লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র : করোনায় লণ্ডভণ্ড কমিউনিটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বশেষ অমানবিক পদক্ষেপেরও ধাক্কা লেগেছে। গত ২৫ জুন ৮৩ বাংলাদেশিকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়ার পর আরো দেড় শতাধিক প্রবাসীকে আরিজোনায় জড়ো করার খবর এসেছে। দালালকে মোটা টাকা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে এরা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত রক্ষী কর্তৃক গ্রেফতারের সময়েই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

এলডিপির কয়েকজন বাদে সকলেই নিজেকে বিএনপি অথবা যুবদল কিংবা ছাত্রদলের সংগঠক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এসাইলাম অফিসারের কাছে ইন্টারভিউ শেষে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সকলকে। এরমধ্যে বেশ ক’জন প্যারলে মুক্তি লাভে সক্ষম হলেও অবশিষ্টরা ইমিগ্রেশনের ডিটেনশন সেন্টারেই রয়েছেন।

অর্থাৎ মোটা অর্থে এটর্নি নিয়োগের পর ইমিগ্রেশন কোর্টের শর্ত অনুযায়ী জামিনের বন্ড দিতে সক্ষম হননি তারা। এমনি অবস্থায় করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় ডিটেনশন সেন্টারের আরো অনেক অবৈধ অভিবাসীর সাথে বাংলাদেশিরাও পড়েছেন মহাসংকটে। যারা এটর্নি নিয়োগে সক্ষম হয়েছিলেন তারা এই করোনার মধ্যেই প্যারলে মুক্তি লাভ করেছেন। করোনার প্রকোপ চরমে উঠলে এপ্রিলের শুরুতেই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল কোর্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকশত অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদেরকে কোর্টে হাজিরার তারিখসহ নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে ঐ সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরমধ্যে কোন বাংলাদেশি ছিলেন না। কারণ, বাংলাদেশির অধিকাংশকেই টেক্সাস অথবা আরিজোনা কিংবা আলাবামা স্টেটে রাখা হয়েছে। খুব কমসংখ্যক রয়েছে নিউজার্সি এবং ফ্লোরিডা ডিটেনশন সেন্টারে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মেক্সিকো সীমান্ত পথে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারিদের এসাইলামের আবেদন প্রথম ইন্টারভিউতে বিবেচিত না হলেই দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার একটি রুলিং ২৫ জুন ইউএস নবম সার্কিট আপিলেট কোর্ট দিয়েছেন। এতে সেন্ট্রাল আমেরিকার লোকজনের সাথে কিছু বাংলাদেশীও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের একটি অংশ অর্থাৎ ৮৩ জনকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন আরো ১৫০ জনকে যে কোন সময় বিমানে উঠিয়ে দেয়া হবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট সকলের জাতীয়তা নিশ্চিত হতে হবে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে।

দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমদ ৩ জুলাই এ প্রসঙ্গে জানান যে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে প্রায় সময়েই আটক বাংলাদেশীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়। তারা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা সেটিও নিশ্চিত হতে চায়। ইতিপূর্বে ৮৩ জনকে বহিষ্কারের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কোন চিঠি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, আগের সপ্তাহে বহিষ্কার করাদের মত এরাও নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা এবং রাজশাহী অঞ্চলের সন্তান। একেকজন ২৫ থেকে ২৮লাখ টাকা করে দালালকে দিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। পথিমধ্যে অতিরিক্ত খরচও হয়েছে খাবার অথবা অন্য কোন বিশেষ প্রয়োজনে। এদের প্রায় সকলেই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার কথা বলে এসাইলাম প্রার্থনা করলেও অধিকাংশই ছিলেন বেকার এবং পৈত্রিক সহায়-সম্পদ বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রে রওয়ানা দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না এটর্নি নিয়োগসহ মামলা পরিচালনার অন্যান্য খরচের অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায়। যাদের তেমন সামর্থ্য ছিল তারা অনেক আগেই প্যারলে মুক্তি পেয়ে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে কাজে যোগদান করেছেন।

নিউইয়র্কের এটর্নি মঈন চৌধুরী এসব বাংলাদেশি প্রসঙ্গে বলেন, ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কঠোর নীতির কারণে এসাইলাম পাবার সম্ভাবনা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে যারা মেক্সিকো হয়ে বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন তাদেরকে প্রথম ইন্টারভিউতেই এসাইলাম অফিসারকে কনভিন্স করতে হয় যে, দেশে ফিরিয়ে দিলে নির্ঘাত মৃত্যু অথবা বর্বরোচিত আচরণের ভিকটিম হতে হবে ক্ষমতাসীন সরকার অথবা সরকার দলীয় মাস্তানের হাতে।

ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা এই এটর্নি মঈন চৌধুরী আরো বলেন, এজন্যে অনেকের মামলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নভেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত। ঐ নির্বাচনে ডেমক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হলেই সকল জট অপসারিত হবে বলে আশা করছি।

অপর এটর্নি অশোক কর্মকার বলেছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার কেউই আমার ক্লায়েন্ট ছিলেন না। আমার ক্লায়েন্টের সকলেই নিরাপদে আছেন। কারণ, তারা পরবর্তী শুনানীর তারিখ পেয়েছেন।

সুুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ রুলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসাইলামের পেন্ডিং আবেদনগুলোর ভাগ্য বিবর্ণ বলে কোন কোন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। সেটি একেবারেই সঠিক নয় বলে এই দুই এটর্নি উল্লেখ করেন।

তারা বলেছেন, ঐ রুলিংয়ের ভিকটিম তারাই হবেন বা হচ্ছেন, যারা বেআইনি পথে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর এসাইলাম অফিসারকে কনভিন্স করতে সক্ষম হননি যে, দেশে ফিরিয়ে দিলেই তারা বর্বরতার শিকার হবেন। এটর্নিরা উল্লেখ করেন, যাদের আবেদন বিচারাধীন রয়েছে তারা ঐ রুলিংয়ের আওতায় পড়বেন না। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই।