মনজুরুল হক : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিউইয়র্কে লকডাউন চলাকালে বন্ধ তিন মাসের বেশি সময় বন্ধ ছিল বাংলাদেশি আমেরিকানদের মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট। নিউইয়র্ক ধাপে ধাপে খুলে দেওয়ার ফলে আবার চালু হয়েছে এসব রেস্তোরাঁ। চুল কাটার সেলুনসহ রিটেইল স্টোরগুলোও খুলেছে। তবে রেস্তোরাঁ খুলতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন মালিকেরা। কর্মী সংকট ও সামাজিক দূরত্ব মানার শর্তসহ নতুন পরিচালনা পদ্ধতি বিপাকে ফেলেছে ব্যবসায়ীদের। বিক্রিও বেশ কম।

স্বদেশি রেস্তোরাঁর অধিকাংশ মালিক করোনাকালে কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্তোরাঁয় অধিকাংশ কর্মচারী কাজ করেন ক্যাশ বেতনে। করোনার দুর্যোগকালে সরকার থেকে ডিজাস্টার লোন ও পিপি লোন দেওয়ার ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ রেস্তোরাঁর মালিক এর কোনোটিই পাননি। কারণ সরকারি রেকর্ডে তাঁদের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে ক্যাশ বেতন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক রেস্তোরাঁর মালিক আইআরএসকে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে কর্মচারীদের বেতন দিয়েছেন ক্যাশে। কর্মচারীরাও আয় না দেখানোর জন্য নগদ অর্থ নিয়েছেন মজুরি হিসেবে। অনেক কর্মচারীর বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদেরও ক্যাশে বেতন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়েজের সঠিক কাগজপত্র না দিতে পারায় তাঁদের ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ ডিজাস্টার ও পিপি লোন পেলে এ লোনের বেশির ভাগ ফেরত দিতে হতো না। যেসব রেস্টুরেন্টের মালিক যথাযথ কাগজপত্র জমা দিতে পেরেছেন, তাঁরা সরকার থেকে সহায়তা পেয়েছেন। যদিও এ ধরনের রেস্তোরাঁর সংখ্যা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে খুব বেশি নেই।

এদিকে বিগত চার মাসের ভাড়া জমে গেছে। রেস্তোরাঁর ঘরের মালিকেরা চাপ দিচ্ছেন ভাড়া দেওয়ার জন্য। মোটা অঙ্কের ভাড়া আটকে যাওয়ায় মালিকেরা কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
অন্যদিকে রেস্টুরেন্ট আংশিক খুললেও বেচাকেনা তেমন একটা নেই।

জ্যাকসন হাইটসের ঢাকা গার্ডেনের মালিক মো. ইদ্রিস জানান, ‘আমি অন্য মালিকের হাত থেকে রেস্তোরাঁ বুঝে নিয়েছি কয়েক মাস হলো। এর মধ্যে করোনার দুর্যোগ। ক্ষতির হিসাব মেলাতে পারছি না। কী করব তাও বুঝতে পারছি না। সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি।’

ব্রঙ্কসের খলিল বিরিয়ানি অ্যান্ড চায়নিজের মালিক মো. রহমান বলেন, ‌‘এই দুর্যোগে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কমিউনিটির লোকজন যদি আবার রেস্তোরাঁয় আসে তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’

জ্যামাইকার হিলসাইডে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি সেলুনের মালিক বলেন, নতুন নিয়মে কাস্টমারদের বসাতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবেন কর্মচারীরা। এসব নিয়মসহ ব্যয় সামাল ও ঘর ভাড়া দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কর্মচারী সংকট তো আছেই।