশের প্রথম দিন থেকেই এ বারান্দা তার প্রিয়। একটু সময় পেলেই চলে আসে তার প্রিয় এ স্থানটিতে। নানান গুল্ম লতা, ফুল, বাহারি পাতার গাছ দিয়ে একটু একটু করে মনের মত করে সাজিয়ে তুলেছে শাশা। যেখানেই ফুলের সৌরভ সেখানেই ছুটে যায় সে। যেখানেই নতুন কোন ফুল, পাতাবাহারের সন্ধান পাবে সেখানেই ছুটে যাবে কিছু না ভেবেই। তিলে তিলে তিলত্তোমা করে তুলেছে তার এ সাজানো বাগান। শীতের প্রারম্ভেই বাইরের বাগানের গাছসমূহ এ বারান্দায় স্থান করে নেয়। সামার এলেই আবার যথা স্থানে ফিরে যায় সেগুলো। গাছ-গাছালির পাশাপাশি কবিতা, গান তার মনের অনেকটা জুড়েই। লো ভলিউমে সারাক্ষণ গান বাজে সাউন্ড বক্সে। বিকেলটা থাকে কবিতা পড়ার দখলে। মাঝেমধ্যে নিজে নিজে আবৃত্তির চর্চা করে। বাগান, গাছ-গাছালি, কবিতা আর গান তার প্রেম, তার ভালোবাসা। এ তিনকে বাদ দিয়ে তার অস্তিত্ব ভাবা যায় না।
শীতের দেশে ‘সামার’ এলেই শহর জুড়ে লাইভ কনসার্ট, এক্সিবিশন, খেলা-ধুলা, নানান উৎসবে সরব হয়ে উঠে রাত-দিন। মানুষ ছুটে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সুখের সন্ধানে, আনন্দ পাবার আশায়। শা শাও ছুটে। সে জানে এ সুখ তার সাময়িক, ক্ষনস্থায়ী। তার সেই এক চিলতে বারান্দা ওর জন্য বয়ে আনে অনিন্দ্য এক সুখ চিরদিনের জন্যই। তাই যেখানেই যাক, যত দূরেই যাক দিন শেষে তাকে ফিরে আসতে হবে সযতনে গড়া কাচের ছোট্ট বারান্দাটায়। এখানে সুখ মজুত থাকে অহর্নীষ বেলা – অবেলায়। সামার এলেই ঘুরাঘুরি, হুরোহুরি, লুটোপুটি দেশ জুড়ে। ইস্ট কোস্ট না কি ওয়েস্ট কোস্ট, পাহাড় না সাগর, সড়ক পথে না কি আকাশ পথে? এ সকল মাল্টিপল চয়েসের ধাঁধাঁয় পড়ে দিশা হারা আম জনতা। শা শা’র ছুটোছুটির আগাম প্ল্যান শীত না শেষ হতেই কনফার্মড। অতঃপর ছক দেখে দেখে চার চাকায় চটজলদি ভ্রমণের শুভ সূচনা। সবার মনেই, ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা……’!
বেলা শেষে পাখি তার নীড়ে ফিরে আসবেই, শান্তির নীড়, ভালোবাসার নীড়, ভালো লাগার নীড়। ঠিক যেমন শাশা ফিরে আসে লতা-গুল্ম, ফুল প্রজাপতির টানে। একটি প্রিয় ঘর যেখানে স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরা এক চিলতে বারান্দা, সুখ ও শান্তি যেখানে কাছাকাছি, পাশাপাশি অনন্তের পথে সাথি হয়ে যায় অবলিলায়। এক পশলা বৃষ্টি হোয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে, তার রেশ এখনো রয়ে গেছে মাটির সোঁদা গন্ধে, সবুজ সতেজ পাতার শরীরে। কাচের দেয়ালের গায়ে বৃষ্টির ধারা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এক মগ ধূমায়িত কফি নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো শাশা, লো ভলিউমে অদিতি মহসিনের কন্ঠে ‘দূর দেশি সেই রাখাল ছেলে, …..’ বেজে যাচ্ছিল। কফির মগে চুমুক দিতে গিয়ে কেমন যেন একটু আনমনা ও ইমোশনাল হয়ে গেল শাশা। সত্যিই তো তারওতো এক রাখাল ছেলে ছিল যে একাত্তরের যুদ্ধে গিয়েছিল কিন্তু আর ফিরে আসেনি কোন দিন, কোন কালেও।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা