ফরিদুর রহমান : প্রিজনেসের রিসেপশানে পৌঁছাতে আমাদের একটু দেরিই হয়ে গেল। রাজকীয় প্রাসাদের অনেকগুলো সিংহদরজার কোনটি আমাদের প্রবেশের জন্য নির্ধারিত তা কার্ডে লেখা আছে, কিন্তু আমাদের তো সেই পথের দিশা জানা নেই। শেষ পর্যন্ত পথ খুঁজে বের করে ভেতরে যখন বিশাল হল রুমে ঢুকে পড়লাম তখন সম্মানিত অতিথিদের বক্তৃতার পালা প্রায় শেষ। প্রথম দিন সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠানে দুই একজন মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিত দেখা যায়। তবে বিশাল আয়তন হলের কোথাও কোনো সুসজ্জিত মঞ্চ নেই, এমন কি বসার ব্যবস্থাও নেই। টেলিভিশনের স্টুডিওতে যেমন আট ফুট বাই ছয় ফুট আয়তনের এবং এক ফুট উচ্চতার বেদী তৈরি করে একটা রোস্ট্রামে দাঁড়িয়ে কবিতা পাঠ করা হয় তেমনি প্রায় অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে দুই একজন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে দু চার কথায় দেশি বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে এবং প্রিজনেজের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন। সংক্ষিপ্ত এ সব ভাষণের শেষে দীর্ঘ করতালির মধ্যে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর মায়া গটজ্ও কোনো লম্বা চওড়া ভাষণ না দিয়ে সকলকে পানাহারে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন।
উদ্বোধনী সন্ধ্যায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি তো বটেই, উপস্থিত অতিথি অভ্যাগতদেরও নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ফলে সারা হল জুড়ে প্রায় সকলকেই বিচিত্র পোশাক, এমন কি বিচিত্র রূপসজ্জায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল। আমাদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব পোশাক যে কী- তা তো এখনো বুঝেই উঠতে পারলাম না। আমি নিজে পরেছিলাম হালকা সবুজ কালো ডোরাকাটা পাঞ্জাবি, তবে সেটা খুব বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক হিসাবে কেউ গণ্য করেছেন বলে মনে হলো না। কিন্তু জামদানি শাড়ি পরিহিতা আমাদের প্রযোজকের সাথে নারী পুরুষ সকলেই যেভাবে ছবি তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় নারীর পরিধেয় হিসাবে শাড়ি সত্যিই একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পোশাক।
পানাহারের ক্ষেত্রেও এ অনুষ্ঠানে টেবিলে বসে আয়েশ করে নৈশ্য ভোজের কোনো ব্যাপার নেই। পোশাকধারি পরিবেশকের দল কোমল এবং কঠিন তরল পদার্থের গøাস এবং বড় বড় ট্রেতে সাজানো নানা ধরনের সুখাদ্য এবং সাথে আমাদের বিবেচনায় কিছু সংখ্যক অখাদ্য নিয়ে হলময় সার্বক্ষণিকভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট ছোট টুকরো করা ভাজা, সেদ্ধ, ঝলসানো, কাঁচা নানা আইটেমের গায়ে টুথপিক গেঁথে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো পদের জন্যে অবশ্য ছোট পাত্র এবং চামচের ব্যবস্থাও আছে। পরিবেশকের চক্করের মধ্যে যে কোনো ট্রে থেকে পছন্দ মতো খাবার তুলে নিলেই হলো। এ ভাবেই চলতে থাকে প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত। তবে পান ভক্ষণের ব্যাপারে নিজস্ব রুচি পছন্দ মেনে চললেও পার্টি পরিত্যাগের ক্ষেত্রে আমি আমার গুরু ডয়েচ ভ্যালার সাবেক প্রশিক্ষক প্যাট্রিক ডগার্ডির পরামর্শ মেনে চলি। এই মিউনিখেই অনেক বছর আগের এক পার্টিতে তিনি বলেছিলেন, ‘মধ্যরাতে বেশ কয়েকজন যখন মাতাল হয়ে ফোরে গড়াগড়ি শুরু করবে তার আগেই এখান থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে।’ এই ছয় সাতশ নারী পুরুষের হট্টমালার ভেতর থেকে নিজেদের দলের কুড়ি বাইশজনকে কেমন করে একত্রিত করে ঠিকঠাক বাসে বা মেট্রো স্টেশনে তুলে নিয়ে যেতে হবে, তার বুদ্ধিও তিনি শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
আমরা আমাদের যে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনকে গদগদ হয়ে ‘মিলন মেলা’ আখ্যা দিয়ে বেশ একটা পরিতৃপ্তি লাভ করি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে লেখক-কবি কিংবা নাট্যজন বা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কোনো সমাবেশই শেষ পর্যন্ত মিলন মেলা হয়ে ওঠে না, প্রধানত তার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত অনভিজ্ঞতার কারণে। প্রসেনিয়াম ধরণের বসার ব্যবস্থা এবং টেবিলে আসন গ্রহণ করে খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন দেশে দেখা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বা কবিতা উৎসবে দেখা য়ায় ঘুরে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছাকাছি এসে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলার বা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পান। তাছাড়া কোনো বিশেষ অতিথি, মন্ত্রী-সাংসদ অথবা তারকা পর্যায়ের অভিনেতা অভিনেত্রীকে ঘিরে নির্লজ্জ চামচাগিরির ব্যাপার না থাকায় পারসন টু পারসন কম্যুনিকেশন বেশ সহজ হয়ে যায়। সেই কারণে জাপানের এনএইচকে’র অনুষ্ঠান বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সাথে ইকুয়েডর থেকে আসা পাঁচ মিনিটের ডকুমেন্টারি তৈরি করা তরুণের কথা বলতে কোনো সমস্যা হয় না। বিভিন্ন দেশের ফিল্ম মার্কেটিং বিভাগের লোকজন অথবা টেলিভিশন চ্যানেলের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে আলাপ পরিচয় থেকে পরিচিতির পরিধি বিস্তৃত হতে থাকে, অনেক সময় খুলে যায় সম্ভাবনার নতুন দরজা।
রেসিডেন্সের হলের মেঝেতে গড়াগাড়ি শুরু হবার অনেক আগেই ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। এবারে আর পুরো পথ হেঁটে নয়।
মেট্রোতে মিউনিখ হফতবান হফ পৌঁছে দেখলাম রাত বেশি হবার ফলে কানেক্টিং ট্রাম ধরতে হলে মিনিট কুড়ি আপেক্ষা করতে হবে। এই পথটুকু পনের বিশ বিনিট হেঁটেই চলে যাওয়া যায়। পথঘাট একবারেই নির্জন, তবে রাত এগারোটা বাজলেও পথে ছিনতাইকারির হাতে পড়ার ভয় নেই। অতএব রাতের মিউনিখ দেখতে দেখতে হাঁটতে শুরু করলাম।
পরদিন সকালে নাস্তার পরে হাতে একটু সময় ছিল সেই সময় কথা হচ্ছিল উইলির সাথে। আমাদের অবাক করে দিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো, ‘ডকুফেস্ট মুনশেনে তোমাদের ছবি দিয়েছিলে?’ বললাম, ‘না তো, ডকুফেস্ট মুনশেনের নামই তো শুনিনি।’ উইলি জানালো, ‘এটি এখন ইওরোপের সবচেয়ে বড় ডকুমেন্টারি ফেস্টিভ্যাল। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় দশদিনের এই উৎসব। এ বছর গত পনের তারিখে শেষ হয়েছে।’
মনে মনে বললাম, ‘তোমাকে তো মিউনিখের মাস্তান বলে মনে করেছিলাম।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি এতো খবর রাখো কেমন করে? ডকুমেন্টারি বানাও, না ডকুমেন্টারি দেখো?’ বললো, ‘আমি ফিল্ম মেকার না, তবে ‘ডকুফেস্ট মুনশেনের সাথে আছি। অনেক দিন ধরেই ওদের পোস্টার লোগো ডিজাইন, এইসব কাজ করি।’
বললাম, ‘আমরা তাহলে ঠিক জায়গায় এসে পড়েছি।’
উইলি অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই বললো, ‘ইউ উইল বি উইনার ইন প্রিজনেস।’ বাংলা জানলে বলতাম তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক, তা না বলে আমি হেসে বললাম, ‘তুমি তো ভবিষ্যতবক্তা অর্থাৎ জ্যোতিষের মতো কথা বলছো।’
বললো, ‘আমার কথা বিশ্বাস না হয়, পুরস্কার ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করেই দেখো।’
সাড়ে নয়টায় শুরু হলো আগের দিনে দেখা এগারো থেকে পনের বয়সের নন-ফিকশন নিয়ে আলোচনা। মডারেটরের তালিকায় ছিলেন নরওয়ে, উরুগুয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির একজন করে প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আর মডারেটরদের মডারেটর ছিলেন, আর্জেন্টিনার আলদানা দুহালদে। ছোট বড় সতেরটি ছবি নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে শুধু মডারেটরদের আলোচনা সমালোচনা নয়, নির্মাতাদের বক্তব্য, প্রশ্নোত্তর এবং পরিচালকের আত্মপক্ষ সমর্থনেরও ব্যবস্থা ছিল। নির্মিতির দিক থেকে নেহায়েতই সাদামাটা ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ সম্পর্কে প্যানেলের প্রশ্ন ছিল, কতোদিন স্যুটিং করেছি এবং আপত্তি না থাকলে এই প্রামাণ্যচিত্র বানাতে কেমন ব্যয় হয়েছে? আমরা যে দুই দফায় তিন দিন স্যুটিং-এর আধা বেলা বৃষ্টির কারণে ক্যামেরা বের করতে পারিনি, ফলে প্রকৃতপক্ষে আড়াই দিনে কাজ শেষ করেছি সে কথা এদের বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের প্রকৃত খরচও এতোটাই কম ছিল, যে সেটাও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে না। কাজেই একটু বাড়িয়ে বললাম দিন পাঁচেকের স্যুটিং এবং এক সপ্তাহের এডিটিং-এ খরচ করেছি হাজার তিনেক ইওরো! মার্কিন মডারেটর ডেভিড কিম্যানের চোখ কপালে উঠে গেল। একটা ডকুন্টোরি তা যতো ছোটই হোক, প্রায় বিনে পয়সায় কি ভাবে বানানো সম্ভব! মডারেটদের ছয়জনের চারজনই নারী। তাদের কেউ একজন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্নটি করেছিলেন। তাঁর কথা হলো, ‘তোমরা প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্যে এই মেয়েটিকে বেছে নিয়েছিলে কেন?’
আমরা কেন প্রামাণ্যচিত্রের জন্যে তাসমিনাকে বেছে নিয়েছিলাম তার উত্তর এই ছবির ভেতরেই ছিল। এটি তো শুধু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এগারো বছর বয়েসী একটি মেয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও পুরস্কার লাভের কাহিনি নয়। প্রথমত কিশোরী হলেও সে যে একজন নারী এবং তার চারপাশের মানুষ, পাড়া প্রতিবেশী এবং সমাজ প্রতিমুহূর্তেই সে কথা তাকে মনে করিয়ে দেয়। চারপাশের সেই ধর্মান্ধ সমাজ বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে তার সকল পুরুষ প্রতিদ্ব›দ্বীর সাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সমাজের চোখ রাঙানির উত্তরে সে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, ‘আমি ঘোড়া খেলি আমার বাবার ঘোড়া খেলি, তোমাদের তো কিছু বলার নাই।’ এরপর আরো একধাপ এগিয়ে সে বলে, ‘আবার যদি কেউ আমার ঘোড়া খোলায় বাধা দিবার আসে তাহলে তাকে পিটায়ে সোজা করে দিব।’
চারিদিকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যখন হিজাব নিকাব বোরকার অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে, সেই প্রতিক‚ল অবস্থায় দাঁড়িয়ে মেয়েটির সাহসী উচ্চারণ, ‘আমি সকাল বেলা মাদ্রাসায় আরবি পড়তে গেলে মাথায় কাপড় দেই। অন্য সময় মাথায় কাপড় দিতে আমার ভালো লাগে না, তাতে তোমাদের যা ইচ্ছা তাই মনে করো।’ প্রচলিত প্রথা ভেঙে সে স্কুলের কাসে মেয়েদের সারিতে না বসে ছেলেদের সারিতে বসে। তাসমিনার আত্মবিশ্বাস ও সাহসের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে ঘোড়দৌড়ের মাঠে বড় বড় তেজী ঘোড়ার সাথে প্রতিযোগিতায় তার দ্বিধাহীন অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। আমরা একটি কিশোরী মেয়ের অশ্বারোহনের কৃতিত্ব নয় বরং জেলা শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে পুরুষ শাসিত সমাজের অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়ের প্রত্যয় ও প্রথাবিরোধী সাহসের কাহিনি তুলে ধরতে চেয়েছি। মডারেটরদের প্যানেলে আমার বক্তব্য সম্ভবত গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল, যার প্রমাণ আমরা পেয়েছিলাম উৎসবের শেষ দিনে।
একই সাথে অন্তত দুটি ‘ডিসকাশন রুমে’ আলোচনা সমালোচনা চলছিল। অধিকাংশ প্রতিনিধি ইংরেজি ভাষাভাষি হলেও স্প্যানিশ ভাষাভাষিদের জন্য একটি কক্ষ নির্ধারিত ছিল। আলোচনায় আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম। তবে সতেরটি ছবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও সবগুলো ছবির পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না। আবার অনেকেই উপস্থিত থেকেও ভাষাগত সমস্যার জন্যে আলোচনায় সক্রিয় অংশ নিতে পারেননি।
প্রিজনেসে এলে চলচ্চিত্র বা টেলিভিশন মাধ্যমে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেন তাদের মধ্যে পুরোনো পরিচিত অনেকের সাথেই দেখা হয়ে যায়। লাঞ্চব্রেকের সময় তেমনি একজন পুরোনো বন্ধুর মিমি ডাটসনের সাথে দেখা হয়ে গেল। ষোল বছর আগে দেখা কৃষকায় মিমির বিপুল বপু ছাড়া চেহারায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। দেখা হওয়াতে খুবই খুশি হলো, পুরোনা বন্ধু-বান্ধব এবং ডয়েচ ভ্যালার প্রশিক্ষদের ভালো মন্দ খবর পেলাম ওর কাছে। বিশেষ করে আমার স্ত্রীর সাথে পরিচিত হয়ে বললে, আমরা কেউই কখনো ভাবিনি আমাদের আবার দেখা হবে! জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কী নিয়ে এসেছো?’ অবলীলায় উত্তর দিল, ‘আমি তো এখন ডিরেক্টর চিল্ড্রেন্স ইউনিট, নিজে আর কোনো ছবি বা অনুুষ্ঠান বানাই না।’
আমাদের অবশ্য জানাই আছে, শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের আরো অনেক দেশ থেকেই মন্ত্রণালয় বা নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগ থেকে কর্মকর্তারা পদাধিকার বলে বিদেশে ঘুরতে চলে আসেন। সরাসরি নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত তরুণ কেউ যে কোনো উৎসবে যোগ দিলে তার পরিচিতির পরিধি যেমন বিস্তৃত হয় তেমনি নতুন নতুন নির্মাতার সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ফলে তার মেধা ও মননের যে বিকাশ ঘটে তার কোনো তুলনা হয় না। এ ছাড়া নতুন চিন্তা ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে এইসব তরুণেরা উৎসাহের সাথে সৃষ্টিশীল নির্মাণে যুক্ত হতে পারে। কিš‘ আমাদের আমলা নির্ভর সমাজে আমরা খুব বেশি দূর ভাবতে পারি না। অবশ্য শুধু আমলাদের দোষ দিয়েই বা কি লাভ! এবারের প্রিজনেসে আসা বাণিজ্যিক চ্যানেলের প্রতিনিধিদের কাউকেই তো কোনো প্রদর্শনীতে দেখা যায়নি।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে পরে মিলিয়ে অনুষ্ঠান সূচিতে মোট বারোটি কাহিনি চিত্র ছিল। কান্তির কারণে কফি খেতে বের হবার ফলে গোটা তিনেক মিস করেছি। তবে সারা দিনে দেখা ছবিগুলোর মধ্যে দুটি ছবির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। প্রথমটি যুক্তরাজ্যের ‘স্লিপিং লায়ন্স’ এবং দ্বিতীয়টি ইরানের ‘দ্য স্কেলেটন’। মিয়া নামের পনের বছর বয়সের কিশোরী পরিবারের ভেতরেই যৌন হয়রানির শিকার হয়। বিষয়টি সে গোপন রাখতে চেষ্টা করে। কিš‘ যখন তার ছোট বোনটিকে নিয়ে একই ধরনের আশঙ্কা দেখা দেয় তখন সে সিদ্ধান্ত নেয়, আর চুপ করে থাকা চলবে না। যৌন হয়রানির মতো একটি জটিল সামাজিক ট্যাবু অত্যন্ত কৌশলে তুলে আনা হয়েছে মাত্র ১৬ মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চল”িচত্রে। ইরানের ‘দ্য স্কেলেটন’ ছবিতে স্কুলের একদল ফুটবল প্রিয় কিশোর একদিন মাঠে যাবার পথে একটি কঙ্কাল খুঁজে পায়। প্রত্যেকেই সেই কঙ্কাল নিজের কাছে রাখতে চায়। কেউ কেউ সেটা খুলে ভাগ করে নেয়ারও প্রস্তাব করে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কঙ্কালটাকে তারা স্কুলের নাটকে কাজে লাগায়। নতুন বিষয় বস্তু উদ্ভাবন, হাস্যরস সৃষ্টি এবং একদল কিশোরেব চমৎকার অভিনয়ের কারণে অনেকদিন মনে রাখার মতো একটি ছবি ‘দ্য স্কেলেটন’।
প্রিজনেসের ঐতিহ্যবাহী সকার ম্যাচ শুরু হবে বিকেল সাড়ে সাতটায়। সে জন্যে খেলতে আগ্রহী ফুটবলার, চিয়ার গার্ল-চিয়ার বয়েজ এবং দর্শকদের বিকেল সাতটায় হোটেল বিবাদির সামনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে যাত্রা শুরু হবে সদলবলে। ফুটবল ম্যাচ শেষ হবার পরে একই ভ্যেনুতে বিয়ার পার্টি। আমার দুর্বল চরণযুগল নিয়ে খেলতে না গেলেও খেলা দেখতে এবং পার্টিতে যোগ দিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে তার আগে একবার ঘরে ফেরা দরকার। অতএব বিকেলের সেশন শেষ হবার সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়লাম। (চলবে…)