Home কানাডা খবর আগামী বছর খাবারের জন্য অনেক বেশি দাম দিতে হবে : কানাডার ফুড...

আগামী বছর খাবারের জন্য অনেক বেশি দাম দিতে হবে : কানাডার ফুড প্রাইস রিপোর্ট প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২১ সালে কানাডিয়ানদের অনেক নেতিবাচক বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য। এ বিষয়ে নতুন প্রতিবেদন বলছে আসছে ২০২২ সালে এই সমস্যা আরো প্রকট হবে। কানাডিয়ানদের খাবার কেনার জন্য অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।

গত শুক্রবার প্রকাশিত ‘কানাডার ফুড প্রাইস রিপোর্টে’ বলা হয়েছে ২০২২ সালে কানাডার সব নাগরিকের উপর যে বিষয়টি বিরূপ প্রভাব ফেলবে তা হচ্ছে- খাদ্য মূল্য। ইউনিভার্সিটি অব গুয়েলফ ও ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

করোনা মহামারি অন্য সব কিছুর মত খাবারের সাপ্লাই চেইন ব্যহত করেছে, ফলে খাবারের সহজ প্রাপ্যতা নষ্ট হয়েছে। হিট ওয়েভ আর বন্যার মতো প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোও খাবারের উচ্চমূল্যের পেছনে প্রভাব ফেলেছে। মোট কথা এই ঘটনাগুলো মানুষের খাবারের টেবিলে আইটেম কমাতে বাধ্য করেছে।

প্রতিবেদন তৈরির প্রধান গবেষক এবং হ্যালিফেক্সের ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক সিলভান শারলেবোইস বলেন, এ বছর বাজারে গোশতের কাউন্টারের ভ‚মিকা ব্যাপক। এই একটি পণ্যের বর্ধিত দাম সঠিক মূল্যস্ফীতিকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। গত বছরের প্রতিবেদনে খাদ্যমূল্য ৩ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল ৪ সদস্যের একটি পরিবারে খাবারের পেছনে গড়ে ১৩ হাজার ৯০০ ডলার খরচ হতে পারে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন। বছরের শেষ দিকে এসে উচ্চমূল্যস্ফীতি সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। প্রতিটি পরিবারকেই বাড়তি খরচ করতে হয়েছে অথবা খাদ্যপণ্য ক্রয় কমাতে হয়েছে। শারলেবোইস বলেন, আসছে বছর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে একটি সাধারণ পরিবারকে মুদি দোকানের বিল দিতে হবে অতিরিক্ত ৯৬৬ ডলার। এটি কোন সহজ বিষয় নয়। গত ১২ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির এই পূর্বাভাস সর্বোচ্চ। যথারীতি বিভিন্ন ধরনের খাবারের দাম বিভিন্ন হারে বাড়বে। এর মধ্যে দুগ্ধজাত ও বেকড পন্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গোশত ও সামুদ্রিক খাবারের দাম কিছুটা কম বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সার, গো-খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং পরিবহন ও লেবার কস্ট বৃদ্ধির কারণে দুগ্ধজাত পণ্য আরও ব্যয়বহুল হবে। গত মাসেই কানাডিয়ান ডেইরি কমিশন এক বার্তায় সতর্ক করে বলেছে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে দুধের খুচরা মূল্য ৮.৪% বৃদ্ধি করা হবে। অন্যদিকে বেকড পণ্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধিও তীব্র হবে। কেননা এবারের গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে প্রেইরি অঞ্চলে গম ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ব্যহত হয়েছে। এছাড়া এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ হলো-অপচয়। গবেষণায় দেখা গেছে অদক্ষতা আর অসচেতনতার কারণে কানাডায় প্রায় অর্ধেক খাবার নষ্ট হয়।

বিভিন্ন পার্টি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবারের অপচয় দুঃখজনক। একদিকে অনেক মানুষ খাবার কিনতে পারছে না, অন্যদিকে এসব অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন জেগার গরডন। পেশায় একজন শেফ গর্ডন একটি অলাভজনক কার্যক্রম চালু করেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘পে-হোয়াইট-ইউ-কেন’। অর্থাৎ আপনি আপনার সাধ্যমত যা পরেন তা পরিশোধ করে এখান থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারবেন। গরডন বলেন, ‘বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হয় তা দেখে আমি আতঙ্কিত। তাই বাড়তি খাবারগুলো ফেলে দিয়ে অপচয় না করে যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমি এই ব্যবস্থাটি চালু করেছি। এতে অনেকেই নাম মাত্র মূল্যে পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করতে পারছে। বলতে গেলে আপনি এখানে ৫ ডলারের বিনিময়ে ২০ ডলারের পুষ্টিকর খাবার পাবেন।
গরডন বলেন, আগামী দিনে খাদ্যমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের আরেকটি বিলাসিতা বাদ দিতে হবে। সেটি হচ্ছে- এখন দেখা যায় ফলের ঝুড়িতে একটি ফল সামান্য নষ্ট থাকলে পুরো ঝুড়িই ফেলে দেয়া হয়। এটি অবশ্যই বিলাসিতা। এই বিলাসিতা বাদ দিয়ে ঝুড়ি থেকে ভাল ফল বা সবজিগুলো বাছাই করে আলাদা করতে হবে। এতে খাদ্যের অপচয় অনেকটাই কমানো যাবে। এভাবে আমাদের উপায় খুঁজে বের করতে হবে যেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বর্তমান অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি ও ভবিষ্যতে তা আরো প্রকট হওয়ার পূর্বাভাসে অনেক কানাডিয়ান তাদের অভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন। অনেকে চকলেট, আইসক্রিমের মতো বিলাসি পণ্য খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। অনেকে আবার বাড়ির সামনে খালি যায়গায় সবজি বাগান করা শুরু করেছেন। তাদের ভাষ্য সামান্য পরিশ্রমের বিনিময়ে যদি বিনামূল্যে কিছু শাক-সবজি পাওয়া যায় তবে তা মন্দ কি।

কানাডা ফুড প্রাইস রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সালে বিভিন্ন পণ্যের সম্ভাব্য মূল্য বৃদ্ধির তালিকা- ডেইরি ফুড ৬-৮ শতাংশ, রেস্টুরেন্ট বিল ৬-৮ শতাংশ, বেকারি ফুড ৫-৭%, শাকসবজি ৫-৭%, ফল ৩-৫%, গোশত ২%, সামুদ্রিক খাবার ২%, অন্যান্য ২-৪%। মোট মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৫-৭%, যা খাদ্যখাতে কানাডা বাসীর খরচ অনেক বাড়িয়ে দেবে। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version