অনলাইন ডেস্ক : স্কুল বোর্ডের ইসলামোফোবিয়া বিরোধী কৌশলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অন্টারিওর একজন অভিভাবক। তিনি অভিযোগ করেন যে, পড়ানোর সময় একজন শিক্ষক বর্ণবাদী কার্টুন প্রদর্শন করেছেন এবং এ সময় ওই শিক্ষক আলাদাভাবে তার ছেলেকে টার্গেট করেছিলেন। কারণ সে ক্লাসের মধ্যে একমাত্র মুসলিম শিক্ষার্থী ছিলো।
গত জানুয়ারির ক্লাস চলাকালীন দেশের পিল অঞ্চলের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিতর্কিত ফরাসি ম্যাগাজিন চার্লি হেবডো থেকে আন্তর্জাতিক স্নাতক শিক্ষার্থীদের কাছে সেন্সরশিপের একটি মডিউলের অংশ হিসাবে দুটি ব্যঙ্গচিত্র উপস্থাপন করেন। এ সময় ওই শিক্ষক কার্টুনের স্টেরিওটাইপিক্যাল প্রকৃতির কথা না বলে — যা মুসলিম, ইহুদি এবং কালো স¤প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করেছে — ২০১৫ সালের চার্লি হেবডো হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে ম্যাগাজিনের অফিসে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি হামলা চালিয়েছিলো এবং এতে ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।
অন্টারিওর ওই অভিভাবকের মতে তার ছেলে ক্লাসে একমাত্র মুসলিম হওয়ায় শিক্ষক নির্দিষ্টভাবে তাকে ডেকেছিলেন এবং তিনি ছবিগুলোকে আপত্তিকর বলে মনে করেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করেছেন। ওই ছাত্র জবাবে হ্যাঁ বলেছিলেন। তারপরে তার জিজ্ঞাসার ধরণ বদলে গণহত্যা সম্পর্কে ওই ছাত্রের মতামতের দিকে মোড় নেয়।
আমি প্রায় দুঃখ এবং অসহায়ত্ব অনুভব করছিলাম, ছাত্রের বাবা রহিম কাসাম সিবিসি নিউজের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন। কারণ স্কুলে খেলাধুলা করার সময় আহত হওয়ার বিপরীতে আপনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এটি এমন কিছু যা তাদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করেছিল। এটি এমন কিছু যা চাইলেই সারিয়ে তোলা যায় না।
পিল ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের একজন মুখপাত্র সিবিসি নিউজকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্র, তার পিতামাতা, স¤প্রদায়ের সদস্য এবং অন্যান্য ছাত্রদের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরে শিক্ষককে অভিযুক্তকরা হয়েছে।
মুখপাত্র বলেছেন, বোর্ড তার ইসলামোফোবিয়া বিরোধী কৌশলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং স্কুলে ছাত্রদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং কল্যানকে সমর্থন করার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা, পদক্ষেপ এবং সহায়তা অবিলম্বে প্রদান এবং প্রয়োগ করা হয়েছে।
ঘটনাটি যে মাসে স্কুল বোর্ডের ইসলামোফোবিয়া বিরোধী কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল সেই একই মাসে ঘটেছিল। এর মধ্যে শিক্ষকদের তাদের নিজেদের অন্তর্নিহিত পক্ষপাতমূলক প্রবণতা সনাক্ত করার প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত।
ঘটনার পর কাসাম জানুয়ারিতে আবার পরে এপ্রিলে স্কুলের অধ্যক্ষের সাথে দেখা করেন। তার মতে, অধ্যক্ষ দ্বিতীয় বৈঠকে স্বীকার করেছেন যে ক্লাসরুমে ঘটনার সময় ইসলামোফোবিয়া এবং কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী বর্ণবাদ ঘটেছে।
উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণবাদ বিরোধী শিক্ষার অধ্যাপক নাভেদ বাকালি বলেছেন, শিক্ষকরা একটি নির্দিষ্ট স¤প্রদায়ের একজন ছাত্রকে ডাকতে পারেন কারণ তাদের একটি ধারণা বা অন্তর্দৃষ্টি থাকতে পারে যা ক্লাসের জন্য উপকারী হবে। বাকালি সিবিসি নিউজকে বলেন, এটা হতে পারে যে শিক্ষকের ক্লাসরুমে এটি আনার ভাল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু তার সেই কাছাকাছি আসাকে ভুলভাবে ধরে নেয়া হয় যে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন স¤প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে আর এ জন্যই প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, যোগ করেন তিনি। পিল ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের এন্টি-ইসলামোফোবিয়া কৌশলটি জানুয়ারিতে চালু হওয়ার আগে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছিল।
বোর্ড ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কৌশলটি তৈরি করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করেছিল, যাতে কানাডায় স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের ধারাবাহিকতায় মুসলিম শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা ক্লাসরুমে নিরাপদ বোধ করে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। সেই সময়ে, স¤প্রদায়ের নেতারা বলেছিলেন যে কার্যকর হওয়ার জন্য পরিকল্পনাটিতে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকে কেন্দ্রীভ‚ত করতে হবে এবং অন্যান্য কার্যকর পদক্ষেপগুলোর মধ্যে পাঠ্যক্রমের পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাকালি বলেন যে, শিক্ষকের জন্য সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ সহায়ক হতে পারে, তবে ভুল বোঝাবুঝি এবং অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স¤প্রদায়ের সদস্যদের সাথে বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথোপকথন একটি ভাল পদ্ধতি হতে পারে।
আপনার কাছে এই সব ধরণের পেশাদার উন্নয়ন থাকতে পারে, তবে আপনি যদি স¤প্রদায়ের সাথে বৃহত্তরভাবে সংযোগ স্থাপন না করেন, স¤প্রদায়ের সদস্যদের সাথে যারা সাধারণত শিক্ষাগত জায়গার মধ্যে নীরব থাকে বা মনে করে যে তারা এখানে থাকার উপযুক্ত নয়, তাহলে সেখানে বাধাগুলো রয়েই যায়। সূত্র : সিবিসি নিউজ