অনলাইন ডেস্ক : প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ও তার ৩৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে আরও দশটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রত্যেক মামলায় পি কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে। অপর দিকে পিকে হালদারের সহযোগী ৪৫ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে দুদক।

মঙ্গলবার ( ৯ মার্চ) দুপুরে দুদক সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুদক সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. এর এমডি মো. রাশেদুল, ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবেদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এম,এ হাশেম এবং বোর্ড সদস্যগণ অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে যাচাই বাছাই ছাড়াই ঋণের বিপরীতে কোন মর্টগেজ গ্রহণ না করে ১০ টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিকগণকে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।

এই বেনিফিসিয়ারীগণ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আত্মসাৎকৃত অর্থ পরবর্তীতে বিভিন্ন লেয়ারিং এর মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তি হিসাবে উক্ত অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন পূর্বক পাচার করেন। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ ও দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অভিযোগে মোট ৩৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক ১০ টি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতিটি মামলায় রিলায়েন্স লিজিং ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি, কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের তালিকায় সম্পর্কে সচিব জানান, দ্রিনান এ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রোপাইটর ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টার প্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জী, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নূরুল আলম, পরিচালক মোঃ নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান, পরিচালক এম এ হাশেম এবং অপর পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম, পরিচালক জহিরুল আলমসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সচিব আরো বলেন, পি,কে হালদারের সহযোগী ৩৩ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারীর অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শীঘ্রই এদের বিরুদ্ধে সম্পদ নোটিশ জারী করা হবে। এছাড়া, পি,কে হালদারের সহযোগী ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ ৪৫ জনের ইমিগ্রেশন বন্ধ চেয়ে ইমিগ্রেশন অথরিটির কাছে পত্র দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিকে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি কানাডায় পলাতক রয়েছেন।

ইতিমধ্যে তথ্য প্রমাণের সাপেক্ষে কমিশন পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে তথা তাকে সহযোগিতায় ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করেছে। এদিকে এ বছরের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। এর আগে ৫ জানুয়ারি পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাঁরা যাতে বিদেশ না যেতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি তদন্তের প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন অনুসারে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।