অনলাইন ডেস্ক : বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তোলার শপথ নিয়েছে দেশের মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে তারা এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি দেশবাসীকে শপথ পড়ান। এ সময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
শপথে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ মুজিববর্ষ ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না; দশকে ভালোবাসব। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’
শপথ পাঠের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদ, জাতীয় চার নেতা এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। শপথ শেষে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী ও দেশের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা ‘মুজিবর’ গানটি যৌথভাবে পরিবেশন করেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছলে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান নূর, প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী তাকে অভ্যর্থনা জানান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেনে। এ সময় তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে সমৃদ্ধির সোপান বেয়ে আজকের বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সব দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছি। যেটা জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দিয়েছিলেন ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।’ আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি নিয়েই সবার সাথে বন্ধুত্ব রেখে আমাদের দেশের উন্নয়নের চাকাকে সচল রেখেছি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছি। এ দেশের সব ধর্মের মানুষ যাতে সমানভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে, সরকার তা নিশ্চিত করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১-এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হব। আজ সেটা আমরা অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মহামারী সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও সরকার করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।’
আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মানীয় অতিথির হাতে তুলে দেন ‘মুজিব চিরন্তন’ বিশেষ শ্রদ্ধা স্মারক। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত দুটি স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়; সম্পাদনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা। আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠান শেষ হবে।