অনলাইন ডেস্ক : পুলিশের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই গ্রীষ্মে কানাডার সবচেয়ে বড় শহরটিতে পুলিশের হাতে জব্দ হওয়া বেশিরভাগ অপরাধে ব্যবহৃত বন্দুক দেশের বাইরে থেকে এসেছে।
এর মধ্যে, ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র অ-নিয়ন্ত্রিত, ১১টি নিয়ন্ত্রিত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে এবং ৫৫টি নিষিদ্ধ ছিল (নিষিদ্ধ ম্যাগজিনের সাথে জব্দ করা দুটি নিয়ন্ত্রিত আগ্নেয়াস্ত্রসহ)। নিষিদ্ধ অস্ত্রগুলো কানাডায় কেনা, বিক্রি বা রাখা বৈধ নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাচার করা হয়েছে। আরও পিছনে তাকালে, জানুয়ারি থেকে @TPSGunsSeized-এ পোস্ট করা ১১৬টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৮৪টি নিষিদ্ধ, ২০টি নিয়ন্ত্রিত এবং ১১টি অ-নিয়ন্ত্রিত ছিলো। এটি গত বছর জানুয়ারি থেকে আগস্টের শেষের মধ্যেকার তুলনামূলক হিসাব। সে সময় জব্দ করা ১৩৮টি বন্দুকের মধ্যে ৯৮টি কানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিলো।
চলতি বছর টরন্টো পুলিশ ৪৫টি গেøাক বন্দুক জব্দ করেছে যা টরন্টোর অপরাধীদের কাছে খুব পছন্দের। জব্দকৃত গেøাক বন্দুকের মধ্যে আটটি সিয়ার সুইচসহ পাওয়া গেছে। এটি অবৈধ আফটারমার্কেট মোডিফিকেশনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা বন্দুক যা আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তলগুলোকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করে গড়ে তোলা হয়। এ ছাড়াও স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন এবং ব্রাজিলিয়ান বন্দুকনির্মাতা টরাস বেশ জনপ্রিয়।
উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এবং পুলিশিং ও জননিরাপত্তা বিষয়ক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর স্কট বø্যান্ডফোর্ড বলেছেন, রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার ক্রমবর্ধমান সহজলভ্যতা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের জন্য একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমি যখন ১৯৮২ সালে পুলিশিং শুরু করি, তখন রাস্তায় কারো বন্দুক নিয়ে যাওয়ার কথা শোনা খুব বিরল ঘটনা ছিল। সে সময় অপরাধে ব্যবহৃত বন্দুকগুলো সাধারণত লম্বা নলা বিশিষ্ট হত।’
আমরা এখন এমন পর্যায়ে আছি যেখানে পিস্তল, রিভলবার এবং হ্যান্ডগান অপরাধীদের পছন্দের অস্ত্র।
ব্লান্ডফোর্ড তিন দশক পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মতে, স্থল সীমান্তের খাড়া দৈর্ঘ্য এবং টহল ছাড়া উপক‚লরেখা কানাডায় আমেরিকান আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানকে একটি প্রায় অপ্রতিরোধ্য ঘটনা করে তুলেছে। খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয় যেখানে সারনিয়ায় ড্রোন ব্যবহার করে বন্দুক পাচার করা হয়েছিলো, বলেন ব্লান্ডফোর্ড।
তিনি বলেন, সীমান্তের সব জায়গায় টহল দেয়া সম্ভব নয়, আর এসব বন্দুকের চালান বড় পরিমানেও আসে না। একটি দুটি করে এনে সীমান্তের ওপাড়ে লুকিয়ে রাখা হয়। ফলে সহজেই সুযোগ বুঝে পাচার করা যায়।
নিষিদ্ধ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১০ পয়েন্ট ৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট ব্যারেল সহ হ্যান্ডগান, ছোট ব্যারেলের রাইফেল ও শটগান, বা বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র যেমন- একে-৪৭, এআর-১৫ এবং এমপি৫। অবৈধভাবে পরিবর্তিত অস্ত্র এবং অতিরিক্ত ধারণক্ষমতার ম্যাগজিনও নিষিদ্ধ।
নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রগুলোতে সাধারণত সব হ্যান্ডগান অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং অ-নিয়ন্ত্রিত শ্রেণীর উপরে অতিরিক্ত লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগ শটগান এবং অ-নিয়ন্ত্রিত রাইফেল অন্তর্ভুক্ত থাকে।
গত মাসে জননিরাপত্তা মন্ত্রী মার্কো মেন্ডিসিনো এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী মেলানি জোলি সংসদীয় অনুমোদনকে পাশ কাটিয়েছেন হ্যান্ডগান আমদানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। হ্যান্ডগানের বিক্রয়, স্থানান্তর এবং মালিকানা সম্পূর্ণভাবে কমিয়ে আনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
জননিরাপত্তা মন্ত্রী মার্কো মেন্ডিসিনোর মুখপাত্র অড্রে চ্যাম্পুক্স বন্দুক অপরাধ হ্রাস করার জন্য সরকারের আগ্নেয়াস্ত্র কৌশলকে একটি সাধারণ জ্ঞান পদ্ধতি হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সীমান্তে এবং অবৈধ পাচার দমনের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ৩৫০ মিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে সরকার। ২০১৯ সাল থেকে সীমান্তে বিনিয়োগ ৩৫ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। আমাদের সরকার জানে যে আমাদের অবশ্যই সমস্যাটির মূলে সমাধান করতে হবে, বলেন ওই মুখপাত্র।
এই বছরের শুরুর দিকে, পুলিশ প্রধানরা কমন্স পাবলিক সেফটি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন যে, নিষেধাজ্ঞা পুলিশের পক্ষে খুব একটা কাজে আসেনি। রেজিনা পুলিশ প্রধান ইভান ব্রে বলেন, আমাদের তৈরি করা বেশিরভাগ আইন বন্দুক নিয়ে অপরাধ করে এমন লোকেরা অনুসরণ করবে না। আমাদের কানাডায় হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং দুঃখজনকভাবে আমাদের এখনও হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হচ্ছে।
টরন্টোর ডেপুটি চিফ মাইরন ডেমকিউ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ৮৬ শতাংশ অপরাধে ব্যবহার হওয়া বন্দুক কানাডায় পাচার করা হয়েছে।
ব্ল্যান্ডফোর্ড বলেছেন, আইনি বন্দুকের মালিকদের একটি আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক হওয়ার জন্য যাচাই-বাছাইয়ের কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বৈধ বন্দুকের মালিকরা হ্যান্ডগান বা লং-রাইফেলই হোক না কেন, তারা সম্ভবত দেশের সবচেয়ে আইন মেনে চলা নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন। তারা সমস্যা নয়। সূত্র : ন্যশনাল পোস্ট