বিদ্যুৎ সরকার : শাশার পড়ার টেবিলের সম্মুখেই ছোট্ট একটি জানালা। জানালার ও পাশটায় শাশার সাজানো গোলাপ বাগান। ক’দিন হলো জানালার কাছ ঘেঁষেই একটি লাল গোলাপ ক্রমে ক্রমে পূর্ণতা পেয়ে শোভিত। গোলাপ শাশার প্রিয় ফুল। নিজ হাতে সযতনে গড়ে তুলেছে এ গোলাপ বাগান। নানা প্রজাতির গোলাপ তার সংগ্রহে আছে। যেখানেই নতুন কোন গোলাপের খবর পেয়েছে সেখানেই ছুটে গিয়েছে সে। গোলাপপ্রেমী শাশা দেশী-বিদেশী বই – ম্যাগাজিন ঘেটে ঘেটে গোলাপ লালনপালন সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে এরই মধ্যে। আর গাছগুলো থেকে যখন ফুল ফোটতে শুরু করে তখন তার মন খুশিতে আটখানা হোয়ে যায়। এক একটি ফুল যেন এক একটি ভালোবাসার কবিতা হয়ে প্রকাশ পায়। একটু ফুরসত পেলেই বাগানে আসা শাশার অভ্যাস। বাগানের তাবৎ পরিচর্যা করা ফুলের সৌরভ আর সৌন্দর্য উপভোগ করা তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজগুলোর অন্যতম। ফুটন্ত গোলাপের পাপড়ি রাতের শিশির ভেজা হয়ে কেমন তাজা ও পরিচ্ছন্ন দেখায়। আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে শাশার। ভয় হয়, আংগুলের স্পর্শে আবার পাপড়িগুলো যদি ঝরে পড়ে। ‘কোন্ রঙের গোলাপ তোমার বেশি পছন্দ?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে সত্যি সত্যি শাশা ভীষণ ভাবনায় পড়ে যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সকল নিরবতা ভেংগে হঠাৎ বলে উঠবে ‘সব রঙের গোলাপই আমার পছন্দ।’ সত্যিইতো আমাকে বললে ঠিক অমনটাই বলতাম বৈকি! সবে মাত্র গরম কফির মগটা টেবিলে রেখে রেক থেকে পড়ার বই নামাতে যাবে তক্ষুনি একটি রঙিন প্রজাপতি কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো সেই সদ্য ফোটা একাকি গোলাপ ফুলের উপর। কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় শাশা। অনুপম সুন্দর একটি দৃশ্যের অবতারণা।
কফির মগে হাত রাখতে গিয়ে অনেকক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে রঙিন প্রজাপতিটির দিকে। কত রঙে রাঙানো প্রজাপতির শরীর। শাশার বলতে ইচ্ছে করে, ‘প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে তুমি এমন রঙিন পাখা?’ গোলাপ পাপড়ির সুরভী ও পেলবতা দুষ্ট রঙিন প্রজাপতিকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছে বুঝি! তাইতো বার বার ঘুরেফিরে উড়ে উড়ে আসে সে লাল গোলাপেরই উপর। শাশা নিজেও জানে না কতোক্ষণ তাকিয়ে ছিল লাল গোলাপ ও দুষ্ট রঙিন প্রজাপতির দিকে। শাশার বড় ইচ্ছে জাগে প্রজাপতির রঙিন পাখাদুটো আলতো করে ছুঁয়ে দিতে, আবার পরক্ষণই ইচ্ছে করে গোলাপের নরোম পাপড়িগুলো ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু শাশাতো ভালো করেই জানে তার দুটো চাওয়ার কোনটাই সম্ভব নয়।
তবুও সে চেয়ে চেয়ে দেখে সারাদিন, সারা বেলা একটি ফুলের উপর একটি দুষ্টু রঙিন প্রজাপতির নাচন। ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে…..।’
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক, আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা