ফরিদুর রহমান : ‘সিটি অফ সায়েন্স এ্যান্ড আর্টসে’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে ভ্যালেন্সিয়া শহরে উৎসবের আর কোনো প্রদর্শনী বা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া হয়নি। প্রতিদিন সকালে উঠে হোটেল মেরিন আতারাজানাসে নাস্তা করে নিজেদের ইচ্ছে মতো এখানে সেখানে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। দুপুরের পরে ‘মিছে’ উৎসবের গাড়িতে একের পর এক ছোট ছোট শহরে চলে যাই। সে সব শহরে বন্দরে নানা আনন্দ আয়োজন, সেমিনার, ফিল্ম শো এবং স্থানীয় নগর কর্তাদের দেয়া নৈশ্যভোজ শেষে অনেক রাতে ঘরে ফিরে আসি। এই কদিনে ছোট ছোট শহর নগর ছাড়াও, এ্যাকুরিয়াম, মিউজিয়াম, সমুদ্র তীর এবং প্রতœতাত্তি¡ক ধ্ব দেংসাবশেষ দেখে এলেও গত ভ্যালেন্সিয়া শহরের উল্লেখযোগ্য কিছুই দেখা হয়নি।
হোটেল থেকে মূল ফেস্টিভ্যাল ভ্যেনুতে যাবার পথে এক জোড়া রেল লাইন পার হতে হয়। কাজেই মেট্রোরেলের স্টেশনটা চেনাই ছিল। ট্যুরিস্টদের জন্য বিশেষায়িত ভ্যালেন্সিয়া কার্ড থাকলে ট্রেনে বাসে মেট্রোতে টিকেট কিনতে হয় না। দুই একবার বাসে উঠলেও ভ্যালেন্সিয়ার মেট্রো চলাচলের ব্যবস্থাটা অদেখাই থেকে গেছে। সকাল সাড়ে নয়টায় মেট্রো স্টেশনে এসে নগর কেন্দ্রের দিকের মেট্রোতে উঠে পড়লাম। ইওরোপের প্রায় সর্বত্রই মেট্রো চলাচলের ব্যবস্থা একই রকমের। কাজেই ভাষা না জানলে বা পথ ঘাট সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকলেও সহজেই গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। মেট্রো ট্রেনের ভেতরে তেমন যাত্রী নেই, প্রায় জনশূন্য কামরায় দুবার আসন বদলে শেষ পর্যন্ত পছন্দসই জায়গায় বসে পড়লাম। ওরা ট্রেনের ভেতরটা এতো পরিস্কার রাখে কেমন করে আমার কাছে সে এক বিস্ময়। পুরো কামরা ঝকঝক করছে, কোথাও এতোটুকু ধুলো ময়লা, বাদামের খোসা, চিপসের প্যাকেট নেই!
সবচেয়ে কাছের স্টেশন মারিটিম সেরেরিয়া থেকে উঠে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলতে চলতে কয়েক স্টেশন পরে এক সময় পাসেও ডি লা আলামেদা এসে নেমে গেলাম। ভ্যলেন্সিয়ার শহরতলী আলামেদায় এসে বুঝলাম ভ্যালেন্সিয়া নগরের কেন্দ্রে পৌঁছাবার আগেই নেমে পড়েছি। নেমেই যখন পড়েছি তখন কিছুটা ঘুরে দেখতে ক্ষতি কী। আলামেদায় আমার ক্যামেরায় প্রথম ছবি তোলার সময়েই দেখালাম মেমোরি কার্ড ফুল দেখাচ্ছে। ৩২ গিগা বাইটের মেমোরি কার্ড এরই মধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে! মানুষের মাথায় কত টেরাবাইট স্মৃতি ধারণ করা সম্ভব তা আমার জানা নেই, কিন্তু ভ্যালেন্সিয়ার সব স্মৃতি মাথায় করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও তা পরে দেখা বা কাউকে দেখানো কোনোটাই সম্ভব হবে না। হোটেলের রুমে মেমোরি কার্ড আছে, কিন্তু এখন তো আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। অতএব হেনার সোনি সাইবার শট ভরসা করে পথে নামলাম।
![](https://i0.wp.com/www.banglakagoj.com/wp-content/uploads/2021/12/Bk-8-6.jpg?resize=696%2C464&ssl=1)
পথের দৃশ্য ভ্যালেন্সিয়ার আশে পাশে সব জায়গায় ঘুরে ফিরেএকই ছবি দেখছি বলে মনে হয়। রাস্তায় ফুলের কেয়ারি, ফুটপাথের গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে পরিপুষ্ট কমলা, এখানে সেখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশিষ্টজনদের প্রস্তর মূর্তি। আমরা একটি ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের ছবি তুলছি দেখে এক সদাশয় বৃদ্ধ এিেগয়ে এলেন। কথা বুঝতে না পারলেও বুঝলাম আপত্তি না থাকলে তিনি আমাদের যুগল ছবি তুলে দিতে চান। উত্তম কোনো প্রস্তাবে আর আপত্তি কিসের! তাঁর হাতে ক্যামেরা দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। দু তিনটি ছবি তোলার পরে তাঁকে আমার স্প্যানিশ বিদ্যায়, ‘পারা তি মুচো গ্রাসিয়াস।’ বলে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দেয়ার পরে মনে হলো যাঁর ভাস্কর্যের সামনে ছবি তোলা হলো তাঁর পরিচয়টা জানা যাক। ভদ্রলোকের নাম রেমন গোমেজ ফেরার, চিকিৎসা বিদ্যা, বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্য ও শিশু অধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্যে তাঁকে ‘ফেবারিট সন অফ ভ্যালেন্সিয়া সিটি’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে ফেরার সাহেব জীবন থেকে ফেরারি হয়ে গেলেও ভ্যালেন্সিয়ার জনগণ তাঁকে মনে রেখেছে। সাদা পাথরের মূর্তিটি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, সেখানে কালো পাথরের দুটি শিশু। বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে হয়।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে তুরিয়া নদীর উপরে আলামেদা সেতু পর্যন্ত এগিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। তুরিয়া সম্ভবত গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য কোথাও চলে গেছে, শুধু নদীর পাথুরে চত্বর পড়ে আছে। তুরিয়ার তীর থেকে ফিরে আবার মেট্রো ধরে যেখানে এসে নেমে গেলাম সেই স্টেশনের নাম উচ্চারণ করা কঠিন, তবে ইংরেজি এক্স অক্ষরকে ‘শ’ ধরে নিলে মেট্রো স্টেশনের নাম শাতিভা। এখান থেকে মূল সিটি স্কয়ার বা নগর কেন্দ্র মিনিট পাঁচেকের পায়ে চলার পথ। ভ্যালেন্সিয়ার প্রধান আকর্ষণগুলো ছড়িয়ে আছে সিটি স্কয়ারের আশেপাশেই। তবে সিটি স্কোয়ারে পৌঁছাবার আগেই চোখে পড়লো বিশাল শপিংমল। সোজা সেখানে ঢুকে পড়লাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর বড় একটা আউট লেটও আবিষ্কার করে ফেললাম। এরপরে ্স্প্যানিশ ভাষা না জেনেও কেনা হলো মেমোরি কার্ড এবং বাড়তি হিসাবে একটি জ্যাকেট।
অবশ্যই মেমোরি কার্ডের সাথে জ্যাকেট ফ্রি নয়। অনেক দোকান ঘুরে শেষ পর্যন্ত পছন্দ মতো জ্যাকেটের দেখা পাওয়া গেল। কিন্তু জামা কাপড়ের ক্ষেত্রে কিছু কিনতে গেলে সব সময়েই যে সমস্যা দেখা যায়, তা হলো রং পছন্দ হলে সাইজ মেলে না, সাইজ ঠিক হলে রং ভালো লাগে না। আর রং সাইজ ডিজাইন সব কিছু মিলে গেলে দাম চলে যায় নাগালের বাইরে। খুব বেশি পছন্দ না হলেও নেভি-ব্লু রঙের একটা জ্যাকেট কিনে বাইরে দিনের আলোয় এসে দেখা গেল সেটার রং নীলের ধারে কাছেও নেই, একেবারেই কালো, কাকের মতো কালো। অতএব কাকের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কা কস্য পরিবেদনা বেদনা বলে কালো জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম সিটি স্কয়ারের দিকে।
ভ্যালেন্সিয়া সিটি স্কয়ারের অফিসিয়াল নাম প্লাজা দেলা ভার্জিন। এর আশে পাশেই সিটিহল, ক্যাথেড্রাল এং তুরিয়া রিভার ফাউন্টেইন। ভ্যালেন্সিয়ার সিটিহলের রাজকীয় ভবন এবং এর ক্লক টাওয়ার অষ্টদশ শতকের নির্মাণ। তবে পরবর্তী সময়ে পাশাপাশি দুটি ভবনকে একত্রিত করে নতুন রূপ দেয়া হয়েছে। নগরীর প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের এই সদর দপ্তর একই সাথে মিউজিয়াম ও পৌরসভার আর্কাইভ। এখানে সামনে বিস্তুত সবুজ মাঠ এবং রেলিং ঘেরা উদ্যান ছাড়াও দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা থেকে অবিশ্রান্ত ধারায় ঝরে পড়ছে জল। ভবনের সামনের অংশে প্রস্তরের কারুকাজ, দুশ বছর ধরে চলতে থাকা ঘড়ি ও মার্বেলের সিঁড়ি দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় করেন এখানে। আমাদের সময় কম, বাইরে থেকে যা দেখার দেখে চলে এসেছি ভ্যালেন্সিয়া ক্যাথেড্রালে।
রোমান ক্যাথলিক গির্জা ভ্যালেন্সিয়া ক্যাথেড্রালের প্রকৃত নাম সেইন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল এবং সম্ভবত সেই কারণেই পুরো চত্বরের নাম ভার্জিন স্কয়ার। এই উপাসনালয়ের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। মধ্যযুগের শুরুতে কোনো এক সময় এই স্থানেই ছিল ভিসিগথিক স্থাপত্যে নির্মিত একটি গির্জা। স্পেনে মুসলিম শাসনামলে ভিসিগথিক চার্চের জায়গায় তৈরি করা হয়েছিল মসজিদ। খ্রিস্টিয় অষ্টম শতকের শুরু থেকে পঞ্চদশ শতকের শেষ পর্যন্ত প্রায় সাতশ বছরের ইসলামি শাসনের অবসান হবার আগেই ভ্যালেন্সিয়ায় মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে ক্যাথেড্রালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। অর্থাৎ ত্রয়োদশ শতকের শেষ দিকে যখন ভ্যালেন্সিয়ায় মসজিদ ভেঙে গির্জা তৈরি হচ্ছে তখন গ্রানাডায় ইসলামিক আমিরাতের শাসকেরা থাকলেও সারা দেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ খুব একটা ছিল বলে মনে হয় না। পঞ্চদশ শতকের স্থানীয় এবং ইতালিয় শিল্পীদের আঁকা অসংখ্য পেইটিং-এ সমৃদ্ধ ক্যাথেড্রালের দেয়াল। ক্যাথেড্রালে প্রবেশ পথে বরো জন সন্তের মূর্তির সু² কারুকাজ এবং অভ্যন্তরের বেদী ও সাজসজ্জা দেখে অনুমান করা যায় অসাধারণ মেধা সম্পন্ন শিল্পী ও কুশলী কারিগরদের প্রতিভা একত্রিত করতে সে সময়ের ধর্মীয় এবং রাজকীয় প্রভুরা কোনো কার্পণ্য করেননি।
সেইন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চত্বরের ঠিক সামনেই তুরিয়া রিভার ফাউন্টেইন তুরিয়া নদীর প্রতীকী উপস্থাপন। একটি প্রায় বৃত্তাকার বেদীর সবচেয়ে উপরের স্তরে অধিষ্ঠিত রোমান দেবতা নেপচুন। তিনি বেশ আয়েশী ভঙ্গীতে হেলান দিয়ে বসে আছেন আর তাঁর ব্রোঞ্জের মূর্তির সকল দিক থেকে জলের প্রবাহ অঝোর ধারায় নেমে আসছে নিচের স্তরে। নিচের স্তরটিতে আটটি নগ্ন নারী মূর্তির কলস থেকেও ঝরছে জল। ভ্যালেন্সিয়ার কৃষিক্ষেত্রে তুরিয়া নদীর অবদান এবং সেচ ব্যবস্থাকে মহিমান্বিত করে এই ১৯৭৬ সালে নির্মিত এই স্থাপত্য এখন ভ্যালেন্সিয়ার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণে পরিনত হয়েছে। আমরা কিছুক্ষণ প্রবহমান প্রপাতের পাথরের বেষ্টনীতে বসে সময় কাটালাম। মাঝে মাঝেই পানির ছিটেফোঁটা এসে শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছিল।
দুপুরের দিকে এসে ঢুকলাম ভ্যালেন্সিয়া সেন্ট্রাল মার্কেটে। এটা কী কাঁচা বাজার নাকি ডিপার্টমেন্ট শপ বুঝতে পারিনি। বিশাল এলাকা জুড়ে একই ছাদের নিচে শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ-মাংস এবং ব্রেড বাটার থেকে শুরু করে এমন কোনো খ্যাদ্য বস্তু নেই যা এখানে মিলবে না। খাদ্য ছাড়াও হাড়ি পাতিল, রান্নার সরঞ্জাম, মশলাপাতি, ক্রোকারিজ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বাজার আসলে খাদ্য ও খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত জিনিসপত্রের বাজার। আলু -বেগুন, কপি টমেটো শশা, সবকিছুর দাম লেখা বোর্ড দাঁড়িয়ে আছে খুঁটির মাথায়। কষ্ট করে দাম জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই। ঘুরে ফিরে বুঝলাম কলা ছাড়া সব ধরনের ফলের দাম আমাদের বাজারের চেয়ে কম এবং সব ধরনের সবজির দাম আমাদের বাজারের চেয়ে বেশি। দু একজন দোকানি সম্ভবত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমরা কিছু কিনবো কিনা। আমি ‘গ্রাসিয়াস’ ‘গ্রাসিয়াস’ বলে হেসে বিদায় নিলেও মনে মনে বললাম, রান্না করে খাবার ব্যবস্থা থাকলে তোমাদের ঝকঝকে বেগুন এবং লাল টুকটুকে টমেটো সত্যিই কিনে নিয়ে যেতাম।
জুরি কমিটির মিটিং শুরু হবে তিনটা থেকে। ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর আগেই মাহবুবা বেগম হেনাকে জুরি কমিটির সদস্য তালিকাভুক্ত করে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং ‘মিছে’র প্রকাশনাতেও জুরিদের ছবিসহ পরিচিতি ছাপা হয়ে গেছে। আমাদের ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ প্রতিযোগিতায় না থাকার কারণে তার বিচারকের আসনে বসতে কোনো অসুবিধা ছিল না। কাজেই দ্রুত হোটেলে ফিরেই আবার ছুটতে হলো ভ্যালেন্সিয়ার মূল ফেস্টিভ্যাল ভ্যেনুতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার তেমন কোনো কাজ না থাকায় কিছুক্ষণ হোটেলে শুয়ে বসে থেকে গেলাম চূড়ান্ত অনুষ্ঠানের মহড়া দেখতে। অসংখ্য ছোট বড় রঙিন হাতির সমাবেশ ঘটেছে মহড়ার জায়গায়। এ ছাড়া নানা বয়সের ছেলে মেয়ে, মিউজিক ও মিউজিক ডিরেক্টার, কোরিওগ্রাফি এবং কোরিওগ্রাফার মিলিয়ে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড। অতএব মহড়া না দেখে পূর্ণাঙ্গ অনুষ্ঠানের অপেক্ষা করাই ভালো মনে করে হোটেলে ফিরবো ভাবছিলাম। এ সময় কোনো টেলিভিশন চ্যানেলের প্রযোজক, ক্যামেরাম্যান এসে পাকড়াও করলো।
আমার চেহারা দেখে ওরা বুঝে ফেলেছিল এ বেচারা নিশ্চয়ই ভিনদেশি এবং খুব সম্ভব ইন্ডিয়ান! আবারো পরিচয় দিয়ে বলতে হলো, ভারতের কাছাকাছি, তবে ভারতীয় নয়। ‘মিছে’ ফেস্টিভ্যাল নিয়ে আমার গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতার কথা সংক্ষেপে বলতে বলেছিল প্রযোজক। একটু ভেবে নিয়ে দুই থেকে আড়াই মিনিটে আমার কথা শেষ করার পরে প্রযোজক মেয়েটি খুব অবাক হয়ে বললো, ‘তুমি যা বলেছো তাতে আমার কিছু এডিট করতে হবে বলে মনে হয় না।’ এবারে নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, ‘দীর্ঘদিন তোমার মতো আমিও ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি। তাই কারো বক্তব্য সম্পাদনা করা যে কী যন্ত্রণার তা আমি জানি।’ মেয়েটি খুশি হয়ে বললো, ‘সো-উই আর বার্ডস অফ সেইম ফেদার! তোমার সাথে পরিচিত হয়ে আমার খুব ভালো লাগছে।’
আমি সম্মানিত জুরি মাহবুবা বেগম হেনাকে উদ্ধার করতে ফেস্টিভ্যাল ভেন্যুতে পৌঁছালে দেখা গেল সে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। বললাম, ‘তুমি তো হোটেলে ফিরে যেতে পারতে।’ বললো, ‘আমার মনে হয়েছে আমি ঠিক রাস্তা চিনে ফিরতে পারবো না। তাই দেরি করছিলাম।’
হোটেলে ফেরার পথে জুরি কমিটির অভিজ্ঞতার কথা শুনলাম। ইংরেজি স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান মিলিয়ে এক বারো মিশালি কথপোকথনের ভেতর থেকে সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে। ইতালিয়ান অভিনেত্রী মারিয়া জুরি কমিটির সভাপতি, এ ছাড়া স্প্যানিশ, কিউবান, পোলিশ, ভারতীয় এবং বাংলাদেশি মিলিয়ে নানান দেশি মুনিদের নানা মতামত নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমেই পুরস্কারের জন্যে ছবির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ভাগ্যক্রমে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির যে ক্যাটাগরি নিয়ে জুরিদের মিটিং ছিল সেখানে ছবির সংখ্যা ছিল মাত্র আঠারোটি। ফলে সংখ্যা এবং সময় মিলিয়ে নির্বাচনটা খুব কষ্টসাধ্য হয়নি।
হোটেলে ফিরে বেশি সময় আলসেমি করে কাটাবার সুযোগ ছিল না। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের জন্যে আবার বেরোতে হবে। চলবে…