হিমাদ্রী রায়
আমি আমার মায়ের জন্মদিন জানি না
মাকে তাঁর জন্মতারিখ জিজ্ঞেস করলে
অবাক হয়ে শুধু বাংলা সনের কথা বলতেন।
প্রয়াণ দিবস ছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময়ে
মাকে খুব করে মনে পড়ে
একুশের ভোরে
একুশের প্রথম প্রহরে মা যেন আমায়
উষ্ণতায় জড়িয়ে রাখে
বাতাসে ঝরে মিঠে আদর
মমতার শিশির ছড়ানো রাজপথ আমায় ডাকে।
রক্তমাখা কৃষ্ণচূড়া উড়ায় মায়ের চিতার ছাই
বুকের মধ্যে কারা যেন বুনে দেয় বেদনার সুর
গায়ে মাখি ভাষার আতর
মা মা গন্ধ যেন পাই।
আমার মাকে ভজন কীর্তন ছাড়া গাইতে শুনিনি
স্বরবিতান কি মা তা জানতেন না
অথচ তাঁর বেঁধে দেয়া সুর আমার চেতনা
আমার বোধ আমার কন্ঠের ধ্বনি।
আমার শিল্পী মায়ের ঠোঁট থেকে সেই ভাষার গান
টুপ করে এসে যেদিন পড়লো আমার ঠোঁটে
সেদিন থেকে আমার বাংলায় মুখ ফুটে
বাংলায় আমার বর্ণ পরিচয় মায়ের প্রেরণার দান।
বছরের ঐ একটি দিন চোখের জল
বীররসে কান্না হয়ে নেমে আসে
জাত-ধর্ম, কাছের-দূরের যত বিভেদ বর্ম
ভেঙে ফেলে এক স্রোতে মেশে
অদৃশ্য ঐক্যের ভেলায় মায়ের ভাষায় ভাসে।
তাই একুশ এলে মায়ের কথা শ্রদ্ধায় আমি স্বরি
মায়ের-ভাইয়ের রক্তে রাঙানো বক্ষে আমার ধরি
গভীর সুখে কঁদি আন্তর্জাতিকতায় আনন্দে আমি হাসি
শত সরোবর আর সমুদ্র পারি দিয়ে আমি বাংলায় মনভাসি
ওগো মা তোমার মধুর ভাষা কন্ঠে আমার ধরি
ভাষাই যে আমাদের জন্মচিহ্ন
আমাদের এক জন্মদিন একুশে ফেব্রুয়ারি।