শুজা রশীদ : (পর্ব ৪৪)
“আরেকটু থাকো,” ফায়জা নীতাকে লক্ষ্য করে বলে। “আমি বুদ্ধি করে রবিনকে লিভিং রুমে নিয়ে আসব। ওর সাথে ভাব করার নানান ধরনের উপায় আছে।”
“তাই নাকি? তুমি পারবে ওকে আমাদের কাছে আনতে?” লাট্টু খুব উৎসাহ নিয়ে বল্লেন।
রিমা গেছে তাদের জন্য চা-নাস্তা আনতে। তিনি তার প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রবিনের উপর মনযোগ দেবার আগে তিনি এবং নীতা যে কারণে এসেছেন সেই আলাপটা আগে সেরে ফেলতে চান।
কিছুক্ষণ পরে তাদের দুজনার সাথে লিভিং রুমে একাকী বসল রিমা। লাট্টু এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলেন। স্ত্রীর সাথে নিঃশব্দে চোখাচোখি করলেন, বুঝতে চাইছেন আলাপটা দুজনার মধ্যে কে আগে শুরু করবে।
পিন্টুর বাবা-মায়ের এই অকস্মাৎ আগমনের পেছনে কি কারণ থাকতে পারে রিমা সেটা খানিকটা আন্দাজ করেছিল। সেই জন্যই ও ইচ্ছে করে বাচ্চাদেরকে ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছে। মুখে বন্ধুত্বপূর্ণ একটা হাসি ধরে রেখে অপেক্ষা করে কখন তার অতিথিরা তাদের এই আগমনের রহস্য উন্মোচন করবেন। মনে মনে ও বদ্ধপরিকর, ওনারা যাই বলুন যাই করুন মেজাজ খারাপ করবে না। শান্তি চায় ও। এই বাড়িটার সাথে সাথে ওর জীবনে যেন এসেছে এক নতুন প্রত্যাশার জোয়ার। এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায় ও, নিজের এবং ওর সন্তানদের জন্য গড়তে চায় এক আকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ।
“মা রিমা,” লাট্টু কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, “আমরা সবাই জানি কিছুদিন ধরে পিন্টু কেমন পাগলা পাগলা হয়ে আছে। বড় ভাইকে খুব ভালবাসত। আমাদের সাথে মিন্টুর খুব একটা সংযোগ না থাকলেও দুই ভাইয়ের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। মিন্টুর মৃত্যু, বিশেষ করে এই ধরনের মৃত্যু, মেনে নিতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। স্বীকার করছি বিগত দিনগুলোতে এমন কিছু কাজকর্ম ও করেছে যা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করবে না।” তিনি স্ত্রীর দিকে তাকালেন সমর্থনের আশায়। নীতা ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে থাকলেন। স্বীকার কিংবা অস্বীকার কিছুই করলেন না।
“কিন্তু এখন এটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে,” লাট্টু বললেন। “তোমার এখানে এসে যা করেছে সেটা আমার চিন্তারও বাইরে। কিন্তু তার মূল্য সে ইতিমধ্যেই কিছুটা দিয়েছে। একদিন জেলেও কাটিয়েছে। এটা ওর পাওনা ছিল। কিন্তু এই কেস যদি জাজের সামনে যায়, কে জানে কি হয়। ছেলেটা হয়ত জেলে যেতে পারে। ওর দুইটা ছোট ছোট মেয়ে আছে, তুমি তো জানই।”
“তুমি কেসটা তুলে নাও,” নীতা বিড়বিড়িয়ে বললেন। তার দৃষ্টি মেঝেতে।
লাট্টু মাথা দুলিয়ে সমর্থন জানালেন। “হ্যাঁ রিমা, কেসটা তুলে নাও। আমি ব্যাক্তিগতভাবে গ্যারান্টি দিচ্ছি এমনটা আর কখন হবে না। ওকে জেলে পাঠিও না, প্লিজ।”
রিমা একাধারে বিভ্রান্ত এবং অসহায় বোধ করে। কানাডিয়ান ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম সম্বন্ধে ওর কোন ধারণাই নেই। আসলে কোন জাস্টিস সিস্টেম সম্বন্ধেই ওর কোন ধারণা নেই। কিভাবে কি হয় ও জানেও না। পিন্টুর বাবা-মা যা করতে বলছেন সেটা করা ওর পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে কিনা ও জানেও না।
“আমার তো মনে হয় না এখানে আমার কিছু করার আছে,” ও দ্বিদ্ধান্বিতভাবে বলল। “মানে… হ্যাঁ, আমি পুলিশ ডেকেছিলাম এবং রিপোর্ট করেছিলাম। যে জন্য পিন্টুকে এরেস্ট করা হয়েছিল। কিন্তু ওর বিরুদ্ধে কেস করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারী উকিল। এখানে আমার কিচ্ছু করার নেই। সে তো আমাকে কিছু জিজ্ঞেসও করেনি।”
“তোমার বন্ধুর সাথে কি আলাপ করেছিল?” নীতা এবার চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন। “ওর নাম নোমান – তাই না? ওই তো পিন্টুর সাথে মারপিট করেছিল। পিন্টুর নাক ভেঙে দিয়েছে। ওকে কেন চার্জ করেনি?”
“নীতা, নোমান ওদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল,” লাট্টু তাড়াতাড়ি বললেন। মূল আলাপের ধারা থেকে বিতর্কিত কোন বিষয় নিয়ে তর্কে যেতে চান না তিনি।
নীতা বিড় বিড় করে কিছু একটা বললেন কিন্তু স্বামীকে আলাপ চালিয়ে দেবার সুযোগ দিলেন।
“আচ্ছা, তুমি আর নোমান যদি গিয়ে সরকারী উকিলের সাথে আলাপ কর তাহলে কেমন হয়?” লাট্টু বললেন। “হয়ত তোমাদের দুজনার কথা সে শুনবে। আমি কথা দিচ্ছি সে যদি কেস তুলে নেয় তাহলে পিন্টুর সমস্ত কর্মকান্ডের দায়ভার আমি নেব। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো।”
কি বলবে বুঝতে পারে না রিমা। সরকারি উকিলের সাথে আলাপ করতে ওর কোন সমস্যা নেই কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব কিনা সেটা ও জানে না। সেই উকিল আবার ওদের উপর ক্ষুব্ধ হবে নাতো? “আমি নোমান ভাইয়ের সাথে একটু আলাপ করে দেখি কি করা যায়,” রিমা বলল। “আমার পক্ষে যা করা সম্ভব আমি সব করব,” ও যোগ করে, মূলত পিন্টুর বাবা-মাকে একটু স্বস্তি দেবার জন্য। পিন্টু জেলে যাক সেটা ও চায় না। কিন্তু তাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কানে দেয়নি সে। প্রতিবার নতুন বলে বলীয়ান হয়ে আরোও তীব্রভাবে এসে আঘাত করেছে। কিন্তু তারপরও রিমা আরেকবার শেষ চেষ্টা করতে চায় এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাবার জন্য।
ওর মৌখিক অঙ্গিকার নীতা এবং লাট্টুকে খানিকটা হলেও আশ্বস্ত করল বলে মনে হয়। রিমা তাদেরকে চা-নাস্তা খাবার জন্য পীড়াপীড়ি করল। ফায়জা তার প্রতিজ্ঞা রাখল। সে জিব্রানের সাথে গোপন পরিকল্পনা করে খেলনা এবং চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে রবিনকে ধীরে ধীরে লিভিং রুমে নিয়ে এলো। বেশ কয়েকবার বৃথা চেষ্টা করার পর শেষ পর্যন্ত লাট্টু রবিনের হাত ধরে নিজের কাছে আনতে পারলেন। রবিন তার বিশাল বাদামী দুই চোখ মেলে তাকিয়ে থেকে এক গাল হাসি দিল। নীতা স্থির দৃষ্টিতে ছেলেটাকে দেখছিলেন। লাট্টু যখন তাকে বললেন রবিনকে নিজের কাছে ডাকতে তিনি মনে হল কি করবেন বুঝতে পারছেন না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রবিন দৌড়ে তার কোলে গিয়ে মুখ গুঁজে আদুরে গলায় কিছু একটা বলতে লাগল। নীতা ভয়ে ভয়ে তার পিঠে একটা হাত রেখে তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। তার আশংকা ছেলেটা আচমকা অদ্ভুত কিছু একটা না করে বসে। “কি বলল ও?” তিনি ফায়জাকে জিজ্ঞেস করলেন।
“বেবি!” জিব্রান খিল খিল করে হেসে বলল। “কাউকে ওর পছন্দ হলে তখন ঐটা বলে।” সে আরেক প্রস্থ হাসল।
আধা ঘন্টা পরে তারা যখন বিদায় নিলেন তাদেরকে দেখে মনে হল তাদের চেয়ে সুখী মানুষ আর নেই। দুজনাই বার বার জানতে চাইলেন রবিন কি ধরণের খেলনা পছন্দ করে, তারা কি মাঝে মাঝে ওকে দেখতে আসতে পারবেন, কিছু খেলনা দিয়ে গেলে কি কোন অসুবিধা আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। রিমার নিজেকে বিজয়ী মনে হয়। রবিনকে নিয়ে ওর পরিকল্পনাটা ভালোই কাজ করেছে। মিন্টুর পরিবার আর ওর পরিবারের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সবস্থানের রবিনই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী সমাধান। তারা বিদায় নেবার আগে সে তাদেরকে আবারও নিশ্চিত করেছে সম্ভব হলে এই কেস সে অবশ্যই তুলে নেবার ব্যবস্থা করবে।
ঐ দিন সন্ধ্যায় রিমা নোমানকে ফোন দিল কেসটা নিয়ে আলাপ করার জন্য। নীতা এবং লাট্টুর সাথে ওর যা যা আলাপ হয়েছে সব খুলে বলল। নোমান কেস তুলে নেবের জন্য এক পায়ে খাঁড়া কিন্তু ও নিজেও জানে না এই কেসের বাদী পক্ষ আদৌ সে কিনা। সেইদিনের সেই বিরল মারপিটের অভিজ্ঞতার পর সে এখনও ভেতরে ভেতরে বেশ ঘাবড়ে আছে। এই ঝামেলা মিটে গেলেই সে খুশী। পিন্টু যদি শেষ পর্যন্ত জেলে যায় তাহলে সে নির্ঘাত সেই জন্য নোমানকেই দায়ী করবে এবং পরবর্তিতে ওর ক্ষতি করবার চেষ্টাও করতে পারে। ওরা সিদ্ধান্ত নিল আবুলের সাথে কথা বলে তাকে নিয়েই সরকারী উকিলের সাথে আলাপ করতে যাবে।
আবুলের ফোন নাম্বার রিমার কাছে ছিল। তাকে ফোন দিল। তার প্রস্তাব শুনে আবুল খুব খুশী হল। কেসটা তুলে নিতে পারলেই ভালো হয়। হাজার হোক পিন্টু তার ভগ্নীপতি, সে জেলে গেলে তার নিজেরও ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। ওরা সিদ্ধান্ত নিল পরদিন সকালে কোর্টে গিয়ে সরকারী উকিলের সাথে দেখা করবে। সে সব শোনার পর কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা বলা কঠিন কিন্তু চেষ্টা করতে তো দোষ নেই। কানাডিয়ান নিয়ম অনুযায়ী বাদী পক্ষ কেস তুলে নিলেও সরকার পক্ষ বাদী হয়ে কেস চালিয়ে যেতে পারে। খবরটা মরিয়মকে জানালো। শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল মরিয়ম, কিছু বলল না। পিন্টুর সাথে ঝামেলা মিটমাট হয়ে যাবার আশা একরকম হারিয়ে ফেলছে সে। যেভাবে চলছে তাতে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি ডিভোর্সের দিকে এগুলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
রাতে মিলা নিজের এপার্টমেন্টে ফিরে যেতে চাইল কিন্তু রিমা যেতে দিল না। আজও সারা রাত ধরে বক বক করল মিলা, কিন্তু এবার অনেক সংযত, নিয়ন্ত্রিত। কান্নাকাটিও করল না খুব একটা। রিমা বুঝতে পারছে একটু মানসিক সমর্থন দরকার মিলার নিজেকে পুনরাবিষ্কার করার জন্য। যে মিলাকে ও চেনে সেই মিলা ভয়ানক সাহসী আর বেপরোয়া। কে কি ভাবল তাকে নিয়ে আর কে কি বলল তার পেছনে সেই সব নিয়ে মাথা ঘামানোর মানুষ সে নয়। ক্ষণে ক্ষণে সেই পুরানো মিস মিলার ঝলক দেখে খুব ভালো লাগল ওর। কিন্তু বুঝল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে তার বেশ সময় লাগবে। মিলা যখন রাগে আর দুঃখে তার বিবাহিত প্রেমিকের কথা বলে সারা রাত ধরে তখন রিমা মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকে কি করে মিলার মাথা থেকে পুরো ব্যাপারটাকে চিরতরে সরিয়ে ফেলা যায়।
সরকারি উকিলের সাথে আলাপের ফলাফল খুবই ভালো হল। তাদের সমস্ত কথা বার্তা মনযোগ দিয়ে শুনল সে। পিন্টু তার বড় ভাইকে হারিয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে, তার বৃদ্ধ পিতা মাতা তার উপর নির্ভরশীল এবং তার মুক্তি সাংসারিক অনেক জটিলতা থেকে এই পরিবারটাকে মুক্ত করে দেবে- সব কিছু বিবেচনা করে সে কেস তুলে নিতে রাজী হল। কিন্তু শর্ত দিল পিন্টুর সাথে মুখোমুখি বসে আলাপ না করে সে কোন শেষ সিদ্ধান্ত নেবে না। আবুল তাকে কথা দিল সে নিজেই পিন্টুকে সাথে নিয়ে আসবে এবং পিন্টু যেন সরকারের সব শর্ত মেনে নেয় সেটা নিশ্চিত করবে।
রিমা মনে মনে পরিত্রাণের নিঃশ্বাস ছাড়ল। মিন্টুর পরিবারের সাথে শেষ পর্যন্ত যে একটা শান্তি চুক্তি হবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সেটা খুবই আশাব্যঞ্জক যদিও এই শান্তি কতদিন টিকবে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা কষ্টকর। পিন্টুর সাথে ঝামেলা হবার পেছনে কিছু কারণ ছিল যেগুলো নিয়ে কেউ এই মুহুর্তে আলাপ করছে না। পিন্টু তার ভাইয়ের লাইফ ইন্সিউরেন্সের টাকার ভাগ চেয়েছিল। মিন্টু পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রী করে বিশাল অংকের টাকা আত্মসাৎ করে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে বলে পিন্টুর বিশ্বাস। তার ধারনা রিমা সেই অর্থের অবস্থান জানে। রিমা আশা করছে এই কোর্ট-কাচারীর সংক্রান্ত সমস্যা মিটে যাবার পর পিন্টু তার অন্যায় আবদার আর অমূলক ধারনা ভুলে গিয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে। তার স্ত্রী এবং সন্তানেরা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তাদেরকে ফিরিয়ে আনাটাই এখন তার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
রিমার বাচ্চারা ক্রিসমাসের সময় সবসময় বাসায় একটা ক্রিসমাস ট্রি এনে সাজাতে চাইত। মিন্টু ধার্মিক ছিল না কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারাকে ধরে রাখার ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গী খুব কড়া ছিল। বাচ্চাদের এই আবদারে সে কখনই সম্মত হয় নি। এই বছর রিমা মিলা এবং বাচ্চাদেরকে নিয়ে গিয়ে একটা ছোটখাট ক্রিসমাস ট্রি কিনে এনে বাচ্চাদেরকে সেটা সাজাতে দিল। ক্রিসমাসের সন্ধ্যায় ও একটা বিশাল টার্কি ওভেনে রোস্ট করল আর বানালো নানা ধরনের স্থানীয় সাইড ডিশ।
সবাইকে দাওয়াত দিল – নোমান, মিলা,কালাম, মরিয়ম ও তার দুই মেয়ে, আবুল, দোলন, মরিয়মের বাবা-মা, পিন্টু এবং তার বাবা-মা – সবাইকে। পিন্টু ছাড়া আর সবাই রঙিন মোড়কে নানা ধরণের উপহার নিয়ে এসে হাজির হল। সবচেয়ে আনন্দিত মনে হল লাট্টু এবং নীতাকে। রবিনের সাথে মানসিক সংযোগ স্থাপন করতে যতখানি কঠিন হবে ভেবেছিলেন তারা বাস্তবে দেখা গেল ব্যাপারটা আদৌ তত কঠিন নয়। যে পদ্ধতি সবচেয়ে কাজে দেয় রবিনের ক্ষেত্রে সেটা হল হাসি। কেউ তার দিকে তাকিয়ে যখন ভালোবেসে হাসে রবিন খুব পছন্দ করে। নিজের মনের ভাব প্রকাশ করবার ক্ষমতা তার সীমিত থাকলেও কোন এক অদ্ভুত উপায়ে মানুষের হৃদয়ের সততাটুকু সে ঠিকই অনুধাবন করতে পারে।
বছর শেষ হবার আগে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পেরে মনে মনে খুব সন্তুষ্টি অনুভব করে রিমা। জাফর তাকে বেশ কয়েকটা সম্ভাব্য দোকান দেখিয়েছিল। ও ড্যানফোর্থ এভেনিউয়ের উপর অবস্থিত দোকানটা বেছে নিল।। অন্য একজন ব্যাবসায়ী দোকানটা ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যাবার ফলে সেটা বাজারে এসেছে। লিজ নেয়া যাবে। একটা স্ট্রিপ মলের কোণায় অবস্থিত এইরকম একটা দোকানই মনে মনে খুঁজছিল রিমা – প্রশস্ত, সহজগম্য, নিরাপদ এবং ওর সামর্থের মধ্যে। সে জাফরকে তাড়া দিয়ে বছর শেষ হবার আগেই লিজ সংক্রান্ত ঝুট ঝামেলা চুকিয়ে ফেলল।
ও চাইছিল নতুন বছরটা শুরু হোক নতুন সংকল্প আর আশা নিয়ে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ওর মাথার মধ্যে এখনও একটা চিন্তা দুঃস্বপ্নের মত ঘুরছিল – ওর পেটের সিস্টটা। জানুয়ারীর মাঝামাঝিতে ওর অপারেশনের দিন দেয়া হয়েছে। অপারেশনের কথা মনে হলেই ওর বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করে ওঠে। ডাক্তার, হাসপাতাল আর বিশেষ করে অপারেশনের ভয় ওর মজ্জাগত, কোন কারণ ছাড়াই। ও শুধু প্রার্থনা করছে সব কিছু যেন ভালোয় ভালোয় হয়ে যায় এবং ও ফিরে আসতে পারে ওর সন্তানদের কাছে সুস্থ-সবল হয়ে। এখনও অনেক পথ চলার বাকী। এই যাত্রার তো এটা মাত্র শুরু।