অনলাইন ডেস্ক : আজ প্রবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের আমেজে ব্যস্ত মানুষ কুরবানি নিয়ে। আর কুরবানি ঈদের খাবার মূল উপাদান মাংস। প্রায় সব বাসাতেই এই দিনে বিভিন্ন পদ রান্না হয় মাংসের। সেই সঙ্গে চলে অন্যান্য পদ। ঈদের দিনে খাওয়া একটু বেশি হয়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই। তবে খাওয়া দাওয়ায় সাবধান হতে হবে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সংবাদমাধ্যমে ঈদের দিন খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ দিন বিভিন্ন রোগে ভুগছেন; যেমন পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনি বা লিভারের রোগ। এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণও যাদের আছে, তাদেরও সতর্ক থাকা দরকার।

খাবারের পরিমাণ: কুরবানির মাংস পরিমাণে একটু বেশিই খাওয়া হয়। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে। গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত রোগীদের সমস্যাটা হয় আরও বেশি। পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাদ্য গ্রহণ না করার কারণে অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। কিছু কিছু খাবার তিন বেলা না খাওয়াই ভালো। যেমন তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি; আমিষজাতীয় খাবার যেমন খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি। ঈদে পানীয় হিসেবে লেবুর শরবত, বাসায় বানানো ফলের রস, ডাবের পানি, বোরহানি, ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

স্ট্রোক ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত: স্ট্রোক ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগীরা তৈলাক্ত মাংস কমিয়ে খাবেন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে যে ধরনের নিয়মকানুন তারা সারা বছর পালন করেন, ঈদের সময়ও সেভাবে চলা উচিত। কুরবানির মাংস একটু–আধটু বেশি খেলে শরীরের যে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তা নয়, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের ওজন বেশি, তাঁদের অবশ্যই ঈদের সময় অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করতে হবে। ইউরিক অ্যাসিড বেশি যাদের এবং যারা কিডনির সমস্যায় ভোগেন, তাদের সাধারণত প্রোটিনজাতীয় খাবার কম খেতে বলা হয়।

সারাদিন খাবার খেতে হবে সতর্ক হতে: দিনের শুরুতেই অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। সকালে হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। অনেকেই সকালে সেমাই খান যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের বাড়তি সতর্ক হতে হবে মিষ্টি খাবারের ক্ষেত্রে।

যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন। হজমেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো। বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাবার। বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিশার ও পাইলসজাতীয় রোগ আছে, তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে। এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণও হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন।

যাদের আইবিএস আছে, তারা দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না। এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি খান। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন।

যেকোনো পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কুরবানির সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত। গরু বা ছাগলের মাংসকে এককথায় বলা হয় লাল মাংস বা রেড মিট। লাল মাংস প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস, শরীরের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও শরীরের গঠনে যার ভূমিকা অপরিসীম। তবে লাল মাংসের যেমন উপকার আছে, তেমনি রয়েছে অনেক ঝুঁকিও। এতে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট; যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত। এগুলো শরীরের ওজন বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, ডায়াবেটিস–সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার; যেমন কোলন ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ার আশঙ্কা থাকে। যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খাওয়া যেতে পারে।