মনিস রফিক : চলচ্চিত্রের যাত্রাপথ ইতোমধ্যে ১২৫-এ পা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নবীন আর শক্তিশালী এই শিল্পমাধ্যমকে ‘অষ্টম আশ্চর্য’ বলা হয়। আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-নিরাশা আর ভালোবাসার কথা যেভাবে এই শিল্পমাধ্যমে উঠে আসে, তা অন্য শিল্প মাধ্যমে সম্ভব হয় না। মূলত পূর্বের ছয়টি শিল্পের মিথস্ক্রিয়া আর প্রতিফলনে ঋদ্ধ চলচ্চিত্র নামের এই ‘সপ্তম শিল্পকলা’। শুরু থেকে বর্তমানের চলচ্চিত্রের যাত্রাপথটা কেমন ছিল, আর কোন কোন অনুসন্ধিৎসু ক্ষণজন্মা স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বপ্নের ফসল এই চলচ্চিত্র, সে সব বৃত্তান্ত উঠে আসবে চলচ্চিত্রকর্মী মনিস রফিক এর লেখায়। চলচ্চিত্র যাত্রাপথের এই বাঁকগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘বাংলা কাগজ’ এ।

চব্বিশ.
প্রথম ছবি নাগরিক সময়মত মুক্তি না পাওয়ায় ঋত্বিক বেশ কয়েক বছর মনোবেদনায় ভুগেছিলেন। তার উপর বোম্বে থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে এসে ঋত্বিক কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এমন এক মানসিক সংকট কালে হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল লেখক সুবোধ ঘোষের অনবদ্য ছোট গল্প ‘অযান্ত্রিক’ এর কথা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভেবে এসেছেন এই কাহিনী নিয়ে তিনি একটি চলচ্চিত্র বানাবেন। নিজের সমস্ত মনোবেদনা ও হতাশা কাটিয়ে অবশেষে ঋত্বিক ঘটক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি ‘অযান্ত্রিক’ বানাবেন। তারপর ১৯৫৮ সালে তিনি তৈরি করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের এক কালজয়ী ছবি ‘অযান্ত্রিক’ । তাঁর এ ছবি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মারি সেটন বার বার উল্লেখ করেছেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের সবচেয়ে চিন্তা সমৃদ্ধ ও সবচেয়ে সংহত চিত্রসৃষ্টি হল অযান্ত্রিক।’

১৯২০ সালের মডেলের পুরোনো একটা ভাঙা শেভ্রোলের লক্কর ঝক্কর ট্যাক্সি যে একটি ছবির অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু হতে পারে, তা দর্শকরা বিষ্ময়ের সাথে দেখেছিল। ‘অযান্ত্রিক’ ছবির নায়ক বিমল আর নায়িকা বা উপনায়ক হচ্ছে জগদ্দল নামের এই ভাঙা গাড়িটি। নিঃসঙ্গ বিমলের একমাত্র সঙ্গী ও বন্ধু তার জগদ্দল। আমরা তার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারি না। শুধু দেখি গাড়ির গ্যারেজের পাশে ছোট একটি ঘরে সে থাকে। বিমলের মুখ দিয়েই জানতে পারি। পনের বছর আগে যখন তার মা মারা যান, তারপর থেকেই জগদ্দল হয়েছে তার একমাত্র আপনজন, আত্মার পরম আত্মীয়। যার ফলে জগদ্দলকে সে সবসময় আগলিয়ে রাখে পরম মমতায়। তার এ ব্যবহার অনেক সময় মনে হয়, কোন প্রেমিক তার সব কিছু উজার করে দিচ্ছে তার প্রেমিকাকে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক

বিমল ঘরহীন মানুষ। কিন্তু তার সব না পাওয়াকে ভুলিয়ে দেয় তার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম জগদ্দল। তবে জগদ্দলকে সে কখনো নিছক উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখেনি। বরং ঝক্কর মার্কা জগদ্দলকে যখন সবাই বাদ দিতে বলে, তখনো সে তার সঞ্চিত সব অর্থ দিয়ে জগদ্দলকে সাজাতে চায়, ঠিক করতে চায়। কিন্তু বয়সী জগদ্দল শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে। অসহায় মলিন বিমল শুধু দেখতে থাকে কিভাবে স্ক্র্যাপারের লোকজন এসে ভাঙা জগদ্দলকে মন দরে কিনে ঠেলা গাড়িতে করে নিয়ে যায়। বিমলের কপাল থেকে ঘাম বের হয়, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। অসহায় বিমল শুধু চেয়ে থাকে জগদ্দল নামে এক ভাঙা যন্ত্রের দিকে যে তার কাছে যন্ত্র থেকে অযন্ত্রে পরিণত হয়েছিল, যে ছিল তার মনের মানবী।

ঋত্বিক ঘটক নিজেই বলেছেন, ‘অযান্ত্রিক’ ছবিটির বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি দীর্ঘ বারো বছর ধরে।’ নিশ্চয় তাঁর সেই দীর্ঘ বিনিদ্র ভাবনার ফলই হচ্ছে ‘জগদ্দল’ এর অযান্ত্রিক হয়ে ওঠা।

‘অযান্ত্রিক’ ছবিটি যখন বিশেষ প্রদর্শনীতে ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় তখন এটি অকুণ্ঠভাবে প্রশংসিত হয় বিখ্যাত চলচ্চিত্র-সমালোচক ও ঐতিহাসিক জর্জ সাঁদুল-এর দ্বারা। তিনি একটি প্রবন্ধে লিখলেন- ‘অযান্ত্রিক’ কথাটির অর্থ কী? আমার তা জানা নেই এবং আমার মনে হয় ভেনিসে কেউই তা জানেন না, যেখানে ভারতবর্ষের চৌদ্দটি প্রধান ভাষা সম্বন্ধে প্রত্যেকের জ্ঞানই সীবাবদ্ধ। কিন্তু অন্তত এটুকু আমার জানার সুযোগ হয়েছিল যে ঋত্বিক ঘটক হচ্ছেন একজন তরুণ পরিচালক যিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের সব নির্মাতাদের মাথা ঘুরিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখেন।”

১৯৫৮ সালে নির্মিত ঋত্বিক ঘটকের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’ এর পোস্টার

জর্জ সাঁদুল আরো বলেছিলেন, “ছবিটির পুরো কাহিনী আমি বলতে পারব না। আমি বাংলা জানি না এবং ছবিতে কোন সাব-টাইটেলও দেওয়া ছিল না। কিন্তু ছবিটি গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত আমি সম্মোহিতের মতো দেখেছি। আপনারা কি কেউ অষ্টাদশ শতকের লেখক টরমেসের লেখা লাজারিলো-র মতো কোনো স্পেনীয় চিত্রধর্মী উপন্যাস পড়েছেন? ভারতবর্ষ থেকে আসা ‘অযান্ত্রিক’ নামের এই ছবিটিকে বলা চলে একটি অসাধারণ চিত্রধর্মী উপন্যাস। আঠারো শতকের বিখ্যাত ফরাসি উপন্যাস জিল বাঁ সাঁতিলান – এর নায়কের মতো এই ছবির নায়কও একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। ১৯২০ সালের মডেলের একটি পুরোনো শেভ্রোলে গাড়ির প্রতি রয়েছে তার প্রচল্ড অনুরাগ, আর তাকে সে ভালোবেসে নাম দিয়েছে জগদ্দল।”
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই জর্জ সার্দুলই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি ১৯৫৬ সালে কান এর নবম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অজ্ঞাত অখ্যাত সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ সর্বপ্রথম ‘আবিস্কার’ করেন এবং বিশেষ অনুষ্ঠান করে সমালোচক ও জুরীদের ‘পথের পাঁচালী’ দেখাবার ব্যবস্থা করেন। পরিণামে ছবিটি ‘শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল’ হিসেবে পুরস্কৃত হয়। জর্জ সার্দুল বলেছিলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে বাংলা ছবিই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, আর ঋত্বিক ঘটকের প্রতিভার মধ্যে আছে এক দুর্লভ মৌলিকতা।
ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’ চলচ্চিত্র নিয়ে সত্যজিৎ রায় খুবই ইতিবাচক কথা বলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ‘ঋত্বিক বিষয়বস্তু নির্বাচনে একটা অসম সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। ঠিক সেই জাতীয় ছবি বাংলার চলচ্চিত্রে তাঁর আগে কেউ করেনি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে নীরস ছবি- নায়ক বলতে একজন গাড়ির ড্রাইভার এবং নায়িকা বলতে বোধহয় সেই গাড়িটাকে বলা চলে। সেখানে সাহসের পরিচয় বলতে একটা ছিল যে সেই গাড়িটার মধ্যে মনুষ্যত্ব আরোপ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, যাকে বলা যেতে পারে এক ধরনের ‘anthropomorphism’। সেটা যে সব জায়গায় উতরে ছিল সেটা আমি বলব না; কিন্তু বাংলার চিত্রজগতে কাজ করতে এসে, বাংলার দর্শকদের কথা মনে রেখে একজন শিল্পী যে এটা করার অদৌ সাহস পেয়েছে সেটাই হচ্ছে আশ্চর্য্যের কথা।’

সত্যজিৎ রায়ের জীবনীকার মারী সেটন ঋত্বিক ঘটক সম্বন্ধে ১৯৬০ সালে একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের শিল্পকর্ম দারুণ দুঃসাহসিক, মননশীল এবং বেশ কিছুটা যুক্তিবাদী কিংবা তার্কিক। সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে লক্ষণীয় হল তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের সংহতি এবং শুভবুদ্ধি। ঋত্বিক ঘটক কিন্তু ঠিক এর বিপরীত। তিনি হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘দামাল শিশু’ (ইনফ্যান্ট টেরিবল)। মারী সেটন ‘অযান্ত্রিক’ চলচ্চিত্রকে ঋত্বিক ঘটকের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

‘অযান্ত্রিক’ এর জগদ্দল ও বিমল

‘অযান্ত্রিক’ চলচ্চিত্রে গাড়িটির সাথে ড্রাইভার বিমল-এর জটিল সম্পর্কই হচ্ছে এই ছবির মূল কথা। গাড়িটির বিমলের কাছে যন্ত্রের অধিক, যেন রক্ত-মাংসের জীব, নাম তাই ‘অযান্ত্রিক’। তীব্রভাবে এই অনুভূতি আমাদের চেতনায় আঘাত করে যায় একেবারে প্রথম থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, নানান পর্দায়, নানান সুরে। কিন্তু ঋত্বিকের মতে, অযান্ত্রিক এর মধ্যে আরো গভীর এক অর্থ নিহিত। দার্শনিক ইয়ুং এর ‘কালেকটিভ আনকনসাস’ এর বৃহৎ প্রেক্ষিতে তিনি বিমলকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তাই ওঁরাও আদিবাসীদের উপস্থিতি। যন্ত্রে ঐশী বা মানবিক সত্ত্বা আরোপের আদিম ঐতিহ্য ভারতের গ্রামাঞ্চলে যেভাবে এখনও প্রবহমান তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘অযান্ত্রিক’ এক নতুন ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ হতে চায়, যা লেখক সুবোধ ঘোষের কাহিনীতে অনুপস্থিত। এখানেই ঋত্বিক ঘটকের মুন্সিয়ানা। তবে ‘অযান্ত্রিক’ চলচ্চিত্রকে এমন এক উচ্চ স্তরে নিয়ে যাবার জন্য ঋত্বিক ঘটক ছাড়া আর তিন জনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তাঁরা হচ্ছে, বিমলের চরিত্রে অভিনয়কারী ঋত্বিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কালী ব্যানার্জী যিনিও ঋত্বিক ও প্যারাডাইস ক্যাফের সব আড্ডাবাজরা একদিন স্বপ্ন দেখতেন সিনেমা আর বিপ্লব হাত ধরাধরি করে হাঁটবে। কালী ব্যানার্জী ছাড়া উল্লেখ করা যাতে পারে ক্যামেরাম্যান দীনেন গুপ্ত, সম্পাদক রমেশ যোশী এবং সঙ্গীত পরিচালক আলী আকবর খাঁ।

১৯৫৮ সালের ২৩শে মে ‘অযান্ত্রিক’ মুক্তি পেয়েছিল। আর এই চলচ্চিত্রের জন্যই ঋত্বিক তাঁর জীবনের প্রথম সংবর্ধনা পেয়েছিলেন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগে সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই ঋত্বিকের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোন ব্যাক্তি বলতে এর পূর্বে সত্যজিৎ রায়কে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, ‘পথের পাঁচালী’র অভূতপূর্ব সাফল্যের পর। সুপুরুষ, গৌরকান্তি, বলিষ্ঠ-বুদ্ধিদীপ্ত চেহেরার তেত্রিশ বছরের ঋত্বিক ঘটক সেদিন সেই সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর ক্যামেরাম্যান দীনেন গুপ্ত, সম্পাদক রমেশ যোশী, অভিনেতা কালী ব্যানার্জী, অনীল চট্টোপাধ্যায় এবং কাজল চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। ঋত্বিক ঘটক ছাড়াও সেই সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন সে সময়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নির্মল কুমার সিদ্ধন্ত এবং ইতিহাসবিদ ড. নীহার রঞ্জন রায়।
১৯৫৯ সালে ঋত্বিক ঘটক নির্মাণ করলেন বাড়ি থেকে পালিয়ে। ছবিটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম স্বার্থক শিশু চলচ্চিত্র বলা যেতে পারে। বাবার কড়া শাসন ও চোখ রাঙানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকা বালক কাঞ্চন একদিন মমতাময়ী মাকে ছেড়ে পালিয়ে গেল অজানার উদ্দেশ্যে। অজানা বলতে কাঞ্চনের অদেখা বিস্ময়কর নগরী কোলকাতা।

১৯৫৯ সালে নির্মিত ঋত্বিক ঘটকের তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’র পোস্টার

বালক কাঞ্চন ঘুরতে থাকে কোলকাতার এপাশ থেকে ওপাশ। পরিচয় হয় তার সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে। সেইসব মানুষগুলোর কেউবা বাউল, কেউ আবার ভবঘুরে আবার কেউ নিঃসঙ্গ গৃহিণী। কাঞ্চনের চোখে যেমন ধরা পড়ে কোলকাতার বিভিন্ন আনন্দের উপসঙ্গ তেমনি ধরা পড়ে নগ্ন দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক পেষণ। সবশেষে, কাঞ্চন উপলব্ধি করে, বাড়ির চেয়ে ভালো কিছু নেই।’ এমন এক প্রশান্তিময় বাড়িই ঋত্বিক ঘটক হারিয়েছিলেন ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের কারণে। রাজশাহী শহরের পদ্মার কোল ঘেঁষে তাদের যে বাড়িতে তাঁর কেটেছিল শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের প্রথম কাল, সেই বাড়ির ছায়া তিনি কখানো ভুলতে পারেননি জীবনে। তাইতো মৃত্যুর শেষ মুহূর্তেও পদ্মাকে স্মরণ করতেন তিনি গভীরভাবে।

কাঞ্চনের কলকাতা-দর্শনের ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবেই ঋত্বিকের নিজস্ব প্যাটার্নে উপস্থাপিত। তাই টুকরো টুকরো অনেক ঘটনা, অনেক চরিত্রের সমাবেশে দেখি কলকাতার শব-ব্যবচ্ছেদ —- এক আধুনিক যন্ত্রনগরীর জ্বালাযন্ত্রণা, দুঃখ-ক্রোধ হতাশা- আনন্দ সবই বিধৃত সেলুলয়ডের ফিতেই। মূল কথা হল, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ঋত্বিক ঘটক কলকাতার পচাগলা শরীরে যে রাজার মুকুট আটা ছিল, সেটাকে টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে ফেলেন। সে কারণে ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ আসলে কাঞ্চনের কলকাতা-দর্শনই শুধু নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে ঋত্বিক বারবার কলকাতার অন্তঃসারশুন্যতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ঋত্বিক ঘটকের আড্ডার স্বপ্নবাজ বন্ধু সলিল চৌধুরী। (চলবে)