জেমস এ রিসচার, অনুবাদ: কোরবান আলী : (প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে এক অপার শক্তি। এই শক্তিতে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে গেলে একজনের প্রয়োজন একান্তে নিজের ভেতরে প্রবেশ করা, নিজেকে উপলব্ধি করা আর নিজের শক্তি বৃদ্ধির চর্চায় নিজেকে নিমগ্ন করা। মানুষের এই নিমগ্নতা মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা অন্যদের মুগ্ধ করে। ‘স্পিরিচুয়াল লিডারশীপ’ বিষয়ক গ্রন্থের লেখক এবং ‘অর্গানাইজেশন ট্রান্সফরমেশন নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জেমস এ রিসচার সু²ভাবে আলোচনা করেছেন মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই পরম শক্তি নিয়ে এবং কিভাবে এই শক্তিকে ব্যবহার করে সত্যিকারের নেতৃত্ব অর্জন করা যায়। জেমস এ রিসচার এর আলোচনার আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্ব বিষয়টি সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’ এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী।)
ছয়.
সুনির্দিষ্টভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সততা, শুদ্ধতা ও নীতিবোধ বলতে কি বুঝায়? আসলে প্রতিষ্ঠনে নিয়োজিত সকল কর্মীর সততা, শুদ্ধতা ও নীতিবোধের সম্মিলিত রূপকে প্রাতিষ্ঠানিক সততা, শুদ্ধতা ও নীতিবোধ বলে। সকলেই প্রশংসনীয়, কর্যকর এবং সঠিক কাজটি করতে চান। কেউই কাজ করে দোষী হতে চান না। ত্রুটিপূর্ণ, অকার্যকর এবং ভুল কাজ করতে চান না। চারিত্রিক শুদ্ধতা সততা ও নীতিবোধ সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানে সকলেই দায়িত্ব সম্পন্ন হয়ে থাকেন। সততার সাথে কাজ করেন। সকলের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলেই দায়িত্ব ও সততার সাথে কাজ করুক।
প্রাতিষ্ঠানিক সততা শুদ্ধতা এবং নীতিবোধ দলীয় নিয়ম কানুনের উপর জোর দেয়। কিছু প্রতিষ্ঠানে আপনি যদি একজন ক্রেতাকে তার প্রাপ্য আচরণ না করেন তবে অন্যান্য কর্মীবৃন্দ কেবল হাসাহাসি করবেন। ভাববেন আপনি কৌতুক করছেন। আবার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে একই আচরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আপনি কি ভাবে একটা প্রতিষ্ঠানে সততা শুদ্ধতা এবং নীতিবোধ সৃষ্টি করবেন। বলা যত সহজ করা তত কঠিন। নেতাকেই এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। নেতাকে সততা শুদ্ধতা এবং নীতিবোধ চর্চা করতে হবে এবং মানুষকে পালন করার জন্য বলতে হবে। নেতার নীতিবোধ পালন অথবা বর্জন উভয়ই প্রতিষ্ঠানে দ্রæত প্রচার হয়ে যায়। নেতাকে এমন কোন কাজ করা যাবে না যা দ্বারা মানুষ ভুল বুঝতে পারে। নীতিবর্জিত হয়ে লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে নীতিতে অটল থেকে ভুল করা অনেক ভাল।
নীতিবোধ চূড়ান্তভাবে মানুষকে একটা মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি করে: ‘আমার সাথে আমার সততার যে সম্পর্ক সেটা ভাল না প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ভাল?’ যে নেতা প্রথমটি বারবার বেছে নেন তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা পান আবার সততাও বজায় রাখতে পারেন। আর যিনি দ্বিতীয়টি পছন্দ করেন তিনি দুটিই হারান। যখন আপনি নীতিবর্জিতভাবে চলবেন তখন প্রথমটি বেছে নেয়া খুব সহজ হবে না।
কেউ কেউ মনে করতে পারেন প্রাতিষ্ঠানিক সততা শুদ্ধতা ও নীতিবোধের প্রশ্ন তখনই আসে যখন প্রতিষ্ঠান কোন সমস্যায় পরে। কিন্তু এ কথাও মনে রাখা জরুরি যে আপনি যদি নিয়মিত মেঝে পরিষ্কার না করেন তবে এটি আরও ধুলোবালি সংগ্রহ করবে। প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিচ্ছন্ন না রাখার প্রবণতাই প্রতিষ্ঠানকে সমস্যায় ফেলবে। নেতা হিসাবে আপনার করণীয় হচ্ছে এমন একটা সংস্কৃতি সৃষ্টি করা যা প্রাতিষ্ঠানিক সততা শুদ্ধতা ও নীতিবোধ সমুন্নত রাখার তাগিদ দেবে। নীতিবোধ প্রতিষ্ঠানে অন্য যে কোন কাজ করার ভিত্তি নির্মাণ করে।
১০. ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি ও পূর্ণতা
একজন পরিবর্তনক্ষম নেতা একনিষ্ঠভাবে একটা সাধারণ দর্শন প্রতিষ্ঠানের সকলের কাছে তুলে ধরেন যা একটি আত্মনিবেদিত শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং পৃথিবীর মানুষের জন্য একটা কল্যাণকর ফলাফল বয়ে আনে। বাইরে থেকে একটা প্রতিষ্ঠানকে কতকগুলো পাগলের আখড়া মনে হতে পারে যারা একটা ফলাফল বের করে আনার জন্য অবর্ণনীয়ভাবে আত্মনিবেদিত এবং প্রতিশ্রুতিশীল। এ ধরণের একটা প্রতিষ্ঠানে একে অন্যের প্রতি গভীর সম্মানবোধ বজায় থাকে। তারা ব্যক্তিগত শক্তিকে কাজে লাগান যা প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আত্মত্যাগ বৃদ্ধি পায়।
এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আপনি কত টাকা আয় করলেন সেটি বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে আপনি কোন কাজটি সম্পন্ন করলেন যা ব্যক্তিগত প্রতিশ্রæতি, ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি এবং ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি দ্বারা তাড়িত। কাজ আপন গতিতে চলে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা, উদ্দীপনা, ফীডব্যাক, সফলতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ইত্যাদি দ্বারা কার্যক্রমগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলমান।
ব্যক্তিগত পূর্ণতার জন্য কাজ। পৌরাণিকভাবে বলা হয়ে থাকে ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগতই এবং কাজ কাজই – এ দুটি কখনো একাকার হয়ে যায় না। কিন্তু বাস্তবে কাজ এবং ব্যক্তিগত বিষয়াদি একসূত্রে গাঁথা। একজন মানুষ হিসাবে আমরা কী চাই এবং প্রতিষ্ঠান কী চায় এদুটি বিস্ময়করভাবে একই রকম। নিচের ছকে এদু’টি মিলের নমুনা দেখানো হলো:
ব্যক্তির প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন
জীবন যাপনের অবলম্বন আর্থিক সফলতা এবং মুনাফা
ব্যক্তিগত সফলতা প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা
ব্যক্তিগত নির্দেশনা কার্যকর নির্দেশনা
পূর্ণতার অভিজ্ঞতা দর্শন বাস্তবায়নে সফলতা
সমাজ এবং সহযোগিতার অভিজ্ঞতা কার্যকর যোগাযোগ এবং সহযোগিতা
আনন্দ এবং সজীবতা জীবনী শক্তি, সংশক্তি
কাজের স্বীকৃতি ও সমর্থন কর্মীর আত্মত্যাগ ও প্রতিশ্রæতিশীল আচরণ
ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি প্রাতিষ্ঠনিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন
ব্যক্তিগত সফলতা প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা
প্রতিষ্ঠানকে যদি ইমারতের সাথে তুলনা করা হয় তবে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানুষগুলো হচ্ছেন এক একটি ইট। একজন পরিবর্তনক্ষম নেতা খুব ভালোমতো জানেন যে ব্যক্তিগত পূর্ণতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য সবসময় গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে এ দুটোকে এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত করা যাতে একে অপরকে সমর্থন যোগায়, উপরে তুলে ধরে। ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধিকে উপেক্ষা করার অর্থ প্রতিষ্ঠানের শক্তির একটা প্রধান উৎসকে বন্ধ করে দেয়া। যা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্ব কখনোই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ফাঁদে পড়তে চান না। তারা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রতিটি মানুষকে এমন একজন ব্যক্তির সাথে তুলনা করেন যে ব্যক্তি ব্যক্তিগত পূর্ণতা এবং সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেন। তারা ধরে নেন মানুষ নিজের উন্নয়নের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। তারা মানুষকে তার ব্যক্তিগত যোগ্যতা এবং কাজের গুরত্ব ভেদে দ্বায়িত্ব দিয়ে থাকেন। তারা মানুষকে নিজের প্রয়োজনের সাথে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনকে মিলিয়ে দেখতে এবং এ দুটির মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে সহযোগিতা করেন।
ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির জন্য কাজ। ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি এমন একটি যান যাতে চড়ে মানুষ যাচাই করতে শেখে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন সে কী মাত্রায় পূরণ করছে? এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ব্যক্তিগত উন্নয়নকে সমর্থন দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যক্তিগত শাখাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে ভাবতে উৎসাহিত করে।
প্রতিষ্ঠান মানবিক বিকাশের কেন্দ্র। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানে ঢোকার পূর্বেই তোমার সমস্ত আবেগ এবং ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ঝেড়ে ফ্যালো। আসলে এক্ষেত্রে তাদের বলা উচিৎ ছিল, ‘দেখুন আমরা এখানে একে অপরের সাথে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবো। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিষয় আসতেই পারে। কাজের সময় আমরা সে সমস্ত বিষয় পাশ কাটিয়ে যাবো। আসুন আমরা একটা উপায় খুঁজে বের করি যাতে করে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিষয়াদিও আলোচনা করতে পারি।’ অর্থাৎ সমস্যাকে দীর্ঘায়িত না করে সমস্যা সমূলে বিনাশ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
যখন কোন প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করে তখন এর ফলাফল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয় কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিমন্ডলে ব্যাপক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়। দুটি কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটে। এক. এ ধরনের পরিবেশ এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যা প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করে। কারণ প্রতিষ্ঠানে পূর্ব থেকেই একটা প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকে যা ব্যক্তিগত এবং আবেগঘন জটিলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্দ জানেন পারস্পরিক সমস্যা সৃষ্টি হলে আলোচনার মাধ্যমে তা দ্রæত সমাধান করা দরকার। এ প্রক্রিয়াটি প্রাতিষ্ঠানিক উত্তেজনা এবং ক্ষতির কারণগুলোকে অনেকাংশে কমিয়ে আনে। দুই. প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধি মানুষকে সক্রিয় করে তোলে, নিজেদের অস্তিত্বের জন্য ব্যক্তিগত দ্বায় দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়, মানুষ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হয়। যখন একজন ব্যক্তি এ ধরনের ভূমিকা পালন করে তখন প্রতিষ্ঠান প্রাণ ফিরে পায়, কর্মমূখর হয়ে উঠে এবং প্রতিষ্ঠান দীর্ঘস্থায়ী হয়। মানুষ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যে কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকে। প্রতিষ্ঠানের দর্শন বাস্তবায়নে সর্বশক্তি প্রয়োগে প্রস্তুত থাকে।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য এক ধরনের নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। এর জন্য অবশ্যই এমন নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই যারা বলবেন, এখন থেকে মিটিং-এ সকলে খোলামেলাভাবে নিজেদের মতামত তুলে ধরবেন। এক্ষেত্রে এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন যা প্রতিষ্ঠানে মানুষের নিরাপত্তা এবং সহযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম। নেতাকে ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে। উদাহারণ সৃষ্টি করতে হবে। নিজেকে ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে আপনি যে ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এ সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতি সভায় আলোচনা করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং এর মূল্য ও গুরত্ব আলোচনা করতে পারেন। মানুষ নিজেকে নিরাপদবোধ করে, এটি নিশ্চিৎ হতে হবে। তারা নিজেরাও অকপটে আবেগঘণ, রূঢ় সত্য কথাটি নিঃসঙ্কোচে বলতে পারবেন, চাকুরী চলে যাবার ভয় থাকবে না।
যখন একজন পরিবর্তনক্ষম নেতা ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে কথা বলেন তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। এ ধরনের নেতা যে কথাগুলো বলে থাকেন নিচে তার কিছু নমুনা উল্লেখ করা হলো:
১. আমি একজন পুরো ত্রিমাত্রিক মানুষ। প্রতিষ্ঠানের বাইরেও আমার একটা জীবন আছে। আপনাদেরও আছে।
২. আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনকে অত্যন্ত গুরত্বের সাথে বিবেচনা করি।
৩. আমদের মতো আপনিও একজন রক্ত-মাংসের মানুষ ।
৪. এটি একটি প্রতিষ্ঠান এবং এখানে আসার সময় আপনার সম্পূর্ণ সত্তা সাথে আনেন, আপনার সত্তার কিছু সুনির্দিষ্ট অংশ নিয়ে আপনি কাজে আসেন না ।
৫. আপনি আপনার নিজের জীবনের জন্য দ্বায়বদ্ধ এবং এই দ্বায়বদ্ধতা নির্বাহের জন্য আমরা আপনাকে সাহায্য করবো।
৬. আমরা শুধু চুড়ান্ত ফলাফল বিবেচনা করি না বরং ফলাফল অর্জনের প্রক্রিয়াও বিবেচনা করে থাকি।
৭. আমরা যোগাযোগ, আলাপ-আলোচনা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। আমরা চাতুরতা, বিশ্বাসঘাতকতা, নাশকতা, অসন্তুষ্টি, ভুল বুঝানো বা ভুল বুঝা, দ্ব›দ্ব সৃষ্টিমূলক যোগাযোগ, সুবিধাবাদ ইত্যাদি অপছন্দ করি। কারণ এগুলে প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তিকে বিনষ্ট করে।
৮. ব্যক্তিগতভাবে এবং পেশাগতভাবে আমরা প্রতিষ্ঠানকে চালু রাখতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
৯. আমরা আশা করি সমস্যা সমাধানে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে, গুরত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন, সহকর্মীদের সহযোগিতা করবেন। প্রতিষ্ঠানের এবং আপনাদের নিজেদের জীবনকে সফল এবং কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।
১০. পেশাগত সফলতা এবং ব্যক্তিগতভাবে চাহিদা পূরণের জন্য আপনাকে সহযোগিতা করতে চাই।
১১. আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি এবং পারস্পরিক বিশ্বাসবোধ আমাদের একত্রিত রেখেছে, আমরা একত্রে কাজ করছি। এর ফলে আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা কাজ করে আনন্দ পাবো।
ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির উপর গুরত্ব দিতে হবে। আপনি নিজের সাথে এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে যে ভাবে মিথস্ক্রিয়া করে থাকেন তাতে সামান্য পরিবর্তন আনতে পারলেই পারিপার্শ্বিকতায় এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতায় ব্যপক প্রভাব ফেলতে পারবেন।
উপরে উল্লেখিত নেতৃত্বের দশটি বৈশিষ্টই আপনার ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে পারে।
অসাধারণ নেতৃত্বের ক্ষমতা
এখানে আলোচিত নেতৃত্বের বৈশিষ্ট সমূহের প্রত্যেকটির একটি করে আন্তজাগতিক অংশ রয়েছে। প্রত্যেকটিই অসীম অনুভূতি মিশ্রিত। প্রত্যেকটি বৈশিষ্টে কিছু গুণাবলি বিদ্যমান যা প্রতিদিনের বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আপনার প্রতিষ্ঠানের একটা উদ্দীপ্ত দর্শন নির্মাণের জন্য একটা ভিন্ন অনুভূতি প্রয়োজন। দর্শন নির্মাণে ভিন্ন ধরনের কাজের তেমন প্রয়োজন নেই।
পরিবর্তনক্ষম নেতৃবৃন্দ যখন প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব ও শক্তিকে বাস্তবে রূপদান করেন তখন উপরে উল্লেখিত ১০টি বৈশিষ্ট সমূহের উপর ভর করেন এবং এই বৈশিষ্ট সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা তার আচরণ হয়ে বেরিয়ে আসে। মানসিক শক্তি সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য যান্ত্রিক হাতিয়ার বা বিশেষ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। সময় বিভাজন ফর্ম অথবা আর্থিক নিয়ন্ত্রণের ফর্দ (মূল্যবান হাতিয়ার) প্রয়োজন হয় না। কোন যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানসিক শক্তি বিদ্যমান থাকে না। পাথর থেকে পানি যেমন বের করে আনা সম্ভব না ঠিক তদ্রæপ যন্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানসিক শক্তি সৃষ্টি ও বিকাশ সম্ভব নয়।
এখানে উল্লেখিত ১০টি পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্বসুলভ গুণাবলী মানবিক শক্তি বহণ করে। নিত্যদিনের চর্চার মাধ্যমে এ মানবিক গুণাবলি পরিবর্তনক্ষম নেতৃবৃন্দ আত্মস্থ করেন। এ সমস্ত নেতৃবৃন্দই উচ্চ কৃতিত্ব সম্পন্ন মৌলিক সংগঠন নির্মান করতে সক্ষম। তারা সুপ্ত সম্ভাবনাময় মানবিক শক্তি জাগ্রত করতে সক্ষম। কর্মীর মানবিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে প্রতিনিয়ত কাজে লাগাতে সক্ষম। অসাধারণ নেতৃত্ব এ শক্তিকে কাজের সাথে সংযুক্ত করার পথ খুঁজে বের করেন এবং উৎপাদনশীল কজে নিয়োজিত করেন।
১০টি গুণাবলির প্রত্যেকটিই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বসুলভ যোগ্যতার অংশ হিসাবে বিবেচিত। উদ্দীপ্ত দর্শন এবং চিন্তা-চেতনার স্বচ্ছতা উদ্দেশ্য অর্জনে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে এবং অনুভূতির বিকাশ ঘটায়। কম অহংবোধ ব্যক্তিগত সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠানের চুড়ান্ত ফলাফলের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। অবিচ্ছিন্নতা এবং বিশ্বাসবোধ ও খোলামেলা মনোভাব প্রতিষ্ঠানে পারস্পরিক সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানের সমস্যাসমূহ সামাধানের প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখে। মানুষ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং জনসংগঠন নির্মানের দক্ষতা বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ভাবনার পথ প্রশস্ত করে। যার ভিত্তিতে একজন পরিবর্তনক্ষম নেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পরিচালিত করেন প্রতিষ্ঠানের যথার্থ রূপরেখা নির্মাণ ও বাস্তবায়ন করেন। দৃঢ? ইচ্ছা শক্তি এবং সংকল্প প্রতিষ্ঠানকে অগ্রগামী করার গতি সঞ্চার করে। চারিত্রিক শুদ্ধতা, সততা ও নীতিবোধ একটা শক্ত ভিত নির্মাণ করে যার উপর দাঁড়িয়ে ফলাফল বের করে আনা সম্ভব। ব্যক্তিগত পূর্ণতা ও প্রবৃদ্ধি মানুষের ভেতরের প্রয়োজনগুলোর প্রতি মনোযোগী করে তোলে যা প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল বের করে আনার সহায়ক। (শেষ)