শুজা রশীদ : (পর্ব ৫৭)
কয়েক দিন পর আবার রিমাকে ফোন দিল নোমান। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ভোটের ক্যনভাস করবে। মিলা অন্য কাজে ব্যাস্ত। রিমা কি আসতে চায় ওর সাথে? সাধারণত অফিস ডে-তে বিকালের দিকে মানুষ জনকে হয় বাসায় নয়ত তাদের প্রাঙ্গণে পাওয়া যায়। আবহাওয়াও দারুণ। রিমার জন্য দোকান থেকে বেরিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলে ভালোই হবে। রিমা না করতে পারল না। নোমান বিকালে ওকে দোকান থেকে গাড়িতে তুলে নিল।
আজ ওরা ক্যানভাসিং করতে গেল ওয়ার্ডেন উডস পার্ক কমিউনিটীর ভেতরে একটা অংশে। এই দিকটা মনে হল খুব বেশীদিন বানানো হয়নি। বাচ্চাদের বেশ বড়সড় একটা প্লেগ্রাউন্ড আছে। আর আছে বিশাল একটা রিজার্ভয়ের পুকুর। মানুষ জনের সাথে কথাবার্তা যা বলার নোমানই বলল। খবরের কাগজে রিমার অনেক ছবি ছাপা হয়েছিল মিন্টুর মৃত্যুর পর। বেশ কিছু মানুষ রিমাকে দেখে চিনতে পারল। তাদের সহানুভূতিপূর্ণ কথাবার্তায় রিমার মনটা ভরে গেল।
“দেখেছ, তোমাকে সাথে আনাটা কতখানি বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে,” নোমান ঠাট্টা করে বলে। “তুমি সাথে না থাকলে এই সব মানুষজন তো আমার সাথে কথাই বলত না। ওরা কেউ তোমার রূপ দেখে পটে না গেলেই হল।”
রিমা খিলখিল করে হেসে ওঠে। আলতো ঝিরি ঝিরি বাতাসে ওর চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, মুখের উপর গিয়ে পড়ছে। নোমানকে বার বার ফিরে ফিরে তাকাতে দেখছে। বসন্তের এই বাতাসে কিছু একটা নিশ্চয় আছে কারণ ওর নিজেরও খুব ফুরফুরে লাগছে, মনটা উড়ু উড়ু লাগছে। কেমন একটা প্রেম প্রেম গন্ধ চারদিকে। নোমান কালো একটা স্যুট পড়েছে, আজ শেভ করেছে, চুল উল্টে পেছনদিকে আঁচড়ানো। সুদর্শন লাগছে। এমন একটা দিনে এমন একজন মানুষের সঙ্গের চেয়ে আর বেশী কি কামনা করতে পারে তার মত নিঃসঙ্গ একটি মেয়ে? পুকুরে এক দল কানাডিয়ান গুজের সঙ্গী হয়ে সাঁতরাচ্ছে শ্বেত ধবল এক রাজ হাঁস দম্পতি। নোমান ওকে নিয়ে পুকুরের তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল।
“জায়গাটা খুব সুন্দর,” রাজ হাঁস দুটোর দিকে চোখ রেখে নরম গলায় বলল রিমা।
নোমান মনে হল অতীতে ফিরে গেছে। “কখন পুরানো দিনের কথা ভাবো?” ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে রাজ হাঁস দুটির উপর নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে নোমান।
“না ভাবতেই চেষ্টা করি,” রিমা নোমানের উপর নজর রেখে বলে। “দুঃখের ঘটনাগুলোই বেশি মনে পড়ে। হঠাৎ এই কথা বলছ কেন?”
“এমনি,” নোমান কাঁধ ঝাঁকায়। “আমি সব সময় পুরানো দিনের কথা ভাবি। হয়ত খুব নিঃসঙ্গ সেই জন্য। তোমাকে দেখে আমার হিংসা হয়। তোমার তিন তিনটা অসাধারণ বাচ্চা আছে। আমার কিচ্ছু নেই।”
রিমা হেসে ফেলল। “আমার তিনটা অসাধারণ বাচ্চাদের কাছ থেকে তোমাকে কে দূরে সরিয়ে রেখেছে? আমি রেখেছি?”
“সেই কথা বলিনি,” নোমান লজ্জা পেয়ে যায়। “আমার খুব একা একা লাগে। যাই হোক, ইদানিং ফায়জা আমাকে ঢাকার কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করেছে। হতে পারে সেই জন্যোই হয়ত পুরানো দিনের কথা আরও বেশি বেশি করে মনে পড়ছে।”
“আবার ওর বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছে নাকি?”
“আরোও অনেক কিছু,” নোমান বলল। “কোন কারণে ওর ধারনা হয়েছে আমরা ওর কাছ থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু লুকাচ্ছি। কসম, আমি এমন কিছু বলিনি যেখান থেক ওর এমন কোন ধারনা হতে পারে। মনে হয় বেশি বেশি ভাবছে ঐসব নিয়ে।”
“কি জানতে চেয়েছে?”
“আমাদের কবে দেখা হয়েছিল? কিভাবে দেখা হয়েছিল? কি কি ঘটেছিল? কেন তুমি ওর বাবাকে বিয়ে করেছিলে? কেন তাকে ডিভোর্স দিয়েছিলে। খুটিনাটি সব কিছু।”
“তুমি কি উত্তর দিয়েছ?” রিমা এক ঝলক তাকায় নোমানের দিকে।
নোমান ঘাড় নাড়ে। “চেষ্টা করেছি পরিষ্কার করে কিছু না বলতে। ও অনেক বুদ্ধিমতী। জানে আমি সব কিছু ওকে খুলে বলতে পারবো না। হয়ত সময় হয়েছে তোমার নিজেরই ওকে সব খুলে বলার।”
রিমা মাথা নাড়ল। “আমি ঐ সব দিনগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। ভালো লাগে না। তুমি তখন আমার পাশে ছিলে, শুধু ঐ অংশটুকুই আমার সুখময় স্মৃতি। সত্যিই বলছি!”
নোমান মাথা নুয়ে বো করল। “ধন্যবাদ। যারপরনাই আনন্দিত হলাম এই কথা শুনে।”
রিমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। “তোমাকে কখন বলা হয়নি তোমার কাছে আমি কতখানি কৃতজ্ঞ।”
“বলার কোন প্রয়োজন নেই,” নোমান দ্রæত ওকে থামিয়ে দেয়। “তোমার জন্য যা যা করেছি সব কিছু করেছি আমার নিজের স্বার্থে। করে ভালো লেগেছে।”
রিমা ছদ্ম কোপে ভ্রূ কুঁচকাল। “সব সময় বিনয়ের অবতার!”
নোমান আলতো করে হেসে রিমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাকে যদি আবার দেলোয়ার ভাইয়ের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে কি করবে?”
রিমা নোমানকে পর্যবেক্ষণ করল। “ওর সাথে আমার মুখোমুখি হতে হবে কেন?”
“হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু ধর সে যদি দেখা করতে চায়।”
রিমা সন্দিহান দৃষ্টিতে চায়। “ঘটনাটা কি বলত? তুমি আর ফায়জা মিলে আবার কি ষড়যন্ত্র করছ? এক্ষুণি বল। মিথ্যে বলবে না।”
নোমান মাথা চুলকাল। “ফায়জা তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। আসলে কি ঘটেছিল সেই সব কিছুইতো ও জানে না। ভাবছে হয়ত তোমরা দুজনে আবার পরস্পরের বন্ধু হতে পারবে।”
“আমি আর দেলোয়ার? কক্ষণ না। কিন্তু সারপ্রাইজটা কি?” রিমা জানতে চায়।
“সে মনে হয় টরন্টো আসছে।”
“কি? সত্যিই? তুমি কি করে জানলে?” রিমা দাঁড়িয়ে যায়। “তুমিই কি এইসব ঠিক করেছ?”
নোমান মাথা নাড়ল। “ফায়জা করেছে। আমি দেলোয়ার ভাইয়ের নাম্বারটা ওকে দিয়েছিলাম। ওরা একবার কথা বলেছে, বেশিও বলতে পারে। জিজ্ঞস করিনি। ফায়জাই আমাকে বলেছে সে ওকে আর জিবরানকে দেখতে আসতে চায়। আমার উপর রাগ করলে কর কিন্তু ওর নিজের বাবাকে চেনার অধিকার ওর আছে, তাই না? জিবরানের জন্যও সেটা প্রযোজ্য। ও এখনও বেশ ছোট কিন্তু আর দুই-তিন বছর পরে ও-ও একই প্রশ্ন করতে শুরু করবে।”
রিমা বেঞ্চের চারদিকে কয়েকবার চক্কর দিল। “না, তুমি ঠিকই বলেছ। জানতাম একদিন এই সময় আসবে। ফায়জাকে থামানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।”
“তোমার চেষ্টা করাও উচিৎ হবে না,” নোমান বলল। “বাচ্চাদের জন্য এর ফলাফল ভালোই হবে। দেলোয়ার ভাই মানুষ হিসাবে তত খারাপ নন। কয়েক বছর আগে তার সাথে আমার একবার দেখা হয়েছিল। ডায়াবেটিস হয়েছে, হাই ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল, হার্ট সংক্রান্ত সমস্যাও আছে। সেই আগের মানুষ আর নেই।”
রিমা বড় করে একটা শ্বাস নেয়। “চাইলে সে আমার জীবনটাকে আরোও দুর্বিষহ করে দিতে পারত। সেটা না করার জন্য অন্তত তাকে কিছুটা কৃতিত্ব দিতেই হবে। কিন্তু আমি তার সাথে দেখা করব না। তুমিই সব সামলাবে। ঠিক আছে?”
নোমান মাথা নাড়ল। “যদি সেটাই তুমি চাও। কিন্তু ফায়জা তোমাকে অনেক জোরাজুরি করবে। সুতরাং যদি দেখা করতে না চাও তাহলে যুতসই কোন একটা কারণ বের কর।”
রিমা চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল। দেলোয়ারের নামের সাথে সাথে হাজারটা স্মৃতি এসে ভর করেছে ওর উপর, যার অধিকাংশই খুবই অপ্রীতিকর। ঘড়ির দিকে তকাল। দেরী হয়ে যাচ্ছে। “আমাকে ফিরতে হবে।”
“চল। পরের রোব্বারে আবার আসবে?” গাড়ীর দিকে যেতে যেতে নোমান জিজ্ঞেস করল।
“যদি আবহাওয়া ভালো থাকে,” রিমা বলল। “মিলার কি খবর? ও কি জানে তুমি আর আমি যে ক্যানভাসিং করছি একসাথে?”
“ওর জানার কোন দরকার আছে?”
রিমা কাঁধ ঝাঁকাল। “না, কি দরকার? কিন্তু ওর ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত?”
নোমান এক মুহুর্ত নীরব থাকল। “হ্যাঁ। ওর সাথে আমার কিছু হবে না।”
৮৭
সকালটা যাচ্ছে তাই যাচ্ছে মরিয়মের।
সপ্তাহ খানেক আগে বাড়িটাকে বিক্রীর লিস্টে দেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে দেখে দারুণ লাগছে, ভেতরে ঝকঝক করছে। কিন্তু তারপরও যা ভেবেছিল তার চেয়ে বাজার খারাপ যাচ্ছে। এখন অবধি মাত্র দুজন দেখতে এসেছে। কোন অফার আসেনি।
আজ সকালে এক পার্টির আবার বাড়িটা দেখতে আসার কথা ছিল কিন্তু তারা কোন কারণে আসবে না বলেছে। কি নাকি একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে তারা পিছিয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে সবার মন ভালো করার জন্য শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে সহ কোথাও দুপুরে খেতে যাবার পরিকল্পনা করছিল মরিয়ম, সেই সময় দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। আবুল। এই সময় তার অফিসে থাকার কথা। সে কেন হঠাৎ তার বাসায় এসে হাজির মরিয়ম বুঝতে পারে না। আশা করছে কালাম কিংবা দোলনকে নিয়ে আবার নতুন কিছু হয়নি। যথেষ্ট হয়েছে। ঐ ফালতু হুজ্জত নিয়ে আর একেবারও ভাবতে চায় না ও।
আবুলকে দেখে অসম্ভব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ মনে হল। মুখ শুকনো, ভাব ভঙ্গী অস্থির।
“মরিয়ম, তোকে কিছু একটা করতেই হবে,” প্রায় ফিসফিয়ে বলে সে। চায় না ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ী শুনুক।
“কি হয়েছে আবার?” মরিয়ম সহিষ্ণু কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।
“দোলন স্কারবরো মলে একটা ফুল টাইম কাজ নিয়েছে!” আবুল বলল। “কাউকে কিচ্ছু বলেনি। মা আর বাবা এই কথা শুনে পাগলের মত করছে। আমি ওর সাথে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম- ওর তো ফুল টাইম কাজ নেবার দরকার নেই। কিন্তু ভীষণ ক্ষেপে গেছে আমার উপর। চীৎকার চেঁচামেচি শুরু করল। ঠিক আগের বার যা করেছিল, সেই রকম। আমি ওকে সব সময় সব কিছুতে সমর্থন করেছি। আর এখন আমিই খারাপ মানুষ!”
মরিয়ম একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। ওর বর্তমান মানসিক অবস্থায় এই ঝামেলা নিয়ে ভাবতেও নির্যাতনের মত মনে হচ্ছে। “ভাইয়া, ও যদি ফুল টাইম কাজ করতে চায় বাবা-মায়ের জন্য সেটা সমস্যা কেন? ওর ইচ্ছে ও করবে।”
“তাদের বয়েস হয়েছে। তারা চান ও বাসায় থাকুক, তাদের দেখভাল করুক। আমার পক্ষে একজন গৃহ কর্মী কিংবা নার্স রাখা তো আর সম্ভব না। সারাদিন বাসায় একাকী থাকতে তাদের ভয়ও লাগে। তুই বুঝতে পারছিস না ব্যাপারটা?” আবুল সমর্থনের আশায় ওর দিকে তাকায়।
মরিয়ম শ্রাগ করল। “কি বলব জানি না, ভাইয়া। ও তো বাবা-মাকে কত বছর দেখল। এইবার ওকে বাইরে বেরিয়ে যা করতে চায় করতে দাও। বাবা-মা সামাল দেবে। আমিও তো বেশি দূরে থাকছি না। কোন জরুরী কিছু হলে দশ-পনের মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারব। তুমিও তো মাত্র মিনিট বিশেক দূরে।”
আবুলকে দেখে হতাশ মনে হল। মনে হয় ভেবেছিল বোনের কাছ থেকে কিছু সমর্থন পাবে। সে মাথা নাড়ল। “মরিয়ম, তুই আসল ব্যপারটা ধরতে পারছিস না। এই সব কিছুর জন্য দায়ী হচ্ছে তোর ঐ টিউটর- কালাম। ঐ দোলনকে পেছন থেকে উষ্কে দিচ্ছে, ওকে দিয়ে এই সব কাজ কর্ম করাচ্ছে। দোলন কাজ করলে আমার কোন অসুবিধা নেই কিন্তু ঐ ছেলেটাকে আমি সহ্য করতে পারছি না, ওর ব্যাপারে তোকে কিছু করতেই হবে।”
“ভাইয়া, দোলন তো ছোট মেয়ে নয়। যা করছে ভেবে চিন্তেই করছে।”
“ওর মাথার কোন ঠিক নেই এখন,” আবুল দূর্বল কন্ঠে প্রতিবাদ করে। “মরিয়ম, কালামের সাথে একটু কথা বল। ওকে বল দোলনের জীবন থেকে একেবারে সরে যেতে। আমার জন্য এই উপকারটা তুই কর। তুই চলে আসার পর বাসায় যে কি নারকীয় পরিবেশ তৈরী হয়েছে সেই ব্যাপারে তোর কোন ধারণাই নেই। আর সত্য কথা বলতে কি, ঐ ছেলেকে তো তুইই আমাদের বাসায় এনেছিলি। সুতরাং এই সমস্যার সমাধান করবার দায়িত্বও তোরই।”
মরিয়মের ধারনা ছিল ও এই সমস্যার সমাধান ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওর ধারনা ভুল। ও আবুলকে কথা দিল ওর সাধ্যমত চেষ্টা করবে।
আবুল চলে যাবার পর নিজের কামরায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে কালামকে ফোন করল। ওর ভয়েস মেইল পেল। একটা মেসেজ রাখল, কালাম যেন ওকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কল ব্যাক করে। কিন্তু মনে মনে আশা করছে কালাম যেন না করে। কি বলবে ওকে? দোলনের সাথে মিশ না! সেটা কেমন শোনাবে? সত্যি কথা হচ্ছে এই সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যাবে ওর সেই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই। ওর মন বলছে যেভাবে চলছে চলতে থাক, এক সময় ওর বাবা-মা ব্যাপারটা মেনে নেবেন এবং এই বিষয় নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল কালাম এবং দোলনের ব্যাপারে ও আর কোন কিছুই করবে না।
৮৮
পরের শনিবার আবহাওয়া দেখা গেল মেঘলা, বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে- এখানকার বসন্তে যেটা খুব স্বাভাবিক। এমন দিনে বাইরে বের হতে মন সায় দেয় না রিমার। কিন্তু নোমান যখন ওকে সাথে যেতে বলল, লোভ দেখাল ক্যানভাসিং শেষে কোন একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দু’জনে খাবে, তখন আার মানা করতে পারল না। গত কয়েকবার ওর সাথে গিয়ে খুব ভালো লেগেছে ওর। পুরানো দিনের মত মনে হয়েছে। নোমানের সাথে ওর যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে, যার রূপ কখন বন্ধুত্ব থেকে অন্য কোন কিছুতে রূপান্তরিত হবে না বলে ও সব সময় ভেবেছিল, তাতে যেন একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ইদানীং নোমানকে দেখলে নিজের ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করতে শুরু করেছে ও, ওর হৃৎপিন্ডের ধুকপুকানী যে বেড়ে যায় সেটা অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই।
এই ব্যাপারটা একেবারেই আশাতীত। ওর জীবনের এই পর্যায়ে এসে এমনটা হতে পারে ও ভাবেই নি। এর পরিণতি যে কি হতে পারে ও জানে। ইদানীং ওর প্রতি তার দীর্ঘদিনের আসক্তি ঢাকবার কোন প্রচেষ্টাই আর নোমান করে না। রিমার দিক থেকে যে কোন ধরনের দূর্বলাতের বহিঃ প্রকাশ হওয়া মাত্রই এই বন্ধুত্বের গতি এক ভিন্ন দিকে মোড় নেবে। কিন্তু রিমার মনে এখনও দ্বিধা দ্ব›দ্ব আছে। বাচ্চাগুলো নোমানকে ভীষণ পছন্দ করে এখন কিন্তু ও যদি তাদের সৎ বাবাতে পরিণত হয় তখনও কি ওকে তারা একইভাবে দেখবে? সেই রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ফায়জারই জানা। সে প্রখর বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে কিভাবে ব্যাপারটা নেবে বলার কোন উপায় রিমার নেই।
নোমান সময় মতই এসে হাজির হল। বরাবরের মতই ফিটফাট হয়ে এসেছে। রিমার পরনে জিন্স, একটা টি-শার্ট আর তার উপরে স্প্রিং জ্যাকেট। কিন্তু নোমানকে দেখার পর ওর হঠাৎ মনে হল আরেকটু সুন্দর কিছু একটা পরে এলেই ভালো হত। যদিও এটা ওদের ডেট নয় তারপর দু’জনকে এক সাথে পাশাপাশি ভালো দেখাত। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা ওর মাথায় ইদানীং এতো স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আসছে ভেবেও অবাক লাগে ওর। নোমান কি ওর মনভাব বুঝতে পারে? পারলেই ভালো। ওদের দু’জনার মধ্যে যদি কিছু হতেই হয় সেটা হবে যদি নোমান নিজে কোন উদ্যোগ নেয়। নিজের থেকে কিছু করবার মানসিক শক্তি কিংবা মনবল কোনটাই রিমার নেই।