শুজা রশীদ : (পর্ব ২৪)
আবুল যা ভেবেছিল বাস্তবে পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী খারাপের দিকে মোড় নিল। পিন্টুদের লিভিং রুমে একটা চেয়ারে কাঁচুমাঁচু হয়ে বসে ছিল সে। তার ঠিক সামনেই আরেকটা সোফা চেয়ারে বসে নীতা, তার শরীর কাঠ কাঠ হয়ে আছে, মুখ অসম্ভব গম্ভীর। পিন্টু কাছেই দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। এই বদভ্যাসটা তার আগে ছিল না। ইদানীং হঠাৎ শুরু হয়েছে, লক্ষ্য করেছে আবুল।

“ভেবেছিলাম তুমি উকিল হিসাবে ভালো,” নীতা তিরিক্ষি কন্ঠে বলেন। “এক সপ্তাহর বেশী হয়ে গেছে অথচ তুমি এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারলে না। আমরা অনেক বড় বড় উকিল নিতে পারতাম। তোমাকে নেবার একমাত্র কারণ তুমি আমাদের পরিবারের অংশ।”

নিজেকে নিয়িন্ত্রণ রাখার জন্য আপ্রাণ যুঝতে হচ্ছে আবুলকে। কি আবোল তাবোল কথা বলছেন উনি? সে তো এইসব ঝামেলায় একেবারেই জড়াতে চায়নি। তাকে রীতিমত জোর করে এই কেস নেয়ানো হয়েছে। সে খুক খুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করে বিনীত ভঙ্গীতে বলল, “আমি রিমার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।” খুব ভেবেচিন্তে কথা বলতে হচ্ছে ওকে। এই ভদ্রমহিলার ভীষণ মেজাজ। রেগে গেলে কাউকে বেইজ্জতী করতে ছাড়েন না। অকারণে অপমানিত হতে চায় না আবুল।

তার কথা শুনে পিন্টুর মনে হল আগ্রহ কিঞ্চিৎ বাড়ল। কয়েক পা সামনে এগিয়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়াল সে। “কি বলল?”
আবুল কাঁধ ঝাঁকাল। “ব্যাপারটা ওর যে পছন্দ হবে না সেটা তো জানা কথা। তাছাড়া এখন পর্যন্ত লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যাপারে সে কিছুই করে নি।”
নীতা চোখমুখ কোঁচকালেন। “তুমি ঠিক জান? ঐ মেয়েকে দেখে যেরকম সহজ সরল মনে হয় সে কিন্তু তা নয়। ভীষণ চালাক। সব কথা বিশ্বাস করবে না।”
“আমি খবর নিয়েছি,” আবুল শান্ত গলায় বলে। “এখন পর্যন্ত কোন ক্লেইম করা হয় নি।”
“ভালো কথা। কিন্তু ওকে কিভাবে রাজী করাবে বলে ভেবেছ?” নীতা প্রায় ধমকে উঠলেন।

আবুলের ইচ্ছা হয় সে চীৎকার করে বলে রিমার সাথে এই ব্যাপার নিয়ে কোন আলাপ করবার তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কিন্তু চোখের কোণ দিয়ে মরিয়মকে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াতে দেখে মাথা ঠান্ডা রাখল। “এই মুহুর্তে ঠিক কি করা যায় আমার মাথায় আসছে না। বেনিফিসিয়ারী হিসাবে ঐ টাকার উপর তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আইনসংগতভাবে কাউকে ঐ অর্থের কোন অংশ দেবার তার কোন দরকারই নেই।”

“আমাকে আইন শেখাতে এসো না,” নীতা রাগ দেখালেও কন্ঠস্বর নীচু রাখলেন। “আইনের মধ্যে যদি ঘোরপ্যাচ না বের করতে পারো তাহলে কিসের উকিল তুমি? কিছু একটা বের কর। আমরা বেনিফিসিয়ারী হই আর না হই, ঐ টাকায় আমাদের হক আছে। আর ভেবো না যে আমরা তোমাকে টাকা পয়সা কিছু দেব না। ঐ টাকার অর্ধেকটা পেলে তোমার যা বিল হবে তার দুই গুণ দেব আমরা। মনে কর না আমরা এসব করছি শুধু আমাদের কথা চিন্তা করে, তুমি এবং তোমার পরিবারকে সাহায্য করাটাও আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। মরিয়ম আর ওর দুইটা বাচ্চার কথাও ভুলে যেও না। চিন্তা ভাবনা করে কিছু একটা কলা কৌশল বের কর। দেশে থাকতে তো শুনতাম মানুষ কত রকমের ধান্দা করে – ভুয়া রেজিস্ট্রেশন পেপার বানায়, টাকাপয়সা দিয়ে মিথ্যে সাক্ষী জোগাড় করে। আবার বল না এখানে মানুষ সব সত্যবাদী যুধিষ্টির, ওসব এখানে করা যায় না! পিন্টু, তুই মুখে ক্লিপ এঁটে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এই পুরো ব্যাপারটা যে আমাদের সবার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ আমার মনে হয় না আবুল সেটা বুঝতে পারছে। এইরকম আকামের উকিল জীবনে একটাও দেখিনি।”

“মা!” পিন্টু মরিয়মের দিকে ঝট করে তাকিয়ে দূর্বল কন্ঠে প্রতিবাদ করে।
নীতা মুখ বাঁকালেন। “ভুল কিছু বলেছি?”
মরিয়ম ওদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবার জন্য মৃদু কাশল। “ভাইয়া, আমি টেবিলে রাতের খাবার দিয়েছি। তুমি কিন্তু খেয়ে যাবে।”
আবুল মাথা নাড়ে। “না রে, আমার বাসায় যেতে হবে। তোর ভাবী আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। আমাকে ছাড়া আবার রাতে খেতে চায় না।” তারপর নীতার দিকে তাকিয়ে বলল, “আন্টি, আরেক দিন আসব এই ব্যাপারে আলাপ করতে। আজ আমি যাই?”
নীতার হাবভাব দেখাই বোঝা গেল তার মেজাজ অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে। “মরিয়ম, তোমার ভাইয়ের সাথে একাকী একটু কথা বলতে চাই। বাচ্চাদের কাল স্কুল আছে তাই না? ওদেরকে না হয় খাইয়ে দাও। আমরা পরে খাব।”

মরিয়ম তার ইঙ্গিতটা বুঝল। তিনি চাইছেন মরিয়ম সেখান থেকে বিদায় হোক এবং তাদের আলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর ফিরে না আসুক। বাচ্চাদের কথা টানার কারণ ইঙ্গিতটাকে একটু নমনীয় করে পেষণ করা। শ্বাশুড়ীকে সে ভয় পায়। মহিলাকে দেখে এমনিতে বেশ ভালোই মনে হয় কিন্তু ও জানে প্রয়োজনে কতখানি উগ্র আর ক্ষ্যাপাটে হয়ে উঠতে পারেন তিনি। যে কারো জীবনকে বারো ভাজা করে দিতে পারেন। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে যায় সে। আবুলকে দেখে খুব অসহায় মনে হল। কে জানে তাকে দিয়ে কি ধরনের কাজ করাতে চাইছে ওরা। ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করা? কিসের কাগজ পত্র?

হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারছেন না নীতা। পিন্টুর দিকে ফিরলেন। “তুই এতো চুপচাপ কেন? কথা বলা ভুলে গেছিস নাকি?”
পিন্টু চিন্তিত মুখে কিছুক্ষণ মাথা চুলকাল, তারপর ওর মায়ের পাশে সোফায় গিয়ে বসল। “আবুল ভাই, আপনাকে যেভাবে বলেছিলাম সেইভাবে ওকে বলেছিলেন?”
আবুল মাথা উপরে নীচে দোলায়। “ঠিক একইভাবে নয় কিন্তু যা বোঝার সে বুঝেছে।”
“তারপরও কোন ভয় পায়নি?” আবুলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চায় পিন্টু।

আবুল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। “সে তো বোকা না। একটা কথা তো তোমরা সবাই জানো, ভয় পাবার মত মেয়ে সে না। আমার ধারনা সেই ডিটেকটিভের সাথে তার এখনও যোগাযোগ আছে। তুমি কি সত্যি সত্যিই ওর পেছনে লাগতে চাও? সবাই বিপদে পড়তে পারি।”
“ঐ টাকায় আমাদের হক আছে,” নীতা জোর দিয়ে বলেন। “বুঝেছ? ও ছিল আমার বড় ছেলে। ঐ মেয়ে আমার ছেলেটাকে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। দরকার হয় কোর্টে যাব। আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা চেয়েছি। অর্ধেক-অর্ধেক। তারপর আর ওকে আমরা জ্বালাব না। সেটা বলেছিলে ওকে?”
“বলেছিলাম, আন্টি। তারপরও রাজী হয়নি।” আবুলের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার উপক্রম হচ্ছে। এই ঝামেলায় কোন অবস্থাতেই তার জড়ানো উচিৎ হয়নি। এমনকি মরিয়মের জন্যও না।

“ঐ মেয়ে ভয় পাচ্ছে না কেন?” নীতা প্রায় চীৎকার করে উঠলেন। “ওর পেছনে কে আছে? মিলা? সে তো কিছুই না। নাকি লিয়াকত? পিন্টু, ওর সাথে গিয়ে কথা বল। ওর বোধহয় পুরানো দিনের কথা কিছু মনে নেই। একটু মনে করিয়ে দিস। ঢাকায় থাকতে ওর জন্য আমরা কি করেছিলাম সেসব কথা কি ভুলে গেছে? দরকার হলে ওকে কিছু টাকা পয়সার লোভ দেখা। এই দেশে এসে বহু দিন ধরে বেচারী সংগ্রাম করছে। ওকে আমাদের সাহায্য করা উচিৎ।”

পিন্টু একটু ভাবল, তারপর মাথা নাড়ল। “এইসবের সাথে সরাসরি জড়াতে চাই না আমি। আমাদের বিরুদ্ধে এখনও রেস্ট্রেইনিং অর্ডার আছে রিমার। আবুল ভাই, আপনি কেন লিয়াকতের সাথে একটু কথা বলেন না? গিয়ে দেখা করেন। ফোনে সব আলাপ করা যায় না। আপনার অগোচরে রেকর্ড করে ফেলতে পারে।”

কথাটা মনে হল নীতার খুব পছন্দ হয়েছে। তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। “হ্যাঁ, এই বুদ্ধিটা আমার খুব ভালো লেগেছে। আবুল, তুমি তো উকিল। তুমি তো চাইলে যে কারো সাথেই গিয়ে আমাদের হয়ে আলাপ করতে পারো। তাতে দোষের কিছু নেই। একেবারে লিয়াকতের এপার্টমেন্টে চলে যাও। রিমার বিল্ডিঙয়েই থাকে। বিশ হাজার ডলারের বেশি দিতে চেও না। আরো কম দিয়ে শুরু কর। প্রথমে দশই বল। শুনেছি রিমা নাকি তাকে খুব বিশ্বাস করে। সে চাইলে রিমার মত পাল্টাতে সাহায্য করতে পারবে।”

যথেষ্ট হয়েছে, মনে মনে ভাবে আবুল। এই নোংরামীর মধ্যে সে জড়াবে না। ঐ পথে একবার গেলে আর ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না। সে চায় একজন সৎ, শ্রদ্ধেয় উকিল হতে। ক্লায়েন্টদের হয়ে এমন কোন কাজ সে করতে চায় না যেটাকে নৈতিকভাবে সে মেনে নিতে পারবে না। লম্বা করে একটা শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সে। “দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমার যেতে হবে। পিন্টু, আমি সত্যিই দুঃখিত কিন্তু এই ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে আর কোন ভাবে কোন সাহায্য করতে পারব না।”
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে কয়েকটা মুহূর্ত নীরবে ওকে দেখল পিন্টু এবং নীতা।

“কি বলছ তুমি?” নীতা যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। “এখন করব না বললে তো চলবে না। তোমাকে আমরা আমাদের সব কথা বলেছি। পিন্টু, তোকে আগেই বলেছিলাম এই গাধা পারবে না। ওর সেই মনের জোর নেই। ছাগল একটা!”

আবুল কোন তর্কাতর্কিতে জড়াতে চায় না। পিন্টুর দিকে না তাকিয়ে দরজার অভিমুখে হাঁটতে শুরু করে ও। মরিয়মের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারলে ভালো হত কিন্তু এই মুহূর্তে ওর একমাত্র চিন্তা হচ্ছে এখান থেকে ভালোয় ভালোয় বের হওয়া। ওর বোনটা এই রকম একটা বিষাক্ত পরিবেশে থাকছে ভাবতেও খারাপ লাগে। দরজার সামনে পৌঁছে হ্যান্ডেলে মাত্র হাত রেখেছিল আবুল, পেছন থেকে দ্রুত হেঁটে এসে এক হাতে ওর কাঁধ ধরে ঝটকা টানে ওকে উল্টো ঘুরিয়ে ফেলে পিন্টু। “এটা কি ধরণের ব্যবহার, আবুল ভাই? আপনি এভাবে চলে যেতে পারেন না।”
পিন্টুর তাকানোর ভঙ্গীটা আবুলের ভালো লাগল না। তার মুখ শক্ত হয়ে আছে, দৃষ্টিতে আগুন, দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ। আবুল মনে মনে বেশ ভয় পেয়ে গেল। সবাই জানে পিন্টুর মেজাজের কোন ঠিক নেই। নিজেকে যথা সম্ভব স্থির রেখে ও শান্ত গলায় বলল, “আইনসংগতভাবে যা শুনেছি তার একটা বর্ণও আমি কাওকে বলতে পারব না। যদি বলি আমার লাইসেন্স চলে যাবে। উকিল এবং ক্লায়েন্টের কনফিডেনশিয়ালিটি এগ্রিমেন্টের মধ্যে পড়ে এটা। তোমাদের চিন্তা করার কিচ্ছু নেই। আমার মুখ থেকে এইসব ব্যাপারে একটা কথাও বের হবে না।”

পিন্টু দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “না বের হলেই ভালো। এবার বের হয়ে যান।” এক পা সামনে এগিয়ে এসে আবুলে ঘাড় ধরে বেশ জোরে দরজা অভিমুখে ধাক্কা দেয় সে। আবুল অসম্ভব অপমানিত বোধ করে। ঘটনা এই পর্যায়ে যাবে এটা ও চিন্তাই করেনি। কিন্তু এই জাতীয় ইতরামী সে সহ্য করবে না।
“আমাকে ছোঁবে না,” আবুল জোর গলায় প্রতিবাদ করে ওঠে।
“ভাগ শালা এখান থেকে,” পিন্টূ চীৎকার করে ওঠে। তার মুখ রাগে লাল হয়ে উঠেছে। “আর কোনদিন আসবি না। এই বাড়ীর ত্রিসীমায় যেন তোর মুখ না দেখি।”
রান্নাঘর থেকে চীৎকার শুনে ছুটে এলো মরিয়ম। “কি হয়েছে, ভাইয়া?”
আবুল মাথা নাড়ে। “কিছু হয়নি। তুই এসব নিয়ে চন্তা করিস না।”
পিন্টু স্ত্রীর দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকায়। “ভেতরে যাও তুমি। আমার সব ব্যাপারে তোমার নাক না গলালেও চলবে।”
মরিয়মকে দেখে মনে হল সে একটু হতবিহবল হয়ে পড়েছে। এই সামান্য সময়ের মধ্যে এমন কি হল যে পিন্টু তার সাথে এই রকম গলা উঁচিয়ে কথা বলছে? নিজের গন্ডী নিয়ে সে সবসময়েই খুব সতর্ক এবং চেষ্টা করে তার বাইরে না যেতে। পিন্টু সেটা পছন্দ করে। তাদের দুজনার মধ্যে শান্তি বজায় রাখার সেটাই একমাত্র উপায়। কিন্তু যে বড় ভাই স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে সবসময় তার পাশে থেকেছে তাকে অপমান করলে সেই গন্ডীর মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। নিজের ভাইয়ের দিকে ফিরল সে। “তুমি ঠিক আছো, ভাইয়া?”

“আমি ঠিক আছি,” আবুল বোনকে নিশ্চিত করতে চায়।
“ কি হয়েছে?” মরিয়ম দৃঢ় কন্ঠে জানতে চায়।
“তোমার জানার কোন দরকার নাই!” পিন্টু গলা ফাটিয়ে চীৎকার করে ওঠে। “এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। তুমি যাও, বাচ্চাদের দেখভাল কর। যাও!”
মরিয়মের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় পিন্টুর উপর। “তুমি কি আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছ?”

“যদি তুলে থাকি তাহলে কি হবে?” পিন্টু ষাড়ের মত চীৎকার করছে। তার ক্রোধ মনে হল আবুলের দিক থেকে এখন মরিয়মের উপর এসে পড়েছে। আবুল কোন অবস্থাতেই সেটা চায় না। মরিয়ম মুখ ফুটে কখন বলে নি পিন্টু ওকে মারধোর করেছে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তেমনটা কখন হয় নি। মরিয়ম হচ্ছে সেই ধরনের মেয়ে যে শান্তি বজায় রাখার জন্য নীরবে অনেক কিছু সহ্য করবে।
আবুল আলতো করে বোনের বাহুতে হাত রাখে। “কিচ্ছু হয় নি রে। পরে কথা হবে, ঠিক আছে? যাই এখন। আল্লাহ হাফেজ।”

দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায় সে, পেছনে দরজাটা দড়াম করে লাগিয়ে দেয়া হয়। আবুলের ভয় হচ্ছিল সে চোখের আড়াল হলেই পিন্টু আবার মরিয়মের উপর রাগ দেখাবে, কিন্তু বাস্তবে ভেতর থেকে কোন চীৎকার চেঁচামেচি শোনা গেল না। খুব সম্ভবত পরিস্থিতি শান্ত করবার জন্য সেখান থেকে দ্রæত সরে গেছে মরিয়ম। তার এই ল²ী বোনটা কখন কাউকে কোন যন্ত্রণা দেয় নি, অথচ তাকেই এই অভদ্র ইতরটার সাথে সংসার করতে হচ্ছে। ভাবতেও মনটা ব্যাথায় ভরে যায়। – টরন্টো, কানাডা