অনলাইন ডেস্ক : ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর প্রতিবেদন সামনে আসতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আদানি গ্রুপ। ২৪ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদন সামনে আসার পর থেকে আদানির মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় অর্ধেকে গিয়ে ঠেকেছে। ভরাডুবি হয়েছে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারেও। এশিয়া তথা ভারতের সবচেয়ে বিত্তশালীর পদ থেকেও বিচ্যুতি ঘটেছে গৌতম আদানির। কিন্তু এত কিছুর পরও এই ভারতীয় ধনকুবেরের কাছে এমন কিছু সম্পত্তি রয়েছে, যা তাকে অন্যতম সেরা ধনী হিসেবে চিহ্নিত করে।

২০২০ সালে লুটিয়েন্স দিল্লিতে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে একটি প্রাসাদোপম অট্টালিকা কিনেছিলেন গৌতম। ৩.৪ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই অট্টালিকা আদানি গ্রুপের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভবনগুলোর অন্যতম হিসেবেও পরিচিত। এই অট্টালিকা কিনতে গৌতমকে অগ্রিম ২৬৫ কোটি টাকা এবং বিধিবদ্ধ খরচ হিসেবে আরও ১৩৫ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছিল। এই প্রাসাদ ছাড়াও আদানির গুরগাঁওয়ে একটি বাংলো রয়েছে।

আহমেদাবাদেও একটি অট্টালিকা রয়েছে আদানিদের। এই বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় গৌতম থাকেন। প্রাসাদটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ গৌতম তার সম্পত্তি এবং ব্যক্তিগত সম্পদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পছন্দ করেন। প্রাসাদটি চারপাশে বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা। এর চারপাশে খোলা উঠোনও রয়েছে। স্ত্রী প্রীতি আদানি, দুই ছেলে কর্ণ আদানি এবং জিৎ আদানি এবং পুত্রবধূর সঙ্গে এই বাড়িতে থাকেন গৌতম।

আদানি গ্রুপের দখলে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল প্রাইভেট জেট এবং হেলিকপ্টার। গৌতম প্রধানত তার ব্যক্তিগত জেট বিমানেই বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। তার প্রাইভেট জেটগুলোর তালিকায় রয়েছে ‘বোম্বার্ডিয়ার’, ‘বিচক্র্যাফ্ট’ এবং ‘হকার’ প্রাইভেট জেট। বোম্বার্ডিয়ার প্রাইভেট জেট বিমানটি সর্বাধিক আট জন যাত্রীকে নিয়ে উড়তে পারে। বিচক্র্যাফ্টে চেপে যেতে পারেন ৩৭ জন যাত্রী। অন্যদিকে, হকার জেট বিমানের বহন ক্ষমতা ৫০ যাত্রী। কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে আদানিদের সবচেয়ে সস্তা প্রাইভেট জেটের দাম প্রায় ১৫.২ কোটি।

তিনটি বিলাসবহুল জেট প্লেন ছাড়াও আদানি এন্টারপ্রাইজের মালিকের কাছে তিনটি হেলিকপ্টার রয়েছে। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ‘অগাস্টা ওয়েটল্যান্ড এডব্লিউ ১৩৯’ হেলিকপ্টারে চেপে ভ্রমণ করতে। দুটি ইঞ্জিন চালিত ‘অগাস্টা ওয়েটল্যান্ড এডব্লিউ ১৩৯’ হেলিকপ্টারে একসঙ্গে ১৫ জন যাত্রী বসতে পারেন। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এই যান। হেলিকপ্টার এবং প্রাইভেট জেটের তুলনায় আদানির মালিকানাধীন বিলাসবহুল গাড়িগুলোর তালিকা আরও দীর্ঘ।

আদানির কাছে সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের লাল ফেরারি এবং একটি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ-৭ রয়েছে। এই গাড়ি দুটিই তার তালিকায় থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও গৌতমের সংগ্রহে রয়েছে একটি রোলস রয়েস ঘোস্ট গাড়ি। এই গাড়ির বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। এই গাড়িই তার গাড়িগুলোর মধ্যে সব থেকে মূল্যবান বলে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদানি এন্টারপ্রাইজ প্রায় ১৭টি জাহাজের মালিক। প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিশাল উপস্থিতির কারণে এই জাহাজগুলো ব্যবহার করে আদানি গ্রুপ। জ্বালানি এবং অন্যান্য উপকরণ পরিবহন করতে আদানিরা এই জাহাজগুলো ব্যবহার করে। কিন্তু গৌতমের জাহাজ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয় ২০১৮ সালে। সেই সময় দুটি নতুন কেনা জাহাজের নাম তার দুই ভাগ্নির নামে রাখেন আদানি। এমডব্লিউ ভানশী এবং এমডব্লিউ রাহি। এই দুটি জাহাজ দক্ষিণ কোরিয়ার ‘হানজিন হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন’ তৈরি করেছে।

বিলাসবহুল প্রাইভেট জেট এবং জাহাজগুলো রাখার জন্য ভারতে অনেকগুলো ব্যক্তিগত বিমানবন্দর এবং জাহাজবন্দরও রয়েছে আদানির। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতজুড়ে আদানিদের মোট ১৩টি জাহাজবন্দর রয়েছে। আদানির দখলে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কয়লা খনি কারমাইকেল। আদানিরাই এই কয়লা খনির মালিক। প্রতিবেদনে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার এই কয়লা খনি আগামী তিন দশকের জন্য বার্ষিক ১০ মিলিয়ন টন কয়লা জোগান দিতে পারে।

কিন্তু গৌতমের মালিকানাধীন এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট বলছে, এক দশক ধরে শেয়ারের দরে কারচুপি করে চলেছে আদানি গ্রুপ। আর সেই কারণেই নাকি আদানিদের এত রমরমা। আদানিদের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগও আনে এই সংস্থা। হিন্ডেনবার্গের সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছে আদানি গ্রুপ।

হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জেরে কার্যত ধস নেমেছে আদানি গ্রুপের ১০টি কোম্পানির শেয়ারে। কোনো কোম্পানির শেয়ারে ১৭ শতাংশ পতন হয়েছে, তো কোনো কোম্পানির শেয়ার এক ধাক্কায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

গত বুধবার চলতি অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনেই নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া (এফপিও) বাতিল করে দেয় আদানি গ্রুপ। ২০ হাজার কোটি টাকার ওই এফপিও বাতিলের পর আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর আরও নেমে গেছে।

বাণিজ্য এবং অর্থনীতি বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ফরচুন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৪ জানুয়ারির প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আনার পর থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনে মোট ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪০১ কোটি টাকা) খুইয়েছে আদানি গ্রুপ। সবমিলিয়ে আদানিদের ক্ষতির পরিমাণ আকাশছোঁয়া।