অনলাইন ডেস্ক : ইউক্রেনের ওয়েবসাইট বাইনানি ডটকম, বাইনানি টুয়েন্টিফোর ডটকম, বাইনানি, প্রোফি আইকিউ, বাইনানি গো অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়ার আসর শুরু করেছে মাত্র পাঁচ মাস। আর এই সময়ে কোটিপতি সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কলেজছাত্র সাখাওয়াত হোসেন শাওন।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর অভিজাত খুলশী আবাসিকের পারটেক্স ভবনে ৬৫ লাখ টাকায় কিনেছে ফ্ল্যাট। ৩৩ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। যেটি এখন জব্দ পুলিশের হাতে। গত ২১ জুলাই বুধবার দিনগত রাতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে শাওন।
তার তথ্যমতে অভিযানে গ্রেপ্তার হয় চক্রের আরও ৪ সদস্য। এরা হলেন-মনির আহমদ (৪০), আরিফ উদ্দিন (৪০), ফয়সাল খান (৩২) এবং জাবেদ মিয়া (৪০)।
যাদের বিষয়টি বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে পুলিশ কোনমতেই বিশ্বাস করতে পারছে না, এত অল্প সময়ে অনলাইন জুয়া খেলে কোটিপতি হওয়া, গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া কি করে সম্ভব। এমনি অবিশ্বাস ও অজানা বিস্ময়ের রহস্য খুঁজতে খুলশী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলাটির তদন্তভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হাসান ইমাম হোসেন বলেন, শাওন গত পাঁচ মাস ধরে চট্টগ্রামে অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করছে। আর এর মধ্যে শাওন কোটি কোটি টাকার এতসব সম্পদের মালিক হতে পেরেছে? এটা অবিশ্বাস্য। এর পেছনে অন্য কোন রহস্য থাকতে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে জুয়া থেকে যে টাকা আয় হত, সেই টাকা ডলারে রুপান্তর করে ঢাকার এক ব্যক্তির কাছে পাঠাত শাওন। ওই ব্যক্তি পরে বিটকয়েনে রুপান্তর করে ইউক্রেনে আর্ট স্ট্রং নামে এক ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন। তা থেকে বুঝা যায় এই অনলাইন জুয়ার পেছনে ঢাকায়ও বড় ধরণের চক্র জড়িত।
তাছাড়া তার হাত দিয়ে কোটি কোটি টাকা পাচারও হয়েছে দেশের বাইরে। নামে-বেনামে বিভিন্ন সম্পদের পাশাপাশি বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে আসায় মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) আসিফ মহিউদ্দীন।
তিনি জানান, শাওন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার তালগ্রাম এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সে ঢাকার একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। গত পাঁচ মাস ধরে সে চট্টগ্রামে রয়েছে। বাকি চারজন চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার টাকা লেনদেন করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শাওন জানিয়েছে, পশ্চিম খুলশী জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির প্রবেশ মুখে পারটেক্স ভিলেজ নামে বিশালবহুল একটি বহুতল ভবনের নবম তলায় ৬৮ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের আগের দিন সেই ফ্ল্যাটে ফার্নিচারসহ বিভিন্ন মালামাল তোলা হয়। এর আগে চট্টগ্রামে তার দুই মামার বাসায় থাকত শাওন।
এছাড়া শাওন খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদ প্রোপার্টিজ আবাসিক এলাকায় জে- নূর টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাট অফিস হিসেবে ভাড়া নিয়েছে। ৪০ হাজার টাকায় মাসিক ভাড়া হিসেবে শাওনের কাছ থেকে দুই মাসের অগ্রিম ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে ভবনটির কর্তৃপক্ষ।
এজন্য একটি চুক্তিও হয়। চুক্তিটি হয়েছে একজন মহিলার নামে। চুক্তির সময় শাওন উপস্থিত ছিল। জুলাই মাস থেকে অফিস ভাড়া কার্যকর শুরু হয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের আগের অফিসে নামিদামি কিছু ফার্নিচার তোলা হয়। এছাড়া কিছুদিন আগে ৩৩ লাখ টাকায় একটি টয়েটো ব্রান্ডের দামি গাড়িও কেনে শাওন। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় তার আরো সম্পদ থাকতে পারে।
অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ইউক্রেনের ওয়েবসাইট বাইনানি ডটকম, বাইনানি টুয়েন্টিফোর ডটকম নামে দুটি ওয়েবসাইটের লোকাল এজেন্টে শাওন। ৫ মাস ধরে তারা মোবাইলে বাইনানি, প্রোফি আইকিউ, বাইনানি গো অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়ার আসর বসানো শুরু করে। ফেসবুক এবং ইউটিউবে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণদের আকৃষ্ট করে সে। যাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে সে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করে। এমন একটি প্রতারণার অভিযোগের সূত্র ধরে এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান তিনি।