অনলাইন ডেস্ক : আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসরাইল সরকার আমিরাতের সঙ্গে এ চুক্তি করে। এ ছাড়া অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গেও চুক্তি স্বাক্ষরের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ইসরাইল।
আমিরাতের পরে যেসব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের গোপন সম্পর্ক রয়েছে সেসব আরব দেশ প্রকাশ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তিতে আসতে পারে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে বাহরাইন, ওমান, মরক্কো, সৌদি আরব ও কাতার।
জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক প্রকাশ্য ও আনুষ্ঠনিক করার বিষয়ে পরবর্তী আরব দেশ বাহরাইন হবে আশা করা হচ্ছে।
চ্যানেল ১২ এর প্রতিবেদনের বরাতে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, গোয়েন্দা বাহিনী প্রধান (মোসাদ) ইয়াসি কোহেন গত সপ্তাহের শেষে বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সালমান আল খলিফার সঙ্গে কথা বলেছেন। বাহরাইনের বাদশাহর মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শনিবার বাহরাইনের বাইরে একটি ‘ব্যক্তিগত সফর’ করেছেন।
এদিকে সংযু্ক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টর বিশেষ উপদেষ্টা জার্ড কুশনার বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ঘোষণা আগামী দিনগুলোতে হবে।
আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলের চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বাহরাইনের বাদশার কূটনৈতিক উপদেষ্টা এক টুইট বার্তায় সংযুক্তর আরব আমিরাতকে স্যালুট জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আরেক আরব দেশ ওমান লাইনে রয়েছে। আবুধাবির চুক্তি নিয়ে মাস্কটের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে ইসরাইল-আমিরাতের চুক্তিতে সমর্থন জানানো হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের ঐতিহাসিক চুক্তির বিষয়ে সুলতানাতের (ওমান) সমর্থন রয়েছে।
বলা হচ্ছে, নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনের আগেই ওমান সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিতে আসতে পারে।
কুশনার বলছেন, অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর পর সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
আমিরাত-ইসরাইল চুক্তি সম্পর্কে শনিবার কোনো বিবৃতি দেয়নি সৌদি আরব।
এ দিকে ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ডেভিড ইগাতিউস জানিয়েছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় যেসব মুসলিম দেশ তার সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে মরোক্কো, ওমান ও বাহরাইন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইল ও ইহুদি প্রশ্নে অনেক নমনীয় ভূমিকায় আছে মরোক্কো।
ফিলিস্তিন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিক শান্তিচুক্তি বা পরিকল্পনার সমর্থক দেশটি। গত ফেব্রুয়ারিতে গুজব ওঠে পশ্চিম সাহারায় মরোক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।
বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের ব্যাপারে অনেক বেশি খোলোমেলা অবস্থানে সৌদি আরব। ইসরায়েলের ব্যাপারে ওমান, আমিরাত ও বাহরাইনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত কয়েক বছরে ইসরাইল প্রসঙ্গে খোলামেলা অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরাইলিদের সৌদি ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই সময় এক ইসরাইলি ব্লগারকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল রিয়াদ।
১৯৯০ সাল থেকে কাতারের সঙ্গে ইসরাইলের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর কাতারে বাণিজ্য দফতর খুলেছিল ইসরাইল। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি চালু ছিল। ২০০৭ সালে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিজিপি লিভানি কাতারের আমির শেইখ হামাদ বিন খালিফা আল থানির সঙ্গে নিউ ইয়র্কে বৈঠক করেছিলেন। ২০১৭ সালে সৌদির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর নিজ দেশের মধ্যে ইসরাইলি সমর্থকদের সংখ্যা বাড়িয়েছে কাতার।
বৃহস্পতিবার আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যাস্থতায় একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই চুক্তির আওতায় ইসরাইল পশ্চিম তীরে যেসব অঞ্চল সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে, সেসব ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে।
তবে এ চুক্তির পর ফিলিস্তিন সরকারসহ অধিকাংশ মুসলিম বিশ্ব এটিকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।