শুজা রশীদ : (পর্ব ৪৯)
৭১
ফেব্রæয়ারী মাসের এক বিকেল। অনেক ঠাণ্ডা। মিলা বিশাল এক বাক্স প্রিমিয়ামের মিষ্টি নিয়ে হাজির হল। তার মুখে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। কয়েক দিন আগে একটু সর্দি হয়েছিল রিমার। এখনও সারেনি। ফায়জাই দরজা খুলে মিলাকে ভেতরে ঢোকাল। খুশীতে ঝলমল করছে মিলা।
“রিমা! কেল্লা ফতে। কাজ হয়ে গেছে, ফায়জা!” তাড়াহুড়া করে জুতা খুলতে গিয়ে প্রায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। কোন রকমে দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে নিজেকে সামাল দিল। তারপর মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটা মিষ্টি বের করে পুরোটা ফায়জার মুখে ঢুকিয়ে দিল। “খাও মামনি! খাও!”
ফায়জা ওয়াক করে মিষ্টিটা নিজের হাতে ফেলল। “মিলা আন্টি! করছ কি? দম বন্ধ হয়ে যাবে তো!”
“সরি, মামনি! আজ খুব খুশী আমি। আস্তে আস্তে খাও। ডাকু দুইটা কই? রিমা!” লিভিংরুম পারিয়ে ঝড়ের মত রিমার বেডরুমে গিয়ে ঢুকল সে। রিমা বিছানায় কম্বলের নীচে শুয়ে ছিল, পাশেই এক বাক্স টিস্যু। সর্দি ঝাড়তে ঝাড়তে নাক লাল। এখনও সমানে পড়ছে।
মিলার দুই চোখ কপালে উঠল। “কি ঘটনা? কবে থেকে এই অবস্থা?”
দুই ছেলে ছুটে এলো। মিষ্টির বাক্সটা টেবিলে রাখল মিলা। “যত ইচ্ছা খাও!”
জিব্রান দেশী মিষ্টি মুখেও তোলে না। সে মুখ বাঁকিয়ে ফেলল। “ইয়াক!”
“ইয়াক!” ভাইয়ের দেখাদেখি রবিনও মুখ বাঁকিয়ে বলল, তারপর ভাইকে অনুসরণ করে কামরা থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
“আরে! আমাদের বাচ্চাদের সমস্যা কি?” মিলা মন খারাপ করে বলল। “আমাদের মিষ্টি ওদের পছন্দ হয় না কেন? তোমার এই অবস্থা কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে সর্দিতে মাখামখি হয়ে আছো!” খিল খিল করে হেসে ওঠে মিলা।
“ঘটনা কি?” মিলা ভারী কন্ঠে কথা বলে ওঠে। “মিষ্টি কিসের জন্য? তোমার এনগেজমেন্ট হয়েছে নাকি?”
“এনগেজমেন্ট?” মিলা মুখ বাঁকাল। “ঐসব নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাই না। শোন, ঘউচ থেকে ডলির নমিনেশন হয়ে গেছে। মনে আছে, তোমাকে মেম্বার বানিয়েছিলাম? স্কারবরো ওয়েস্ট থেকে ঐ পার্টির আর কোন ক্যান্ডিডেটই ছিল না। সুতরাং বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নমনিত হয়ে গেছে। নাও, এবার মিষ্টি খাও। তোমার প্রিয় লাড্ডূ নিয়ে এসেছি।”
“না, না, খাবো না,” রিমা দ্রুত মুখ সরিয়ে নিল মিলার আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করবার জন্য। “তুমিই খাও। আমার একেবারেই খেতে ইচ্ছা করছে না। এই শীতকাল না যাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।”
মিলা ভ্রæ কুঁচকাল। “শীতকালের দোষ দিচ্ছ কেন? কাঠে মিস্ত্রী দোকানে কাজ করছে, তোমার সেখানে সারা দিন কাটানোর দরকারটা কি? শুনলাম হিটিংও ঠিক মত কাজ করছে না।”
“আমি না থাকলে চলবে?” রিমা যুক্তি দেখায়। “সব গোলমাল করে ফেলবে। ঠিক হয়ে যাবো। কয়েকটা দিন ভুগবো আর কি! হিটিং নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। ঠিক করিয়ে নিয়েছি। যাইহোক, ডলির নমিনেশন তাহলে হয়ে গেছে! ইলেকশনে জিতবে মনে হয়?”
“কে জানে? কিন্তু আগে তো নমিনেশন, পরে তো ইলেকশন জেতার প্রশ্ন। তুমি সত্যি সত্যি মিষ্টি খেতে চাও না?” নিজের মুখে একটা পুরো লাড্ডু ঢুকিয়ে শব্দ করে চিবাতে চিবাতে বলল মিলা। “যা মজা না! খেয়ে দেখ!”
রিমা একটা টিস্যুতে সশব্দে নাক ঝেড়ে বাস্কেটে ফেলল। তার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল মিলা। “তোমাকে দেখে আসলেই খুব নাজেহাল মনে হচ্ছে! অষূধ খেয়েছ কিছু?”
“মাথা ব্যাথার জন্য শুধু টাইলানল,” রিমা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল। “কানাডা না এসে আমার অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া উচিৎ ছিল। ঠান্ডা আমার কোন দিনই সহ্য হয় না।”
মিলা হাসল। “আল্লাহর রহমত, তুমি ভাগ্যিস কানাডা এসেছিলে। এইবার আমরা দুই বেস্ট ফ্রেন্ড মিলে ইতিহাস তৈরী করব।”
“তুমি তো সব কিছু নিয়েই সব সময় ইতিহস তৈরী করছ,” রিমা ভ্রæ কুঁচকে বলল। “বউ বাচ্চায়ালা ডাক্তারের সাথে যাচ্ছ প্যারিস!”
মিলা জোরে হেসে উঠল। “ঐসব আমি ভুলে গেছি। এই নমিনেশন নিয়ে আমরা সবাই খুব উচ্ছ¡সিত। তোমাকে কিন্তু এবার আমাদের সাথে যোগ দিতে হবে। এখন পর্যন্ত ফসকে বেরিয়ে গেছ। আর পারবে না। এইবারতো আসল খেলা শুরু হবে। সবাইকে দরকার হবে।”
“আমার সময় হবে বলে মনে হয় না,” রিমা দুর্বল কন্ঠে বলে। “দোকানের কাঠের কাজ সপ্তাহ খানেকের মধ্যে হয়ে যাবে। আরেক সপ্তাহ যাবে বাকী সব ঠিক ঠাক করতে। সব মিলিয়ে সপ্তাহ দুই তিনের মধ্যেই দোকান খুলতে পারব মনে হয়। তারপর অনেক ব্যাস্ত হয়ে পড়ব।”
“কাপড়-চোপড় কিছু কিনেছ এখনও?” মিলা জানতে চাইল।
“আমার ছোট ভাই কিছু পাঠাচ্ছে। আর কিছু আমি এখান থেকেই কিনব। সেলাইয়ের কাজও করব। তারপর ড্রেস ডিজাইন করতে শুরু করব। অনেক প্ল্যান আছে।”
মিলা হাসল। “কখন ভাবিনি তুমি কাপড়ের দোকান নিয়ে এতো জান প্রাণ দিয়ে লাগবে। কখন আমাকে এইসব নিয়ে কিছু বলও তো নি। তুমি যে কাপড় সেলাই করতে পারো কিংবা ডিজাইন করতে পারো, জানতামই তো না।”
“কাপড়ের দোকান বল না, বল ফ্যাসানের দোকান।” রিমা ভ্রু কুচকে বলল।
মিলা হাসল। “ওকে ম্যাডাম। খুব দুঃখিত। তোমার জ্বলজ্বলে, মখমলে ফ্যাসনের দোকান! হল? আমি এসে তোমার সাথে মাঝে মাঝে হাত লাগাব। আপত্তি নেই তো?”
“তুমি তো তিন ইঞ্চি ছিদ্রের মধ্যে দিয়েও সুতা ঢুকাতে পারবে না। তোমাকে দিয়ে কোন কাজই হবে না।” রিমা সরাসরি নাকচ করে দিল। মিলার ঘাড়ে ইতিমধ্যেই অনেক বোঝা রয়েছে। তার আর নতুন কোন কিছুর মধ্যে জড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই।
“শিখে নেব,” মিলা হাসতে হাসতে বলল। “পারব, দেখ। কাজের পর মাঝে মাঝে চলে আসব। ঠিক আছে?”
রিমা মাথা নাড়ল। “না। সময় পেলে তুমি বরং বাচ্চাদের সাথে থেক। আমি তোমাকে টাকাও দেব।”
মিলা মুখ কুঁচকাল। “টাকা দেবে? ও আচ্ছা, এখন তো তুমি বড় লোক হয়ে গেছ। বাচচাদের দেখার জন্য টাকা হাঁকছ?” মিষ্টির প্যাকেটটা মাথার উপর তুলল সে। “এটা দিয়ে দেব একটা ঘা?”
রিমা হাসল। “না! খবর্দার! সব মিষ্টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে একটা বিতিকিচ্ছির সমস্যা হবে। চারদিকে চিনি চিনি হয়ে যাবে। পিঁপড়া হবে।”
“সেটাই আমি চাই!” মিলা মিষ্টির প্যাকেটটা নামিয়ে রাখল। “যাই হোক, আমার যেতে হবে। আরোও কয়েকটা জায়গায় যাবো। বিশ বাক্স মিষ্টি কিনেছি। কিন্তু তুমি কোন চিন্তা কোর না। তোমার দোকান খোলার পর আমি সুযোগ মত বাচ্চাদের সাথে এসে কিছু সময় কাটাবো। কিন্তু তোমাকেও আমাদের সাথে এসে ক্যাম্পেইনিং করতে হবে। কোন অজুহাত শুনব না।”
“দেখা যাবে,” রিমা বলল। জানে মিলার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। তার যদি মনে হয় এটা খুব বড় একটা ব্যাপার তাহলে সে রিমাকে যেভাবেই হোক জড়াবেই।
মিলা চলে যাচ্ছে দেখে ফায়জা দৌড়ে এলো। “মিলা আন্টি, চলে যাচ্ছ? আমি ভেবেছিলাম সবাই একসাথে রাতে খাব।”
“আজকে না, মামনি। আরেক দিন হবে। অনেক ব্যাস্ত আজ।” মিলা ঝটপট উইন্টার বুটে পা গলিয়ে রিমার বেডরুমের দিকে গলা বাড়িয়ে বলল, “আমাদের কিছু টাকা পয়সাও লাগবে। অল্প কিছু দিয়ে আমাদেরকে আপাতত সাহায্য করতে পারো। বেশি না। দুই এক হাজার হলেই আপাতত চলবে। আর আগামী সপ্তাহে সেন্ট ক্লেয়ার এবং ওয়ার্ডেনের কাছাকাছি একটা বাসায় টিম মিটিং হবে। সময়টা পরে জানাব। তোমার কিন্তু সেখানে থাকতেই হবে। কোন কথা শুনব না। যাই।”
ফায়জা দরজা বন্ধ করে মায়ের কামরায় এলো। “মা, খুব খুশি লাগছে। এই ক্যাম্পেইনে আমদের সবাইকে যোগ দিতে হবে।”
রিমা অবিশ্বাস নিয়ে মাথা নাড়ল। “ও তোকেও পটিয়ে ফেলেছে এর মধ্যে?”
৭২
কালাম বিশাল এক সমস্যায় পড়ে গেছে। দোলনের সাথে তার বন্ধুত্ব হঠাৎ করেই বেশ ঘনিষ্ট পর্যায়ে চলে গেছে। তাদের দু’জনারই একই জাতীয় সঙ্গীত পছন্দ, দু’ জনাই সোশাল মিডিয়ায় প্রচুর সময় কাটায়, দু’ জনাই সাধা সিধা, বন্ধুত্বভাবাপন্ন। প্রথম প্রথম এই বন্ধুত্ব কতখানি সঙ্গত ভেবে চিন্তায় ছিল সে। হাজার হোক দোলন অন্যের স্ত্রী। এমনিতে হয়ত এর মধ্যে মন্দ কিছুই নেই কিন্তু একটু রক্ষনশীল সমাজে এই সামান্য বন্ধুত্বও দৃষ্টি কটূ হয়ে উঠতে পারে। জলি আর হ্যাপিকে পড়াতে তার খুব ভালো লাগে। সেই কাজটা হারাতে চায় না। দোলনের সাথে বন্ধুত্বটাও ভালো লাগে কিন্তু ব্যাপারটা অকারণে জটিল আর ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। পড়ার টেবিলে দোলন যখন মাঝে মাঝে এসে ওদের সাথে যোগ দেয়, ওর সাথে গল্প করে, কালাম লক্ষ্য করেছে দোলনের শ্বাশুড়ী সন্দিহান দৃষ্টিতে তাদের উপর নজর রাখেন। কোন না কোন একটা অছিলায় আশেপাশে ঘুরঘুর করেন। মাঝে মাহে আবুল যখন বাসায় থাকে কালাম তার ভাব-ভঙ্গী, চাহনি দেখেই বুঝতে পরে দোলনের সাথে কালামের কথাবার্তা বলাটা সে খুব একটা সহজভাবে নিতে পারে না।
যাইহোক, এখন দোলন তাকে আরোও বড় এক সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। ফোনে চ্যাট করছিল ওরা একদিন। তখন হঠাৎ দোলন ব্লু মাউন্টেইনের প্রসঙ্গ তুলল। ওন্টারিওর সবচেয়ে বড় উইন্টার রিসোর্ট। মাত্র ঘন্টা দুয়েকের পথ। ইউনিভার্সিটির কয়েকজন বন্ধুর সাথে সেখানে একবার গিয়েছিল কালাম। দিনে দিনে চলে এসেছিল। দোলন কখন যায়নি। সে কোন রিসোর্টেই কখন যায়নি।
আবুলের ওকালতি ভালো চলতে শুরু করবার পর স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাবার আগ্রহ দেখিয়েছে সে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আবুলের ব্যাস্ততা দিনকে দিন বাড়ছে। তার বৃদ্ধ পিতামাতাকে ফেলে যাওয়াটাও সমস্যা। তছাড়া, দোলন কালামের কাছে অকপটে স্বীকার করেছে, মানুষ হিসাবে আবুলের তুলনা না হলেও তার প্রতি দোলনের কোন রোমান্টিক অনুভূতি হয় না। কখনই হয়নি। তার সাথে কোথাও বেড়াতে যেতে সে নিজেই কোন আগ্রহ পায় না। সে বরং তার নতুন বন্ধুদের সাথে যাবেÑ কালাম, লরা এবং লরার ছেলে বন্ধু জন। ভাবতে অবাক লাগতে পারে কিন্তু লরাও এখন তাদের দু’জনার বন্ধু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বার দুয়েক তারা একসাথে হয়েছিল। লরা তার ছেলে বন্ধুকেও নিয়ে এসেছিল। জনের উপস্থিতিতে লরার প্রতি কালামের রোমান্টিক অনুভুতির অঙ্কুরেই বিনাশ হয়েছে কিন্তু তাদের চারজনের মধ্যে খুব দ্রæত একটা বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরী হয়ে গেছে। এখন দোলন আবদার ধরেছে তারা চারজন মিলে বøæ মাউন্টেইনে যাবে।
তার বাসা থেকে তাকে কি যাবার অনুমতি দেবে? জানতে চেয়েছিল কালাম।
দোলনের উত্তর খুব একটা পরিষ্কার ছিল না। সে কোন একভাবে ব্যাপারটা ম্যানেজ করবে। কিভাবে? সেটা খুলে বলতে চায়নি। কালাম কাউকে কিছু না বললেই হবে। বাকীটা সে সামলাবে।
নিরুপায় হয়ে মুখ বন্ধ রাখার প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছে কালামকে।
প্ল্যান মোতাবেক ইস্ট ইয়র্কে লরার বাসায় চলে এলো দোলন। জনের গাড়িটাই সবচেয়ে ভালো। টু ডোর ইগড র৮। ওরা চারজন সেটাতে চেপে বসতে জন গাড়ি হাইওয়েতে তুলে রকেটের ছুটিয়ে দিল। দোলন আনন্দে ঝলমল করছিল, খুব বকবকও করছিল। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সে আবেগে টগবগ করে ফুটছে। বন্ধুদের সাথে এভাবে দূরে কোথাও যাওয়া এটাই যে তার প্রথম অভিজ্ঞতা সে ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ ছিল না। কালাম জানতে চেয়েছিল বাসায় কি বলেছে। সে হেসে মাথা দুলিয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। উত্তর দেয়নি। কালাম মনে মনে শঙ্কা অনুভব করেছে কিন্তু মুখে কিছু বলেনি। রাগিয়ে দিতে চায়নি।
ব্লু মাউন্টেইনে ওদের সময় অবশ্য খুব ভালো কাটল। ভিলেজে অনেক মানুষের সমাগম হয়েছিল। ওরা স্কি লেসন নিল, স্থানীয় একটা রেস্টুরেন্তে খেয়ে দেয়ে ছবির মৎ সুন্দর এলেকাটাতে পায়ে হেঁটে ঘুরল। দোলন কালামের সমস্ত খরচ বহন করেছে –স্কি লেসন থেকে শুরু করে খাবারের পয়সাও। ওর টাকা পয়সা নিয়ে টানাটানি যায়, দোলন সেটা ভালোমতই জানে।
বিকালের দিকে যখন দোলনের ফোন একটু পর পরই বাজতে শুরু করল আর দোলন বার বার লাইন কেটে দিতে থাকল তখনই কালামের টনক নড়ল। ঘন্টা খানেক পর যখন ও নিজে মরিয়মের কাছ থেকে একটা টেক্সট মেসেজ পেল তখন ওর মাথায় বাজ পড়ল যেন।
দোলন কি তোমার সাথে?
দোলনকে দেখাল। মাথা নাড়ল দোলন। উত্তর দেবার দরকার নেই। লরা আর জন নিজেদেরকে নিয়েই ব্যাস্ত ছিল। তারা এই নাটকের কিছুই লক্ষ্য করল না।
“বাসায় কিছু বল নি তুমি?” কালাম ফিসফিসিয়ে জানতে চায়।
“খুলে বলি নি,” দোলন স্বীকার করল।
“তার মানে কি?” কালাম অস্থির বোধ করে।
“আমি ম্যানেজ করে ফেলব। দেখ ওরা দুজন কি করছেৃ” খিল খিল করে হাসত হাসতে লরা আর জনকে দেখাল সে। তার মানুষ জনের ভীড়ের মধ্যে দু’ দু’জনকে জড়িয়ে ধরে খুব গভীরভাবে চুমু খাচ্ছে। “আমার সব সময় ঐভাবে কাউকে চুমু খেতে ইচ্ছে করে।”
“সবার সামনে? বল কি?” কালাম ভ্রূ কুঁচকে বলে।
দোলন হাসল। “খারাপ কি হয়েছে? খুব রোমান্টিক লাগে।”
“তোমার স্বামীকে এনে যত ইচ্ছা যতক্ষণ ইচ্ছা চুমু খেও,” কালাম বিরক্ত হয়ে বলে।
দোলন মুখ কুঁচকে তাকাল। “তোমার কি মাথায় দোষ দেখা দিয়েছে? সে মরবে তবু করবে না। আমার চেয়ে বয়েসে অনেক বড় তো। আমাদের মন মানসিকতা ভিন্ন। তুমি তো জানই সব। আমার পরিবারের মুখের দিকে তকিয়েই বিয়ে করেছিলাম ওকে।”
কালাম কিছু বলে না। দোলনকে ও খুশি দেখতে চায় কিন্তু তার পারিবারিক সমস্যার মধ্যে নিজেকে জড়াতে চায় না।
মরিয়মের টেক্সটের জবাব দিল ঘন্টা দুয়েক পরে।
সরি আপু, মাত্র দেখলাম আপনার টেক্সট। দোলন গেছে লরার সাথে দেখা করতে। চলে আসবে। মরিয়ম লরাকে খুব ভালো ভাবেই চেনে। যেহেতু সে রেস্টূরেন্টে কাজ করে। এইবারের মত এটা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হয়ত হবে না। দোলনকে খুলে বলল। কেউ কিছু জানতে চাইলে সে যেন সেভাবেই বলে। দোলন শ্রাগ করল। তাকে দেখে মনে হল না সে এইসব নিয়ে খুব একটা তোয়াক্কা করে।