শুজা রশীদ : (পর্ব ৩৫)
“তুই আমাকে সম্মান শেখাতে এসেছিস?” জাহান ফুঁসে ওঠে, কালাম কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই হাত দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে তাকে। ছিটকে পেছনে চলে যায় কালাম, অনেক কষ্টে মাটিতে পা ঘষে কোন রকমে ভারসাম্য রক্ষা করে। এবং সেই ক্ষণে নিজের মধ্যে আচমকা একটা পরিবর্তন অনুভব করে। হঠাৎ করেই যেন সমস্ত ভীতিবোধ উবে গিয়ে সেখানে একটা অসম্ভব ক্রোধ এসে ভর করে। ভয়ে পিছিয়ে যাবার মানুষ সে নয়। যাদেরকে সে ভালোবাসে তাদের জন্য যে কোন যুদ্ধে সে লড়তে প্রস্তুত। রিমা এবং তার বাচ্চাদেরকে সে নিজের পরিবারের অংশ হিসাবেই বিবেচনা করে।

“আমার গায়ে হাত দেবার সাহস তোর কি করে হল? হারামী!” গর্জে ওঠে কালাম, আশেপাশের মানুষেরা ফিরে তাকায়। “তুই একটা পোষা কুত্তা, সবাই জানে। দিনার আর পিন্টু ভাই তোকে যা বলবে তুই তাই করবি। রিমা আপা আর বাচ্চাদেরকে বেশ কিছুদিন ধরে তুই জ্বালাচ্ছিস। ভেবেছিস কেউ জানবে না? তুই সত্যিকারের পুরুষ হলে এই ধরনের একটা কাপুরুষের মত কাজ কখন করতে পারতিস না। তুই রাস্তার ঘেয়ো কুত্তারও অধম।”

“কে রাস্তার ঘেয়ো কুত্তা তোকে দেখাচ্ছি আমি”- কালামের দিকে তেড়ে যায় জাহান, মাথাটা সামনে কিঞ্চিৎ নোয়ানো। শরীরের এক ধাক্কায় ছেলেটাকে ধরাশায়ী করতে চায় সে। কালাম চেষ্টা করে দ্রুত তার নাগালের বাইরে চলে যেতে কিন্তু সম্পূর্ণ সরতে পারে না। জাহানের কাঁধ এসে ধাক্কা দেয় ওর শরীরের পাশে। মাটিতে ছিটকে পড়ে গেলেও ঝট করেই আবার নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে যায়। নিজের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়ে কালামকে লক্ষ্য করে একটা ঘুষি ছুড়ে দেয় জাহান। কালাম দ্রুত এক পা পিছিয়ে গিয়ে জাহানের মুখ নিশানা করে একটা লাথি ছোড়ে। অল্প বয়েসে কিছুদিন মার্শাল আর্ট শিখেছিল, বহুদিন অভ্যেস নেই কিন্তু দরকার হলে দুই একটা কড়া লাথি যে মারতে পারবে এই জ্ঞানটুকু তাকে বেশ কিছুটা মানসিক শক্তি দেয়। ওর লাথি জাহানের চোয়ালে গিয়ে আঘাত হানে। একটু ভড়কে যায় জাহান।
“কুং ফু মারানো হচ্ছে!” নিজের চোয়াল ঘষতে ঘষতে খিস্তি করে ওঠে সে।

৫০
কালাম বুঝতে পারে জাহানের বিরুদ্ধে তার যৎসামান্য মার্শাল আর্ট খুব বেশি কাজে আসবে না। তাকে অন্য কোন একটা সমাধান দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। হাতের নাগালের মধ্যে পেলে জাহান তার হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে গুড়িয়ে দেবে। নিজের চারদিকে চোখ বোলাল ও, কিছু একটা খুঁজছে যেটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব- একটা লাঠি কিংবা লোহার রড জাতীয় কিছু, এমনকি পাথর কিংবা ইঁট হলেও চলে। হাতের মুঠির সমান একটা পাথরের উপর চোখ আটকে গেল ওর। খুব জোরে হাত ঘুরিয়ে মারতে পারলে সেটা দিয়েই জাহানকে কাবু করা সম্ভব হতে পারে। তাকে পাথরটা হাতে তুলে নিতে দেখে একটু থমকে গেল জাহান। মন মনে কালামকে মাপল, তারপর চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিজেও একটা শক্ত কিছুর খোঁজ করতে লাগল। কিন্তু আশেপাশে কিছু নুড়ি পাথর আর প্যকেজিং করবার জন্য ব্যবহৃত কিছু কাঠ ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ল না। হাতড়ে একটা দুই ফুটি কাঠই হাতে তুলে নিল সে।

“ওদেরকে নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা কেন?” ডান হাতে কাঠের টুকরাটাকে শক্ত করে ধরে কালামের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যায় জাহান। “তোর সাথে ওদের কি সম্পর্ক?”
“ওরা আমার আত্মীয়ের মত,” কালাম গর্জে ওঠে। “আবার যদি কোনদিন ঝামেলা করিস, আল্লার কসম তোর মাথা আমি ফাটিয়ে দেব।”

জাহান আক্রমণ করে, এক হাতে কাঠটাকে যতখানি সম্ভব ঘুরিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে কালামকে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে কালামের হাতের পাথরটার উপর। কালাম মাথা নুয়ে আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, তারপর পাথর বাগিয়ে তেড়ে যায় জাহানের দিকে। পাথরটা আঘাত করে জাহানের কাঁধে, তার ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, মাটিতে পড়তে পড়তে শেষবারের মত হাতের কাঠটাকে ঘুরিয়ে কালামকে আঘাত করার চেষ্টা করে। কালামের বুকে গিয়ে ধাক্কা খায় কাঠটা, ব্যাঁথায় কঁকিয়ে উঠে মাটিতে পড়ে যায় সে। দুজনেই আছড়ে পাছড়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়, নিরাপদ দূরত্ব রেখে আক্রমণ করবার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
“কথা দে আর কখন করবি না!” কালাম চীৎকার করে ওঠে। হাঁপরের মত শ্বাস নিচ্ছে সে।
জাহান কুৎসিত ভঙ্গিতে তাকায়। “ঐ ডাইনীটা মিন্টু ভাইকে খুন করেছে। ওর শাস্তি পাওয়া উচিৎ।”

“তোকে কয় টাকা দেয় এই রকম একটা ছোটলোকি কাজের জন্য?”
“সেটা জেনে তোর কি লাভ?” জাহান ধমকে ওঠে।
মারপিট শুরু হবার পরপরই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ছুটে গিয়েছিল সুফি। এই পর্যায়ে সে দৌড়ে বাইরে এলো, তার পেছন পেছন এলো দিনার এবং মরিয়ম।
“থামো!” মরিয়ম হুকুমের স্বরে বলে।
“ঐ হারামী আমার গায়ে হাত দিয়েছে, ভাবী,” জাহান নালিশ জানায়।
“আগে ও আমার গায়ে হাত দিয়েছে,” কালাম প্রতিবাদ করে। “ভাবী, ও রিমা আপা আর বাচ্চাদেরকে জ্বালাচ্ছে। জিজ্ঞেস করেন ওকে। ভাবীকে বল তুই কি করিস আর কে তোকে ঐসব করতে বলেছে।”
মরিয়ম ওদের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যায়। তার প্রশান্ত মুখে স্পষ্ট দুঃশ্চিন্তার ছাপ। “আমি কিছু শুনতে চাই না,” শীতল কন্ঠে বলে সে। “ভেতরে আসো তোমরা।”
“জাহান, ভেতরে আয়!” দিনার ধমকে ওঠে। “মাথায় দোষ দেখা দিয়েছে নাকি তোর?” তারপর কালামের দিকে অগ্নি দৃষ্টি হানে সে। “ভাবী, এইটাকে ভাগিয়ে দেন। আগেই মনে হয়েছিল কোন একটা মতলব আছে ওর। ও রিমার চর।”

“রিমা ভাবী বল, দিনার,” মরিয়ম শান্ত গলায় বলে। “ভুলে যেও না সে মিন্টু ভাইয়ের স্ত্রী।” এইবার ধুলায় ধূসরিত দুই যুবকের দিকে তার মনযোগ ফেরাল সে। “ভেতরে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে কাজে লাগো,” জাহানকে লক্ষ্য করে বলে। “আজ রাতে বেশ ব্যস্ত থাকবে। কালাম, তুমি আমার অফিসে আসো।”

ওরা ভেতরে না ঢোকা পর্যন্ত অপেক্ষা করল মরিয়ম। কালামের খুব অপরাধবোধ হল। মরিয়মকে সে ইতিমধ্যেই অনেক পছন্দ এবং শ্রদ্ধা করতে শুরু করেছে। তার মনে সে কোনভাবে ব্যাথা দিতে চায় না। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ ঘটনা কোথা থেকে কোথায় গড়িয়ে গেল। তার আর কিইবা করার ছিল? কাজ গেলে যাবে, সেটা নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যাথা নেই। যে উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এসেছিল সেটা একরকম সফল হয়েছে। জাহান এখন যেহেতু জানে তার নিশূতি রাতের ফাতরামী ফাঁস হয়ে গেছে, সে নিশ্চয় থেমে যাবে। যাবে না? হয়ত মরিয়মকে বললে সে এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবে।

একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে কালাম যখন মরিয়মের সাথে তার অফিসে দেখা করতে গেল তখন সাড়ে তিনটার মত বাজে। চারটা থেকে ডিনার টাইম শুরু হবে রেস্টূরেন্টে। যদিও সন্ধ্যা ছয়টার আগে সাধারণত ভীড় খুব একটা হয় না। যার অর্থ তার আগেই সবাইকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হয়। সাধারণত বিকালে পিন্টু আসে আর মরিয়ম বাসায় চলে যায়।
কালাম হিসেব করে দেখল পিন্টুর আসতে এখনও আধা ঘন্টার মত বাকি। সে আসার আগেই চলে যেতে চায়। জাহান এক বস্তু আর পিন্টু সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তু। যদি বুঝতে পারে তার শয়তানী কালাম ধরে ফেলেছে কি করবে কে জানে? ভেতরে ভেতরে পিন্টুকে সে ভয়ই পায়। অনেক কিছু শুনেছে তার সম্বন্ধে, জানে কত জঘন্য কাজ করতে সে সক্ষম। কালামের মনের বিশেষ জোর আসে স্থানীয় কানাডিয়ান আইন শৃংখলার উপর তার আস্থা থেকে। পিন্টু এই দেশে গাধার মত কোন কাজ করবে না বলেই তার বিশ্বাস। বিশেষ করে রিমাকে উত্ত্যক্ত করবার জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশে তার নামে নালিশ হয়েছে। এখন তো নয়ই।
অফিসের আধা খোলা দরজায় দু বার টোকা দিল কালাম।
“ভেতরে এসে কালাম,” মরিয়ম নরম গলায় ডাকে।

ভেতরে ঢুকতে হাতের ইঙ্গিতে দরজাটা সম্পূর্ণ আটকে দিয়ে মুখোমুখি একটা চেয়ার দেখিয়ে বসতে বলে। কালাম কথামত কাজ করে। এখন পর্যন্ত দেখা করবার কারণটা মাথায় ঢুকছে না। মারপিট করবার জন্য মরিয়ম হয়ত বকা দেবে কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না কারণ সে ইতিমধ্যেই কাজ ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
ল্যাপটপে একটা স্প্রেডশীটে কাজ করছিল মরিয়ম, ঝটপট সেটা শেষ করে ল্যাপটপটা বন্ধ করল। তার মুখের হাসি দেখেই কালাম বুঝল সে রাগ করে নি ওর উপর। “রিমা ভাবীকে কি করে চেন তুমি?” জানতে চায় মরিয়ম।
“ঢাকা গ্রোসারীতে তার সাথে কাজ করি। আমি মিট সেকশনে।” কালাম বলে। পাঁজরে যেখানে কাঠটা এসে লেগেছিল সেখানে বেশ ব্যাথা হয়েছে। নড়াচড়া করলে তীক্ষ্ণ খোঁচা দিচ্ছে। জাহান! শালা অপদার্থ! কয়েকটা সপ্তাহ কষ্ট দেবে। জাহানের কি অবস্থা ঠিক জানে না। আশা করছে সেও কয়েকটা সপ্তাহ কাঁধের ব্যাথায় ভুগবে।

“প্রথম যেদিন এসেছিলে সেই দিন দেখেই মনে হয়েছিল তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি,” মরিয়ম স্নেহার্দ্র কন্ঠে বলে। “ড্যানফোর্থে আর গ্রোসারী করতে যাই না আমি। পিন্টু কিংবা আমার শ্বশুর যান। যাই হোক, কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বল। তুমি যদি না চাও তাহলে আমি কাউকে কিছু বলব না।”
এই সুযোগটাই খুঁজছিল কালাম। সে আদ্যোপান্ত খুলে বলল, কিভাবে জাহান গভীর রাতে দরজায় ধাক্কা মেরে রিমা এবং বাচ্চাদেরকে একটা আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয়। মরিয়ম মনযোগ দিয়ে শোনে। “জাহানই যে করছে সেটা কি করে নিশ্চিত হলে?”
“একই বিল্ডিঙয়ে থাকে ও। তাছাড়া একরকম স্বীকারই করেছে আমার কাছে। কেউ তাকে ঐটা করার জন্য ভাড়া করেছে। আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন সে কে হতে পারে।”
মরিয়ম এক হাত দিয়ে নিজের মুখ মোছে কিন্তু কিছু বলে না। “মারপিটে জড়ানোটা তোমার ঠিক হয়নি। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মারাত্বকভাবে আহত হত তাহলে পুলিশ আসত এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র হিসাবে তুমিই বেশি সমস্যায় পড়তে। বুঝতে পারছ?”
কালাম মাথা নাড়ে। জানে জাহানের সাথে সরাসরি ঝামেলায় জড়ানোটা একাবারেই বুদ্ধিমত্তার কাজ হয় নি কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
“পিন্টু শুনলে তোমাকে বের করে দেবে,” চিন্তিত মুখে বলে মরিয়ম।
“কোন সমস্যা নেই,” কালাম বলে। “আমি কাজটা নিয়েছিলাম ঐ হারামীটাকে শায়েস্তা করবার জন্যÑ সরি। গালি দেয়াটা ঠিক হয়নি।”
মরিয়ম ফিক করে হেসে ফেলে। “তুমি এখনও একেবারেই ছেলেমানুষ। তোমার মা তোমাকে কি করে একাকী ছেড়ে দিলেন?”
“মা আমাকে আসতে দিয়ে চায়নি,” কালাম লাজুক গলায় বলে।

“কেন চাননি আমি বুঝতে পারছি। তোমার যথেষ্ট কাজ কর্ম আছে?” মরিয়ম জানতে চায়। তার নজর হাতের ঘড়িতে। পিন্টু যে কোন সময়ে চলে আসবে। সে আসার আগেই কথাবার্তা সেরে ফেলতে চায় ও। কালাম যদি এখানে না থাকে তাহলে পরিস্থিতি সবার জন্যই ভালো হবে।
“মোটামুটি আছে,” কালাম বলে। মরিয়মের কন্ঠে কিছু একটা ছিল যেটা তার কৌতুহলের উদ্রেক করে।
“বাচ্চাদের পড়াতে চাও?” মরিয়ম জানতে চায়। “আমার দুটা মেয়ে আছে। জলি দশ আর হ্যাপি পাঁচ। খুব ল²ী দুজনাই।”
কালাম অবাক হয়ে যায়। এই জাতীয় প্রস্তাব সে ঠিক আশা করছিল না। বাচ্চাদেরকে সে আগে কখন পড়ায় নি। এক সময় হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরকে অংক আর ইংলিশ পড়াত। অল্প বয়স্ক বাচ্চাদেরকে কি সে পড়াতে পারবে? নিশ্চিত হতে পারছে না। তারপর তারা আবার পিন্টুর বাচ্চা। সে কি মানবে?
মরিয়ম কালামের হাতে নিজের একটা বিজনেস কার্ড ধরিয়ে দেয়। “ভেবে চিনতে আমাকে কল দিও। আমার স্বামীকে নিয়ে চিন্তা কর না। বাচ্চারা আমার দায়িত্ব। এইবার সে আসার আগেই তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে ভাগো।”

কালাম পকেটে বিজনেস কার্ডটাকে গুঁজে উঠে দাঁড়ায়। “এখানে আমি আর ফিরছি না।”
“বুঝতে পেরেছি। যাও তারাতাড়ি।” মরিয়ম হাত নেড়ে তাকে বিদায় হতে বলে। কালাম অফিস রুম থেকে বেরিয়ে সুফিকে বিদায় জানায় এবং রান্নাঘরে হাঁড়ি মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা জাহানকে একটা বাঁকা হাসি দেয়। দিনার ওর দিকে ফিরেও তাকায় না। তাকে লক্ষ্য করে উঁচুস্বরে একটা বিশ্রী গালি দিয়ে প্রায় দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। প্রতি পদক্ষপে পাঁজরে খোঁচা লাগে। বাসায় গিয়ে বরফ দিতে হবে আর কয়েকটা ব্যাথার ওষুধ খেতে হবে। পেছনের পার্কিং লট থেকে নিজের প্রাচীন গাড়ীটাকে নিয়ে সে যখন ড্রাইভ করে বেরিয়ে আসছে তখন পিন্টুকে দেখল গাড়ি চালিয়ে ঢুকতে। পিন্টু ওকে দেখে হাত নেড়েছে কিন্তু কালাম এমন একটা ভাব করেছে যেন সে কোন চিন্তায় মশগুল হয়ে আছে, পিন্টুকে খেয়ালই করে নি। তারপর সে গলা উঁঁচিয়ে একটা অশ্রাব্য গালি দিল। এইটা পিন্টুর জন্য।

৫১
ঢাকা গ্রোসারীতে কাজ করছিল রিমা। ওর সেল ফোন বিপ করে উঠল। টেক্সট মেসেজ এসেছে। বাসায় ফায়জা দুই ছেলেকে দেখছে। রিমা লিয়াকতের স্ত্রী মোনাকে একটু বলেছে ওদের তিনজনার উপরেই একটু নজর রাখতে। পিন্টুর মায়ের সাথে সেদিন কথা বলতে গিয়েছিল তার পর আজ পর্যন্ত সন্দেহজনক সেই লোক দুজনকে ও আর দেখেনি কিন্তু তারপরও সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। যখনই কোন মেসেজ আসে কিংবা ফোন আসে ওর মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা আসে সেটা হচ্ছে বাচ্চাদের কোন বিপদ হয়েছে। আজকের মেসেজটা দেখে অবশ্য ও যেমন অবাক হয়েছে তেমনি শঙ্কিতও হয়েছে।

তোমার স্নেহভাজন রেস্টুরেন্টে খুব গোলমাল করেছে। ব্যাথাও পেয়েছে। – মরিয়ম
মরিয়মের কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিল রিমা। মহিলা ভালো কিন্তু ঐ সংসারে তার মতামতের তেমন কোন মূল্য নেই। মিন্টুকে বিয়ে করার পর মরিয়মের সাথে রিমার মনে হয় হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে। পস্পরকে ভালো করে জানারই তাদের কোন সুযোগ হয় নি। মেসেজটা সংক্ষিপ্ত হলেও রেস্টুরেন্টে কি ঘটতে পারে সেটা বোঝার জন্য খুব বেশী কল্পনা শক্তি থাকবার প্রয়োজন হয় না। কালামকে দরজার ব্যাপারটা জানানোই ঠিক হয় নি। এই বয়েসী ছেলেমেয়েদের নিজ ক্ষমতার উপর আস্থা বোধহয় অযৌক্তিকভাবে কিঞ্চিৎ বেশীই থাকে। অধিকাংশ সময় পরিণতি হয় মন্দ। পরে পস্তাতে হয়।

ভাবল কালামকে একটা কল দেবে কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পালটাল। সন্ধ্যা ছয়টায় কাজ শেষের পর একেবারে ওর বাসায় চলে যাবে ওকে দেখতে। বাচ্চাদেরকেও নিয়ে যাবে। যা করেছে সেই জন্য ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না। অনাত্মীয় কারো জন্য কে এতো বড় ঝুঁকি নেবে? বেশী ব্যাথা না পেয়ে থাকলেই হয়। এই জাতীয় নোংরা ব্যাপারে কালামকে জড়ানোর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হয়।